কাজিরবাজার ডেস্ক :
আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক। ব্যস্ততম এই মহাসড়কে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানি। বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে মহাসড়কের সিলেট বিভাগের অংশে। সড়ক ও জনপথের (সওজ) পর্যবেক্ষণে এই দুর্ঘটনার জন্য সাতটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। দুর্ঘটনা রোধে সমস্যাগুলোর সমাধান প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বছর দেড়েক আগেও সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের স্থানে স্থানে ছিল খানাখন্দ। কিন্তু এখন রাস্তার অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো। সংস্কার করা হয়েছে মহাসড়কের বেহাল অংশ। কিন্তু এর পরও থামছে না দুর্ঘটনা। প্রায় প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হচ্ছে লাশের সংখ্যা। সর্বশেষ ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোর সাড়ে ৬টার দিকে মহাসড়কের সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমার রশিদপুরে লন্ডন এক্সপ্রেস ও এনা পরিবহনের বাসের মধ্যে ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এতে এক চিকিৎসকসহ মারা যান আটজন। আহত হন দুই বাসের আরও ৩৪ যাত্রী। ছোটখাটো দুর্ঘটনা ছাড়া গেল বছরের ৩১ জুলাই সকাল ৭টায় ওই মহাসড়কের সিলেট অংশের ওসমানীনগরের চাঁদপুর এলাকায় বাস ও প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের চারজনসহ পাঁচজন নিহত হন।
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির হিসাব অনুযায়ী ২০২০ সালে সিলেট বিভাগে ১৮৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৫০ জন। আহত হয়েছেন প্রায় ৪০০। এর মধ্যে শুধু সিলেট জেলায় ৪৭টি দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা ছিল ৬৯ জন। আর এসব দুর্ঘটনার বেশিরভাগ ঘটেছে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে। সড়ক সংস্কারের পরও দুর্ঘটনা না কমার জন্য সাতটি কারণকে দায়ী করেছে সিলেট সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সওজ সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী উৎপল সামন্তের মতে, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য যেসব কারণ দায়ী তার মধ্যে রয়েছে গতির প্রতিযোগিতা ও অবৈধ ওভারটেক, ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি পণ্য বোঝাই, অবৈধভাবে সিএনজি অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল, পার্শ্বরাস্তা থেকে অসচেতনভাবে মহাসড়কে গাড়ি ওঠা, রাস্তার পাশে বাজার ও মানুষের ভিড়, মহাসড়কের ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল। এ ছাড়া দুর্ঘটনার জন্য তিনি চালকদের বিশ্রামহীনতা ও টানা গাড়ি চালানোকেও দায়ী করেন। তিনি বলেন, বেশিরভাগ পরিবহন চালকরা বিশ্রামের সুযোগ পান না। তারা দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা বা তার চেয়েও বেশি সময় গাড়ি চালান। এতে অনেক সময় গাড়ি চালানো অবস্থায় ঝিমুনি চলে আসে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন,
সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের সিলেট অংশে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে ভোররাতে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসের চালক ও যাত্রীরা মধ্যরাতের পর হাইওয়ে রেস্টুরেন্টগুলোতে খাবার খান। ক্লান্তির কারণে এরপর তাদের মধ্যে ঝিমুনি চলে আসে। ফলে প্রায়ই চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটান। সওজের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে প্রায় একমত যাত্রীকল্যাণ সমিতিও। সওজের চিহ্নিত সাতটি কারণ ছাড়াও দুর্ঘটনার জন্য তারা দায়ী করছেন রাস্তাঘাটের ত্রুটি, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা।