দক্ষিণ সুরমায় সূর্যমুখী ও সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের

18

দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কৃষকদের মাঝে তেল ফসল চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। আমদানী নির্ভর ভোজ্য তেলের চাহিদা নিজস্ব উৎপাদনে পূরণ করার লক্ষ্যে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। সে ধারাবাহিকতায় এবার দক্ষিণ সুরমায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে সরিষা ও সূর্যমুখীর চাষ। এসব তেল ফসল চাষ করে খুশি এখানকার কৃষকরা।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলাকে রূপসী কন্যা সিলেট নগরীর প্রবেশদ্বার বলা হয়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বা মৌলভীবাজার হয়ে সিলেট নগরীতে প্রবেশ করতে হলে দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন ইউনিয়নকে ছুঁয়ে নগরীতে প্রবেশ করতে হয়। এবার দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন ইউনিয়নের শোভা বাড়িয়েছে সূর্যমুখী ও সরিষার চাষ।
এ এলাকার কৃষকেরা ধান চাষে আগ্রহী বেশী। আউশ ও আমন মওসুমে অনেক জমিতে ধান চাষ হয়ে থাকলেও বোরো মওসুমে বিস্তৃর্ণ জমি অনাবাদি থেকে যায়। ধান চাষে তুলনামূলক সেচের প্রয়োজনীয়তা বেশী হওয়ায় আউশ-আমন মওসুমে পানির প্রাকৃতিক যোগান থাকে বলে কৃষকরা সহজে এ দুই মওসুমে ধান চাষ করতে পারেন। বোরো মওসুমে হাওড়ে যেসব এলাকায় সেচের ব্যবস্থা আছে সেখানে ধান চাষ হয়ে থাকলেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জায়গা পতিত থাকে কৃত্রিম সেচের অভাবে। ধানের তুলনায় সেচ নির্ভরতা কম এমন ফসল আবাদে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে এ অঞ্চলের কৃষিতে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রণোদনা ও পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ১৫২৫ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন ফসলের বীজ ও সার বিতরণ করা হয়। বোরো বীজ সহায়তা হিসেবে ২১৪২ জন কৃষককে ২ কেজি করে হাইব্রীড বোরো বীজ সহায়তাও দেওয়া হয়। এর মধ্যে স্বল্প সেচে আবাদ করা যায় এমন ফসল বিতরণ করা হয় ১৩১৫ জন কৃষকের মাঝে। এসব ফসল গুলো হচ্ছে- সূর্যমুখী, সরিষা, গম, ভূট্টা, চিনাবাদাম, মসুর, খেসারী, টমেটো, মরিচ ও গ্রীষ্মকালীন মুগ।
উপজেলায় রাজস্ব অর্থায়নে ৬০ টি সূর্যমুখী, ৩০ টি সরিষা, ১০ টি গম ও ১০ টি ভূট্টা প্রদর্শনী পাইলট প্রকল্প হিসেবে স্থাপন করা হয়। এসব প্রদর্শনী দেখে আগ্রহ বাড়ছে এ এলাকার কৃষকের।
তেল ফসলের আবাদ বাড়াতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ৮ জন অগ্রসরমান কৃষককে বীজ উৎপাদনকারী উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে আরও ৮ টি সরিষা প্রদর্শনী দেওয়া হয়। পরবর্তী মওসুমে যাতে আগ্রহী কৃষকেরা সহজে উচ্চফলনশীল জাতগুলো পায় সে উদ্দেশ্যে তাদেরকে বীজ উৎপাদনের পাশাপাশি সংরক্ষণ ও বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণও সরবরাহ করা হয়, উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়।
এছাড়া উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমেও দক্ষিণ সুরমায় অনেক কৃষক চাষ করেছেন সরিষা ও সূর্যমুখী।
উপজেলার লালাবাজার ইউনিয়নের বিবিদইল গ্রামের সেরকম একজন উদ্যোক্তা কৃষক ডিএইচ খান। তিনি বলেন, আমি এবছর বারি সরিষা-১৪ এর প্রদর্শণী করেছি। কৃষি বিভাগের পরামর্শ মতে সব কিছু করেছি তাই অনেক ভালো ফলন হয়েছে। আমি পরবর্তী মওসুমে বীজ হিসেবে বিক্রি করার জন্য এ সরিষা সংরক্ষণ করবো। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বীজ বিক্রি করতে প্রয়োজনীয় কিছু যন্ত্রপাতিও পেয়েছি। এখানে আশপাশের অনেক কৃষকেরা পরবর্তী মওসুমে সরিষা আবাদের আগ্রহ দেখাচ্ছে আমি তাদেরকে বীজ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছি। আগামিতে বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে আমারও আরও বড় পরিসরে চাষাবাদ করার ইচ্ছে আছে।
জালালপুরের শেখ পাড়া গ্রামের কৃষক হেলাল মিয়া এবার প্রদর্শণী করেছেন সূর্যমুখীর। তিনি বলেন, আমি এবারই প্রথম সূর্যমুখী চাষ করেছি। উপসহকারী কৃষি অফিসার ফারুক আহমদ সাহেবের পরামর্শ মেনে সব কিছু করেছি। আমি আশা করি ফলন অনেক ভালো হবে। আমি আগামিতেও সূর্যমূখী চাষাবাদ করবো। রোগবালাই কম এবং উৎপাদন খরচ খুবই কম। তাই আমার আশপাশের অনেক কৃষকও সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ পোষণ করেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শামীমা আক্তার বলেন, এ অঞ্চল সরিষা ও সূর্যমুখী আবাদের জন্য খুবই উপযোগি। এসব ফসল চাষ করে যেমন পতিত জমি চাষের আওতায় আনা সম্ভব তেমনিভাবে ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতাও দিনে দিনে কমানো সম্ভব। সেই সাথে এসব তেল খুবই স্বাস্থসম্মত। উচ্চ ফলনশীল, সেচ কম লাগা, সময় কম লাগা, উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় সরিষা ও সূর্যমুখী চাষের প্রতি কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে ওঠছেন। (খবর সংবাদদাতার)