যে কারণে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ

3496

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দ্রুত ছড়িয়ে পড়া যুক্তরাজ্যের করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছিল জানুয়ারিতে। তা এতদিন গোপন ছিল। মার্চে এসে তা প্রকাশ করল সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা। এ অবস্থায় দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাজ্যের নতুন স্ট্রেইন দ্রুত ছড়ায়। দুই মাসের বেশি সময় আগে শনাক্ত হয়েছে, এর কারণে দেশে সংক্রমণ বাড়তে পারে। আবার রেসপিরেটরি রুটে একটা ভাইরাস ঢুকলে অন্য ভাইরাসকে ঢুকতে দেয় না। দেশে শীতকালে সর্দি-কাশির মতো অন্যান্য ভাইরাস ব্যাপকভাবে সংক্রমিত হয়েছিল। এসব দেশি ভাইরাস থাকার কারণে করোনা সেভাবে সংক্রমিত হতে পারেনি। সেজন্য হয়তো শীতকালে সংক্রমণ কমে গিয়েছিল। এখন শীতকালের ভাইরাসগুলো কমে যাওয়ায় করোনা সুযোগ পেয়েছে। সে কারণেও বাড়তে পারে। তবে বাড়লেও তা ১০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা কম বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
রবিবার (১৪ মার্চ) কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম এবং সার্স ভাইরাসের কিট উদ্ভাবক ও করোনাভাইরাস শনাক্তের ‘জি র‌্যাপিড ডট ব্লট’ কিটের উদ্ভাবক ড. বিজন কুমার শীলের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে জানুয়ারিতে শনাক্ত হয়েছে।’
বর্তমান সময়ে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে সন্দেহ করছে যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টের কারণে বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওই ভ্যারিয়েন্ট সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে আগের ভ্যারিয়েন্টকে রিপ্লেস করে- এটা এত তাড়াতাড়ি সম্ভব নয়। সুতরাং এই একটা জিনিস দিয়ে এটাকে ব্যাখ্যা করা যাবে না। আরও অন্য ফ্যাক্টর থাকতে পারে।’
সংক্রমণ বাড়ার আরও কারণ ব্যাখ্যা করে জাতীয় পরামর্শক কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘শীতকালে আমাদের অন্যান্য ভাইরাস খুব বেশি সংক্রমিত হয়েছিল- সর্দি, কাশি, জ্বরজারিতে। রেসপিরেটরি রুটে যদি একটা ভাইরাস ঢুকে যায়, অন্য ভাইরাসকে ঢুকতে দেয় না। দেশি ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে হয়তো করোনাভাইরাস সেভাবে সুযোগ পায়নি। সে কারণে হয়তো শীতকালে সংক্রমণ কমে গিয়েছিল। এখন গ্রীষ্মকাল আসছে, শীতকালের ভাইরাসগুলো কমে গেছে। এখন আবার করোনাভাইরাস সুযোগ পেয়েছে। আবার সংক্রমণ বাড়ছে। খুব বেশি বাড়বে বলে মনে হয় না, এটা আমাদের ধারণা। বলছি না যে, এটা সত্য, প্রমাণিত। আমার ধারণা, এই সংক্রমণ সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত যেতে পারে। তারপর ওইভাবেই থাকবে। গত বছর যেমন ২০, ২২ এমনকি ৩১ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছিল; ওই রকম হবে না।’
ভাইরাসটি দ্রুত ছড়ায় উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কিন্তু ছড়ানোর জন্য তো একটা সুবিধা থাকতে হবে। একজন আরেকজনের সঙ্গে মিলেমিশে, তারপরই তো ছড়াবে। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে, এটা অস্বাভাবিক মনে হয়। তবে সম্ভাবনা আছে। এগুলো সবমিলিয়েই হয়েছে।’
এ বিষয়ে ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ‘আজকে সারাবিশ্বের করোনা সংক্রমণের স্ট্যাটাস দেখতে গিয়ে দেখি যে, হঠাৎ করে সংক্রমণ জাম্প করেছে। বিষয়টা নিয়ে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আলাপ করলাম। তারা বললেন যে, বাংলাদেশে সম্ভবত ব্রিটিশ ভ্যারিয়েন্টটা জানুয়ারি মাসেই আইসিডিডিআরবি শনাক্ত করেছিল। এই ভাইরাসটা বাংলাদেশে সমস্যা সৃষ্টি করার পর্যায়ে আছে আর কি। আমেরিকা, ইউরোপ, জার্মানিতেও এ ভাইরাস অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাওয়া যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাইরাসটা যদি দুই মাস আগে পাওয়াই গিয়ে থাকে, তাহলে দেরি করা উচিত হয়নি। আমি যতটুকু শুনেছি, ৫ জানুয়ারি শনাক্ত করা হয়েছিল। তারা হয়তো বলেনি বা উপেক্ষা করে গেছে। এসব ক্ষেত্রে উপেক্ষা করা ঠিক নয়। যুক্তরাজ্যের ভাইরাস অনেক সময় বিদ্যমান ইমিউন সিস্টেমকে ভেদ করে চলে যেতে পারে।’
ড. বিজন কুমার বলেন, ‘এখন দেখার বিষয়, যারা যুক্তরাজ্যের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তারা আগে আক্রান্ত হয়েছিলেন কি-না কিংবা কোনো টিকা নেয়া মানুষের মধ্যে এ রোগ দেখা যাচ্ছে কি-না। যারা করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাদের হয়নি বা যারা টিকা নিয়েছেন তাদের হয়নি। তাহলে অন্ততপক্ষে এটা বলা যাবে যে, এটা অতটা ক্ষতি করতে পারবে না। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত মানুষ যদি আবার যুক্তরাজ্যের ভাইরাসে আক্রান্ত হন কিংবা টিকা নেয়া মানুষ যদি যুক্তরাজ্যের ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তাহলে কিন্তু বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে।’
বাধ্যতামূলক মাস্ক বা স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা হলে হয়তোবা আটকানো যাবে বলেও মনে করেন ড. বিজন।
নবম সপ্তাহের (২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ মার্চ) সঙ্গে দশম সপ্তাহের (৭ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ) তুলনায় ১৪ দশমিক ৫২ শতাংশ নমুনা পরীক্ষা, ৬৭ দশমিক ২৭ শতাংশ নতুন রোগী শনাক্ত, ৪২ দশমিক ৪১ শতাংশ সুস্থতা এবং ৪৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ মৃত্যু বেড়েছে।