কাজিরবাজার ডেস্ক :
সরকারের অনলাইনভিত্তিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভূমিসেবায় মানুষের হয়রানি চিরতরে শেষ হতে যাচ্ছে। সেবা পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের দোরগোড়ায়। এতে ভোগান্তি কমছে। থাকছে না হয়রানি। ঘুষের দৌরাত্ম্যও কমছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন চলছে ডিজিটাল জরিপ। সুষ্ঠুভাবে এটি সম্পন্ন করতে পারলে মামলার সংখ্যাও কমে আসবে।
গত কয়েক বছরে অনলাইনভিত্তিক ভূমি ব্যবস্থাপনা গড়তে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ডিজিটাল পদ্ধতির হাত ধরে মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ ও হয়রানি থেকে মুক্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে ভূমি ব্যবস্থাপনা। ভূমি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে দেশের প্রায় প্রতিটি পরিবারই সম্পৃক্ত। ভূমিসেবা নিতে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হতে হতো। অভিযোগ রয়েছে, ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না, তাই ভূমি সেবা ছিল ব্যয়বহুল। তবে ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে এই পরিস্থিতি। স্বাধীনতার পর থেকে কয়েক বছর আগ পর্যন্তও ভূমি ব্যবস্থাপনা মোটামুটি একই রকম ছিল। এরপর ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশনের সুফল পেতে শুরু করে মানুষ। অনলাইন ভূমি ব্যবস্থাপনা গড়ার কাজ চলমান।
ভূমি উন্নয়ন কর ও রাজস্ব আদায়, খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত, জলমহাল ব্যবস্থাপনা, ভূমি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ এবং ভূমিসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ কাজ ভূমি মন্ত্রণালয় করে। এছাড়া ভূমি আইন ও বিধি প্রণয়ন, ভূমিহীন ছিন্নমূল জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন, ভূমি জোনিং কার্যক্রম, উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ ও মেরামত, ভূমি রেকর্ড আধুনিকীকরণ, জনসাধারণকে স্বল্পতম সময়ে ভূমি সংক্রান্ত তথ্যাদি সরবরাহের কাজ ভূমি মন্ত্রণালয় করে।
এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা অনেক দূর এগিয়েছে বলে আমি মনে করি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নতুন সেবা চালু ও ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণের চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, মানুষ অনলাইনে ট্যাক্স দেবে সেটার একটা অনলাইন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। এনআইডি ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ ফোন করে সারাদেশে পর্চার আবেদন করতে পারবেন। অফিসে যেতে হবে না, এটা আমরা চালু করতে চাচ্ছি। ভূমিসেবা হটলাইনটা সম্প্রসারণ করে আমরা এই সার্ভিস চালু করব। এছাড়া আমরা খুব তাড়াতাড়ি অনলাইনে শুনানির কাজ শুরু করব। অনেক সময় মানুষ শুনানির জন্য সশরীরে আসতে পারেন না। এজন্য যাতে মামলা খারিজ না হয়ে যায়। তিনি যেখানে থাকুক না কেন সেখান থেকেই যেন অনলাইনে মামলার শুনানিতে অংশ নিতে পারেন- সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ডিজিটাল রেকর্ড রুম আগামী মাসের মধ্যে দেশের ৬১টি জেলায় চালুর কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে।
জমির নামজারি-নিবন্ধন কার্যক্রম সমন্বয়ে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু একটি বড় পদক্ষেপ জানিয়ে সচিব বলেন, এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় মিটিং হয়েছে। এখন ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে আইনমন্ত্রীর বরাবর একটি ডিও লেটার দেয়া হবে। যাতে একটি সার্কুলার দিয়ে সারাদেশে এটা চালু করা যায়। তারা নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। এখন প্রক্রিয়া করতে যতটুকু সময় লাগে।
তিনি বলেন, অনলাইনে ভূমি কর দেয়ার প্ল্যাটফর্মের কাজ চলছে। যাতে মানুষ নিজের রেজিস্ট্রেশনটা নিজে করতে পারেন। রেজিস্ট্রেশন করার পর একটা কনফারমেশন (নিশ্চিতকরণ) এসএমএস যাবে। ডিমান্ডটা পাঠানো হবে। এরপর তিনি যে কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে পেমেন্ট পরিশোধ করতে পারবেন। ই-নামজারি সারাদেশে চালু হয়েছে জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ই-খতিয়ান এখন ২৯টি জেলায় চলছে। আগামী মাসে এটা সারাদেশে চালুর চিন্তা-ভাবনা রয়েছে।
ভূমি সচিব বলেন, মানুষের যাতে ভূমি অফিসে এসে কোন কাজ করতে না হয়- আমরা ভূমি ব্যবস্থাপনাটাকে সেই স্থানে নিয়ে যেতে চাই। আমি যদি মানুষকে কাজের জন্য অফিসে যাওয়া বন্ধ করতে পারি, তবে দুর্নীতি জিরো হয়ে যাবে। রাতারাতি তো মানুষকে বদলে দেয়া যাবে না। এজন্য আমরা সিস্টেমে হাত দিয়েছি।
ভূমি ব্যবস্থাপনায় মিউটেশন বা নামজারি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। জমি ক্রয় বা অন্য কোন উপায়ে জমির মালিক হয়ে থাকলে হালনাগাদ রেকর্ড সংশোধন করতে হয়। পুরনো মালিকের নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নামে জমি রেকর্ড করাকে নামজারি বলে। এই কাজটি ডিজিটাল পদ্ধতিতে সহজে করাই হচ্ছে ই-নামজারি বা ই-মিউটেশন।
২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে সারাদেশে ভূমি ই-নামজারি সেবা চালু করা হয়। নামজারি নিয়ে মানুষের ভোগান্তি ও হয়রানির শেষ ছিল না। ই-নামজারি মানুষের হয়রানি অনেকটাই দূর করেছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়, ভূমি সংস্কার বোর্ড এবং এটুআই প্রোগ্রাম যৌথভাবে মাঠ পর্যায়ে ই-নামজারি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। ই-নামজারি এ্যাপ্লিকেশনটি মূলত জমি নামক জাতীয় ভূমি-তথ্য ও সেবা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের িি(.িষধহফ.মড়া.নফ) একটি অংশ।
‘হাতের মুঠোয় খতিয়ান’ স্লোগানে ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ আরএস খতিয়ান অনলাইনে অবমুক্তকরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ ব্যবস্থায় স্বল্প সময়ে অনলাইনে জমির খতিয়ানের কপি সংগ্রহ করা যায়।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, জেলা প্রশাসকের অফিসের রেকর্ডরুম থেকে খতিয়ান বা পর্চা দেয়া হয়। খতিয়ানের কপি প্রাপ্তিতে জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতাই শুধু নয়; সময়, খরচ ও যাতায়াতের ভোগান্তি পোহাতে হতো। ই-খতিয়ান সেই সমস্যা দূর করেছে। land.gov.bd ev rsk.land.gov.bd evww w.minland.gov.bd বা মোবাইল এ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে খতিয়ানের কপি সংগ্রহ করা যায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের সহায়তায় নতুন এ পদ্ধতি চালু করা হয়। গত ২৩ ডিসেম্বর দেশের ২১ জেলায় চালু হয় ডিজিটাল রেকর্ড রুম। এ ব্যবস্থায় ঘরে বসেই অনলাইনে আবেদন ও অনলাইনে ফি দেয়ার পর নির্ধারিত সময় এবং নির্ধারিত স্থান থেকে খতিয়ানের সার্টিফায়েড কপি গ্রহণ করা যাচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে ঢাকা, ফরিদপুর, নরসিংদী, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল, শরীয়তপুর, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও সিরাজগঞ্জে ডিজিটাল রেকর্ড রুম চালু করা হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে এ সেবা সারাদেশে সম্প্রসারণের পদক্ষেপ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর দেয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। গত ১৬ নবেম্বর অনলাইনভিত্তিক ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার পাইলটিং কার্যক্রম উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের ৬১টি জেলার ৪৮২টি পৌর বা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এক বা একাধিক মৌজায় অনলাইনে কর দেয়ার ব্যবস্থা চালু হয়। ‘হাতের মুঠোয় ভূমিসেবা’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। উপমহাদেশে কালেক্টরেট ব্যবস্থার গোড়াপত্তনের প্রায় ২৪৭ বছর পর ভূমি উন্নয়ন কর তথা জমির খাজনা গ্রহণের সিস্টেম বদলালো বলে জানিয়েছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
গত বছরের ৯ নবেম্বর ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বচ্ছতার সঙ্গে জমি নিবন্ধন করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমির নামজারি ও রেকর্ড সংশোধনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এটুআইয়ের সহযোগিতায় ভূমি মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় এ সমন্বিত উদ্যোগ নেয়। এ প্রক্রিয়ায় জমির নিবন্ধন শেষ হওয়ার আট দিনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামজারি হয়ে যাবে। এখন সাভারে এই কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এটি চালু করা হবে। এ ব্যবস্থায় কেনা কিংবা হস্তান্তরিত ভূমির নামজারি করার জন্য এসিল্যান্ড অফিসে নামজারি আবেদনের প্রয়োজন হবে না।
এ ব্যবস্থায় ই-নামজারির আবেদনের মতো প্রাপ্ত দলিলের কপি এবং এলটি নোটিস একত্রিত করে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অফিসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-নামজারির জন্য মিসকেস রুজু করতে হবে। এক্ষেত্রে দলিল গ্রহীতাকে আলাদা করে আবেদন করতে হবে না। জমি হস্তান্তর দলিল রেজিস্ট্রেশন করার সময় সাবরেজিস্ট্রার তিন কপি দলিল করবেন। এর মধ্যে একটি কপি দলিল গ্রহীতা পাবেন, দ্বিতীয় কপি সাবরেজিস্ট্রি অফিস সংরক্ষণ করবে এবং তৃতীয় কপি ও এলটি নোটিসের একটি পরিচ্ছন্ন ও পাঠযোগ্য কপি সাবরেজিস্ট্রার সংশ্লিষ্ট উপজেলা/সার্কেল ভূমি অফিসে পাঠাবেন।
দলিলের কপি ও এলটি নোটিসের কপি ভূমি অফিসে পৌঁছানোর পর প্রচলিত বিধান অনুযায়ী নামজারির ফি ও সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করা এবং দলিল অবিকল নকল কপিসহ উপস্থিত হয়ে শুনানি গ্রহণের লক্ষ্যে সর্বোচ্চ চার কার্যদিবসের মধ্যে সময় দিয়ে দলিল গ্রহীতাকে ই- মেইল/ মেসেজ দিতে হবে। এছাড়া দলিলের কপি এবং এলটি নোটিস সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে পৌঁছানোর তারিখ থেকে পরবর্তী আট কার্যদিবসের মধ্যে নামজারি সম্পন্ন নিশ্চিত করা হবে।
ভূমি রেজিস্ট্রশন করে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন সাবরেজিস্ট্রি অফিস আর ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন উপজেলা অফিস বা সার্কেল ভূমি অফিস জমির নামজারির কাজ করে। দুটি ভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করা হয় বলে সমন্বয় করা কষ্টসাধ্য, রয়েছে দীর্ঘসূত্রতা। নতুন ব্যবস্থায় এ সমস্যা থাকবে না। দ্রুত এ ব্যবস্থাটি সারাদেশে চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভূমি সচিব।
ভূমি সংক্রান্ত দেওয়ানি মামলার সহজ, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং অনলাইনে তদারকির জন্য সিভিল স্যুট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিএসএমএস) স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে নির্বাচিত সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সিএসএমএস স্থাপনের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশে যত মামলা হয় এর বেশিরভাগ ভূমি সংক্রান্ত। এসব দেওয়ানি মামলা সহজ, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় সিভিল স্যুট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম স্থাপনে গত বছরের জুলাইয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়। সিএসএমএস স্থাপন করা হলে আদালতের তথ্য হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না এবং মামলায় তথ্য বিবরণী আদালতে দেয়া হয়েছে কিনা, তথ্য বিবরণী কীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, মামলার সর্বশেষ অবস্থা কী ইত্যাদি বিষয়েও সিস্টেম থেকে তথ্য নেয়া যাবে। নতুন এই সিস্টেমে আদালতের কৌঁসুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে; যাতে আদালতের তারিখ ও আদেশ পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়।
ভূমি তথ্য সিস্টেম ফ্রেমওয়ার্কের সঙ্গে আন্তঃসংযোগ করে সিএসএমএস স্থাপন করা হবে। মন্ত্রণালয়, বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের সঙ্গে এই সিস্টেমের যোগসূত্র থাকবে। ই-মিউটেশন সিস্টেমের সঙ্গেও এই সিস্টেমটি একীভূত করা হবে। এতে ইউনিয়ন থেকে তথ্য বিবরণী দেয়া শুরু করে আদালত পর্যন্ত তথ্য বিবরণীর কপি দাখিল পর্যন্ত অনলাইন সিস্টেম তৈরি করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
শিগগিরই পরীক্ষামূলকভাবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ই-নামজারি ও মিসকেইস মামলার শুনানি গ্রহণ শুরুর কার্যক্রমও প্রক্রিয়াধীন। গত ১৭ জানুয়ারি বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ই-নামজারি ও মিসকেস মামলার শুনানি গ্রহণ করা হলে জনগণ আরও সহজে ভূমিসেবা গ্রহণ করতে পারবেন। ভূমি অফিসে গিয়ে ভূমিসেবা গ্রহণের হার আরও কমবে বলে জানিয়েছেন ভূমি সচিব।
২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর চালু হয় ভূমিসেবা হটলাইন। ‘১৬১২২’ নম্বরে ফোন করে ভূমি সংক্রান্ত অভিযোগ জানানো যাচ্ছে, নিষ্পত্তি করা হচ্ছে সেই অভিযোগ। জরুরী অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ, অভিযোগ দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি, সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে অভিযোগ গ্রহণের উদ্দেশ্য নিয়ে কল সেন্টার চালু করা হয়।
অত্যাধুনিক পূর্ণাঙ্গ কলসেন্টারে ৩৬ ইউনিটের সিসিটিভি সিস্টেম, ডিজিটাল এলআইডি ইন্টার্যাক্টিভ মনিটরসহ আনুষঙ্গিক অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। ভূমির শ্রেণী এক হাজার ১২৪টি থেকে কমিয়ে ১৬টি করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ভূমির শ্রেণীর জটিলতা সহজ করে মানুষের হয়রানি দূর করার জন্য এ পদক্ষেপ নেয়া হয়। বর্তমানে সব ধরনের ভূমিকে বন, পাহাড়, নদী, জলাভূমি, রাস্তা, টার্মিনাল, বন্দর, আবাদি, আবাসিক, অফিস, বাণিজ্যিক, শিল্প, বিনোদন কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্মৃতিস্তম্ভ ও ধর্মীয় স্থান- শ্রেণীতে বিভক্ত করে ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পরিপত্র জারি করা হয়।
কৃষিজমি সুরক্ষায় প্রায় ৩৩৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘মৌজা ও প্লটভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং প্রকল্প’ গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমির গুণাগুণ অনুযায়ী ভূমিকে প্লটওয়ারি কৃষি, আবাসন, বাণিজ্যিক, পর্যটন ও শিল্প উন্নয়ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে মৌজা ও প্লটভিত্তিক ডিজিটাল ভূমি জোনিং ম্যাপ ও ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। একই সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে সুষ্ঠু ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য সারাদেশে মৌজা ও প্লটভিত্তিক ডাটাবেজ প্রণয়ন করা হবে। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, প্রকল্পটির মাধ্যমে প্লট নম্বর এবং প্লটভিত্তিক বিস্তারিত তথ্য ভূমি জোনিং মানচিত্রে সন্নিবেশিত করা হবে, যেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ভূমি প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ তথ্য ব্যবহার করে ভূমিসম্পদ সংরক্ষণে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেন।