সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ॥ অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ না করলে ৯ মার্চ থেকে লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট বর্জনসহ অবরোধের হুঁশিয়ারি

6
লাফার্জ হোলসিম কর্তৃক খোলাবাজারে চুনাপাথর বিক্রির প্রতিবাদে সিলেট প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহবায়ক আহমদ শাখাওয়াত সেলিম চৌধুরী।

স্টাফ রিপোর্টার :
বহুজাতিক কোম্পানী লাফার্জ হোলসিম সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে চুনাপাথর ব্যবসার খোলাবাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে। এর ফলে চুনাপাথর ব্যবসায়ী-শ্রমিকরা ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। তাই আগামী ৮ মার্চের মধ্যে তাদের এমন অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ না করলে পরদিন ৯ মার্চ থেকে লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট বর্জনসহ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করার হুশিয়ারি দিয়েছেন বৃহত্তর সিলেটের চুনাপাথর আমদানি ও ব্যবসার সাথে জড়িত ৩০টি সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা।
মঙ্গলবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন তারা। পাশাপাশি চুনাপাথর ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট লক্ষাধিক ব্যবসায়ী শ্রমিকের জীবিকা নির্বাহের বিষয়টি বিবেচনা করে লাফার্জের এই অবৈধ ব্যবসা দ্রুত বন্ধে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের হস্তক্ষেপ কামনাও করেছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আহমদ শাখাওয়াত সেলিম চৌধুরী ও সদস্য সচিব হাজী মো. আবুল হাসান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘সুনামগঞ্জের ছাতক, চেলা, ইছামতি, বড়ছড়া, বাগালি ও সিলেটের ভোলাগঞ্জ, তামাবিল শুল্ক স্টেশন দিয়ে চুনাপাথর আমদানি করে ক্রাশিং পদ্ধতিতে ছোট করে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা যুগ যুগ ধরে খোলাবাজারে তা বিক্রি করে আসছেন। বর্তমানে বৃহত্তর সিলেটে ৫ শতাধিক ক্রাশার মেশিন এবং লক্ষাধিক ব্যবসায়ী ও শ্রমিক এ ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন। তারা চুনাপাথর আমদানি বহন ও বাজারজাতকরণসহ প্রতিটি ধাপে সরকারের অনুমতি নিয়ে সরকারকে ভ্যাট, ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট উৎপাদন ও বিপননের জন্য নিবন্ধিত একটি কোম্পানী। তাদের কোম্পানীর সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশের ভূমি, গ্যাস প্রভৃতি ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ অনুমতি নিয়ে কোম্পানীটি তাদের সিমেন্ট, ক্লিংকার উৎপাদনের কাঁচামাল চুনাপাথরের জন্য ছাতক থেকে বিশ্বের অন্যতম ক্রসবর্ডার কনভেয়ার ভেল্টের মাধ্যমে ভারতের মেঘালয় থেকে চুনাপাথর আমাদানি করে থাকে। লাফার্জ বাংলাদেশ ও ভারতের সাথে চুক্তিবদ্ধ যে, মেঘালয় থেকে আমদানিকৃত এসব চুনাপাথর শুধুমাত্র তাদের সিমেন্ট উৎপাদনেই ব্যবহার করবে। কিন্তু উৎপাদনমুখী শিল্পের কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি করার অনুমতি না থাকার পরেও তারা কনভেয়ার ভেল্ট দিয়ে আনা চুনাপাথর ক্রাশিং করে খোলাবাজারে বিক্রির পাঁয়তারা শুরু করে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ব্যবসায়ীরা তাদের এমন অবৈধ ব্যবসার প্রতিবাদ জানালে ২০০৯ সালের ১৩ জুন লাফার্জের প্ল্যান্ট ম্যানেজার চেং জু সং ছাতক লাইম স্টোন ইমপোটার্স এন্ড সাপ্লাইয়ার্স গ্রুপ এর প্রেসিডেন্ট আলা উদ্দিন বরাবরে একটি চিঠি লিখে জানান, বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে আলোচনায় বসতে। বাংলাদেশ বা বিদেশে কোনো গ্রাহকের কাছে চুনাপাথর বিক্রি বা বিতরণের কোনো পরিকল্পনা লাফার্জের নাই বলে তিনি আশ্বস্ত করেন। কিন্তু গত বছরে আমদানি করা এসব চুনাপাথর কোম্পানীর ভিতরে প্ল্যান্ট বসিয়ে ক্রাশিং করে ক্লিয়ার এগ্রিগেটের নামে খোলাবাজারে বিক্রি শুরু করে। খোলাবাজারে চুনাপাথর বিক্রির ফলে বৃহত্তর সিলেটের ছাতক, ভোলাগঞ্জ, তামাবিল, বড়ছড়া, বাগালি শুল্ক স্টেশনের সমস্ত আমদানিকারকগণ ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং পাথর ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় ৫ শতাধিক ক্রাশার মিলের ব্যবসায়ীগণ প্রায় ৫শত কোটি টাকার মতো পুঁজি হারিয়ে ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে পড়বে। এবং লক্ষ লক্ষ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেন নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, লাফার্জের এমন বেআইনি কার্যক্রমে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি ভারতে সহযোগী ব্যবসায়ীদের সাথে ব্যবসায়ীক সম্পর্কও বিনষ্ট হচ্ছে। অবৈধ এসব কার্যক্রম বন্ধ করতে ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষে গত এক মাসে তিনটি চিঠি দেয়া হলেও লাফার্জ সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে এবং খোলাবাজারে চুনাপাথর বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। এ কারণে নিরুপায় হয়ে বিষয়টি লিখিতভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপিকেও অবগত করা হয়েছে। একই সাথে এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট, সুনামগঞ্জ চেম্বার প্রেসিডেন্ট ও স্থানীয় সংসদ সদস্য জনাব মুহিবুর রহমান মানিক এবং ছাতক পৌর মেয়র জনাব আবুল কালাম চৌধুরীসহ স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলেন, তারা আশঙ্কা করছেন লোভ সামলাতে না পেরে লাফার্জ হোলসিম ভবিষ্যতে চুনাপাথর দিয়ে চুন প্রস্তুত করতে শুরু করবে। এ কারণে সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে চুন শিল্পেও। যা প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ এর সাথে সাংঘর্ষিক। কেননা, প্রধানমন্ত্রী যেখানে কর্মসংস্থানের জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছেন সেখানে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠান আর্থিক মুনাফার জন্য দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি লিয়াকত আলী, ছাতক পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফজলু মিয়া চৌধুরী, ছাতক পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি অদুদ আলম, কোম্পানীগঞ্জ পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল জলিল, ব্যবসায়ী শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মো. আবুল হাসান, ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান মিন্টু, ছাতক লাইমস্টোন ইম্পোটার্স ও এন্ড সাপ্লাইয়ার্স গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক অরুণ দাস, ছাতক পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সামছু মিয়া প্রমুখ।