সিলেট সহ অধিক সংক্রমণ প্রবণ এলাকায় কঠোর লকডাউনের পক্ষে বিশেষজ্ঞরা

9

কাজিরবাজার ডেস্ক :
‘সত্যিকার অর্থে সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে হলে সরকারিভাবে কারফিউ লকডাউন’ ঘোষণা করা উচিত। বিশেষ করে যেসব স্থানে করোনা সংক্রমণ বেশি, যেমন : ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং রাজশাহী; এসব অঞ্চলে ‘কারফিউ লকডাউন’ দেয়া উচিত। তা না হলে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পাবে।’
বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) করোনার ক্রমবর্ধমান সংক্রমণরোধে কী করা প্রয়োজন তা জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান খসরু এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারিভাবে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এর প্রকৃত অর্থ ‘মানুষকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে ঘরবন্দি করা’ এ ব্যাপারটাই কেউ অনুধাবন করতে চাইছেন না। ফলে লকডাউনও কার্যকর হচ্ছে না।’
ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘সরকার লকডাউন ঘোষণা করে তাৎক্ষণিকভাবে সকলের চলাচল বন্ধ না করে ৪৮ ঘণ্টা সবকিছু খোলা রাখার ফলে দেশের যেসব বিভাগ ও জেলায় করোনার সংক্রমণ বেশি, সেসব এলাকায় আরও বেশি লোকজন ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। ফলে লকডাউনের যে সুবিধা পাওয়ার কথা, তা আমরা পাবো না। তবুও লকডাউনের ফলে মানুষের চলাচল কিছুটা কমায় সংক্রমণ কিছুটা হয়তো কমতে পারে।’
জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ লকডাউন মানতে চাইছে না, এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘জীবনের জন্য জীবিকা, জীবিকার জন্য জীবন নয়। টানা দুই সপ্তাহ লকডাউন থাকলে ঢাকা শহরের দুই কোটি মানুষের মধ্যে দিন আনে দিন খায় এমন ৩০ লাখ মানুষের খেয়ে বাঁচতে সমস্যা হবে। সরকারিভাবে অর্থায়নের পাশাপাশি সামাজিকভাবে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে বিত্তশালীসহ যাদের সামর্থ্য আছে, তারা সবাই মিলে ফান্ড তৈরি করে ১৪ দিন ৩০ লাখ মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা অসম্ভব কোনো ব্যাপার নয়। ইতিপূর্বে বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সামাজিকভাবে অসহায়-দরিদ্রদের সাহায্যে বিত্তশালীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে দেখা গেছে। বর্তমান করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু অব্যাহত থাকলে আর্থিক বিবেচনায় ১৪ দিনের লকডাউনের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হবে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বিএসএমএম্ইউ হাসপাতালের ফিভার ক্লিনিকে ৫০ শয্যার করোনা ইউনিটের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন গবেষকদের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘আগামী ২০২৪ সাল পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ থাকবে। এ থেকে রক্ষা পেতে ওই সময় পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।’
বিশেষজ্ঞরা যখন এমন কথা বলছেন তখন সরকার ঘোষিত নানান বিধিনিষেধের চতুর্থ দিনে আগামীকাল শুক্রবার থেকে শপিংমল ও মার্কেট খোলার ঘোষণা এসেছে। এর আগে গত (বুধবার) থেকে সব সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। লকডাউনে মানুষ রাস্তায় অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীর ভীড়ও বাড়ছে।
এতদিন করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ বেডের সংকট থাকলেও এখন সাধারণ বেডই ‘সোনার হরিণ’ হয়ে যাচ্ছে।