ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা উত্তোলন

9

মহান স্বাধীনতার জন্য একাত্তরের মার্চ মাস ছিল বাঙালির আবেগ প্রোজ্জ্বল এক সময়। বাঙালি জাতির স্বপ্নদষ্টা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে দু‘ মার্চ সারাদেশে স্বত:স্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বট-তলায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ছাত্র জনতা বাংলার স্বাধীনতার জন্য গণজোয়ারে পরিণত হয়ে বিদ্রোহ আর বিক্ষোভে গর্জে ওটে, বিক্ষিপ্ত ছাত্র জনতার গণজমায়াতে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। তৎকালীন স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
এদিনই ঘোষণা করা হয় যে কোনো ত্যাগ স্বীকারের মধ্যে হলে ও স্বাধীনতার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় শপথ নেয়া হয়। বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক তৎকালিন জেলা-থানা সমূহে এমনিতে ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঢাকা শহরসহ থানা সদর সমূহে মিছিল-মিটিং আর বিক্ষোভ সমাবেশ। কোন মুহূর্তে ঢাকায় কি হচ্ছে, কতজন মারা গেছেন এসব খবর জানার জন্যে একমাত্র রেডিও বা বিবিসির খবরের অপেক্ষায় থাকতে হতো প্রতিটি থানা সদরের বিক্ষোভকারী নেতা-কর্মীরা। তাই প্রতিদিন বাদ-মাগরিব যে বাড়িতে রেডিও ছিল সে বাড়িতে তখন রেডিও‘র খবর শোনার জন্যে প্রচন্ড ভীড় জমে উঠতো। উটানে চাটি বিছিয়ে ছাত্র-জনতা শোনতো।
শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে ছাত্র জনতার ঢল রোধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সারাদেশে কার্ফু জারি করে। কিন্তু বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা কার্ফুকে উপেক্ষা করে মিটিংয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। স্বৈরাচারি সরকার বেপরোয়া গুলি বর্ষণ করে, হতাহত হয় অনেক লোক। এদিনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, “বাঙালিরা আর নির্যাতিত হতে রাজি নয়। তারা তাদের অধিকার অর্জনে দৃঢ়সংকল্প। বাংলাদেশের স্বাধিকার অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে”। বঙ্গবন্ধু ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালন করার আহবান জানান এবং গত কয়েকদিনে স্বৈরাচারিদের গুলিতে নিহত ও আহতদের স্মরণে ৩ মার্চ শোক দিবস ঘোষণা করেন।
স্বাধীনতার জন্যে যখন সারা বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ সর্বত্র চলছে পাকিস্তানি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির বিক্ষোভ অব্যাহত তখনই দেশের প্রতিটি থানা সদরে ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এর ছাত্র সংগঠনের ছাত্র নেতৃবৃন্দ পৌঁছে গেছেন। আমাদের সীমান্তিক থানা সদর জকিগঞ্জ থানাছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে উত্তাল। সব-ধরনের সভা সমাবেশে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা জাতীয় পরিষদ সদস্য এম.এ.লতিফসহ আওয়ামী লীগের এডভোকেট মুহিব আলী খান, এডভোকেট নিসার আলী, এডভোকেট আসাইদ আলী, আব্দুল খালিক, মনুমিয়া প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। ন্যাপের ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া) নেতা আকরাম আলী (স্যার), আবুল বাইছ, আব্দুস সোহবান (রানা), ছাত্র ইউনিয়ন (বিল্পবী) বদরোদ্দীন (বদর ভাই), ছাত্র লীগ নেতা ফয়জুর রহমান (মাষ্টার), আব্দুল জলিল, তজমুল আলী (মাষ্টার) প্রমুখ। তৎকালীন সময়ে আমরা প্রাইমারি স্কুলের ছাত্ররা প্রতিটি স্কুল থেকে মিছিল বের করে জকিগঞ্জ বাজারে ঐতিহাসিক আমতলায় জমায়েত হয়ে সভা-সমাবেশ করা হতো।