কাজিরবাজার ডেস্ক :
সারাদেশে গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিশুসহ মোট ৮৮৫ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা গেছে। তার মধ্যে ৭৩৫ জনই শিশু, যা মোট মৃত্যুর ৮৩ শতাংশ।
গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) সহযোগিতায় গণমাধ্যম উন্নয়ন ও যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘সমষ্টি’ গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনা থেকে পানিতে ডুবে মৃত্যুর এ তথ্য সংগ্রহ করেছে। বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে ‘সমষ্টি’।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যম ও স্থানীয় পর্যায়ের অনলাইন নিউজ পোর্টালে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫০৯টি ঘটনার (পানিতে ডুবে মৃত্যু) তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। সাধারণত পানিতে ডুবে মৃত্যুর সবগুলো ঘটনা গণমাধ্যমে উঠে আসে না। এখানে বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রাপ্ত প্রবণতাগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সমষ্টি।
এতে আরও বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ২০১৪ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর ৪৩ শতাংশের কারণ পানিতে ডুবে মৃত্যু। যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই) ২০১৭ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১৭ সালে ১৪ হাজার ২৯ জন মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, পানিতে ডুবে মৃত্যুর দিক থেকে কমনওয়েলথ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে পানিতে ডুবে মৃত্যু নিয়ে কোনো তথ্যব্যবস্থা না থাকায় এর প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না।
গত ১৪ মাসে পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে, ১৯৩ জন। এছাড়া চট্টগ্রামে ১৭২ জন, রংপুরে ১৪১, রাজশাহীতে ১১০, ময়মনসিংহে ১০০, বরিশালে ৬৬ ও খুলনা বিভাগে ৬১ জন মারা যায়। এ সময়ে সবচেয়ে কম মৃত্যু ছিল সিলেট বিভাগে, ৪২ জন।
নেত্রকোনায় ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এ জেলায় গত বছর মৃত্যু হয় ৫০ জনের। ঢাকা, নোয়াখালী, দিনাজপুর, গাজীপুর ও কুড়িগ্রামে যথাক্রমে ৪৬, ৪৫, ৩৩, ৩৩ ও ২৭ জন মারা যায়। শরীয়তপুর, খুলনা ও নড়াইলে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
পানিতে ডুবে মৃতদের ৮৩ শতাংশই শিশু জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তাদের মধ্যে চার বছর বা কম বয়সী ৩১০ জন, ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী ২৮৪ জন, ৯-১৪ বছরের ১১০ জন এবং ১৫-১৮ বছরের ৩১ জন। ১৫০ জনের বয়স ১৮ বছরের বেশি।
৬৫ পরিবারের ১৭৪ জন সদস্য পানিতে ডুবে মারা যায়। যাদের মধ্যে শিশুর সঙ্গে ভাই বা বোনসহ ৫৯ জন, বাবা-মাসহ ১৭ জন, দাদা-দাদি বা নানা-নানিসহ ৪ জন, চাচাত বা খালাতো ভাই বা বোনসহ ৮১ জন, চাচা-খালাসহ ১৩ জন মারা যায়।
পানিতে ডুবে মৃতদের মধ্যে ৩২৭ জন নারী। তাদের মধ্যে কন্যাশিশু ২৯৫ জন। পুরুষ মারা যায় ৫৫২ জন, যাদের মধ্যে ৪৩৪ জন শিশু। প্রকাশিত সংবাদ থেকে ছয় জনের লৈঙ্গিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৭ সালে প্রকাশিত ‘প্রিভেন্টিং ড্রাওনিং : অ্যান ইমপ্লিমেন্টেশন গাইড’-এ স্থানীয় পর্যায়ের মানুষজনকে সম্পৃক্ত করে দিবাযত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে। এছাড়া পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি ও জাতীয়ভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করার ওপরও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠান সুপারিশ করেছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে সমষ্টি।