কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ পবিত্র মাহে রমজানের ৩য় দিবস। মানানসই আবহাওয়ার এক সুন্দর মৌসুমে এবারের সিয়াম সাধনা শুরু। তবে গত বছরের মতো অগুনতি পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা আর ভীতির মধ্যে নিপতিত হয়ে আছে মানবজীবন। এক বছরের অধিক সময়ের করোনা ভাইরাসের তান্ডবে আর্থসামাজিক পরিস্থিতি এক অমানবিক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। মানুষ চাকরি বাকরিহারা ব্যবসা বাণিজ্য ক্রমেই মন্দার দিকে। সুচিকিৎসাও হয়তো অনেকে পাচ্ছে না। প্রত্যেকে যেন নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত, পেরেশানগ্রস্ত। তাই সিয়াম সাধনার সঙ্গে যদি আমরা একটু স্বাস্থ্য সচেতন হই তাহলে জীবনের হাপিত্তেশ কিছুটা হলেও কম মনে হবে। মানবজীবনে অন্যতম নেয়ামত হলো স্বাস্থ্য। এটি এমন এক সম্পদ যা আমাদের ব্যবহারিক জীবনের অনেক ক্ষেত্রে এমনকি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্যও জরুরী।
ইসলামের বিধিবিধানগুলো সুন্দরভাবে পালন করার জন্যও স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা প্রয়োজন। কারণ শারীরিক শক্তি ও মানসিক মনোবল ছাড়া ইবাদতেও মন বসে না। সুস্থ সবল মুমিন আল্লাহর কাছে অবশ্যই অধিক প্রিয়। রাসূল (সঃ) ইরশাদ করেন, দুর্বল মুমিনের তুলনায় শক্তিশালী মুমিন অধিক কল্যাণকর ও আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ৬৯৪৫)। অন্য হাদিসে আছে দুটি নেয়ামতের বিষয়ে বেশিরভাগ মানুষ অসতর্ক ও প্রতারিত। সুস্থতা ও অবসর (বুখারী শরিফ ৫/২৩৫৭)।
ইসলামের দৃষ্টিতে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করার চেয়ে সুস্থ অবস্থায় স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উত্তম। ‘ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো আল বিকায়াতু খাইরুম মিনাল ইলাজ।’ বর্তমানে চিকিৎসাবিজ্ঞান ইসলামের সেই থিউরি স্বীকার করে, রোগ প্রতিরোধ রোগ নিরাময়ের চেয়ে উত্তম। আধুনিক বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার এই যুগে বিজ্ঞান যা আবিষ্কার করছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে তা বলে গেছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, কিয়ামতের দিন বান্দাকে নিয়ামত সম্পর্কে সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটি করা হবে তা হলো তার সুস্থতা সম্পর্কে। তাকে বলা হবে আমি কী তোমাকে শারীরিক সুস্থতা দেইনি? (সুনানে তিরমিজি, হাদিস ৩৩৫৮)। রোগাক্রান্ত হলে অবিলম্বে চিকিৎসা নেয়াকে তাকওয়া পরিপন্থী মনে না করে আরোগ্য লাভের জন্য চিকিৎসা নিতে রোগীকে উৎসাহিত করেছে ইসলাম। রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিজে অসুস্থ হলে চিকিৎসা নিতেন। লোকদের চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা চিকিৎসা নাও কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি। তবে একটি রোগ আছে যার কোন প্রতিষেধক নেই, তা হলো বার্ধক্য।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৮৫৭)। একটি হাদিস আছে, হযরত সা’দ (রাঃ) বলেন, আমি একবার ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে দেখতে এসে তার হাত মুবারাক আমার বুকের ওপর রাখেন। আমি অন্তরে এর শীতলতা অনুভব করি। অতঃপর তিনি বলেন, ‘তুমি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছ। তুমি ছাকিফ গোত্রের হারেস ইবনে কালদার কাছে যাও। সে (এই রোগের) চিকিৎসা করে।’ (আবু দাউদ, হাদিস ২/৫৪১, মাজমাউয যাওয়াইদ ৫/১৪৪ ১৪৫)। রাসূলুল্লাহ অসুস্থ ব্যক্তিকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা করাতে এবং এ ব্যাপারে সবিশেষ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিতেন। (যাদুল মাআদ) হারাম বস্তু ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন। রাসূল (সঃ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা রোগও নাযিল করেছেন রোগের প্রতিষেধকও নাজিল করেছেন। প্রত্যেক রোগের চিকিৎসা রয়েছে। সুতরাং তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর। তবে হারাম বস্তু দ্বারা চিকিৎসা নিয়ো না।
আসুন মাহে রমজানে উপরোক্ত হাদীসগুলো আমল করি এবং সস্থ থাকি।