নিজ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় ॥ দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকায় প্রধানমন্ত্রীর আক্ষেপ

6
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয়ের সভা কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য প্রদান করেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল না পাওয়ার আক্ষেপ প্রকাশ করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শক্তিশালী বিরোধী দল আমরা পাচ্ছি না। অপজিশন (বিরোধী) বলতে দুটো পার্টি আছে। দুটোই মিলিটারি ডিকটেটরদের হাতে গড়া। জনগণের কাছে তাদের অবস্থান নেই। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নাম না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অপজিশন বলতে যারা আছে, তার মধ্যে দুটো পার্টি এখন যারা (বিএনপি, জাতীয় পার্টি), দুটোই হচ্ছে মিলিটারি ডিকটেটর- একেবারে সংবিধান লঙ্ঘন করে, আর্মির রুলস ভঙ্গ করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল তাদের হাতে গড়া। কাজেই তাদের ঠিক ঐ মাটি ও মানুষের সঙ্গে যে সম্পর্ক, সেই সম্পর্কটা তাদের মাঝে নেই। তাদের কাছে ক্ষমতাটা ছিল একটা ভোগের জায়গা। সেই ক্ষেত্রে আসলে অপজিশন তাহলে কোথায়? এখানে একটা পলিটিক্যাল সমস্যা কিন্তু আছে।
সরকারপ্রধান বলেন, কাজেই শক্তিশালী বিরোধী দল আমরা পাচ্ছি না। তাদের অবস্থানটা মানুষের কাছে নেই। কারণ তারা তো এসেছেই একটা ভাসমান অবস্থায়। কাজেই তাদের ওই শিকড় তারা গড়তে পারেনি। সেই ক্ষেত্রে আমাদের ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ড থেকে যখন শোনায় যে, এখানে ডেমোক্রেসি, পার্টিসিপেটরি ডেমোক্রেসি, ইলেকশন, হেনতেন; কিন্তু আসলে এখানে করবেটা কি? সেটাও তারা চিন্তা করে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলতে গেলে অনেক দল দরকার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, উন্নত বিশ্বে দেখলে আপনারা দেখবেন সেখানে কিন্তু মাত্র দুই দল হয়ে গেছে এখন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দুই দলের বেশি শক্তিশালী দল নাই। আবার নির্বাচনে আমি তো জানি আমেরিকার প্রায় ২৫ শতাংশ সংগঠন ইলেকশনই করে না। ইলেকশন করার বিষয়ে একটা অনীহা চলে আসে মানুষের। এটাও কিন্তু অনেক দেশে দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশটা ধীরে ধীরে ওরকম হয়ে যাচ্ছে।
বিগত বিএনপি-জামায়াত আমলের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পেছনে থেকে তাদেরকে উৎসাহ দিয়ে একবার ক্ষমতায় আনতে পারে, যেটা ২০০১ সালে এনেছিল। কিন্তু তার পরিণতি কি ছিল? বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, বাংলা ভাই সৃষ্টি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, ৫০০ জায়গায় একদিনে বোমা হামলা, আমি অপজিশনে আমাদের ওপর গ্রেনেড হামলা, অপজিশনের অনেক নেতাকর্মীদের ওপর হামলা।’
তিনি বলেন, ‘সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ওপর গ্রেনেড হামলা, কামরান মারা গেছে তার ওপর দুই বার গ্রেনেড হামলা হলো, হেলালের মিটিংয়ের ওপর হামলা, সেখানে ৯ জন মারা গেল। এ রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সেই সময় দেশজুড়ে। যার জন্য ইমার্জেন্সি এসেছে, এটা হলো বাস্তবতা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাজনৈতিক চিন্তাভাবনাটা যদি মানুষকে ঘিরে হয়, মানুষের কল্যাণমুখী হয়, সেই রাজনীতি কিন্তু টিকে থাকে, সেটাই চলে। আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল। একমাত্র আওয়ামী লীগ একটা দল, যে দলটা সেই ১৯৪৯ সালে তৈরি। বিরোধী দল থেকে একেবারে সাধারণ মানুষকে নিয়ে এই দলটা গড়ে তোলা। এই সংগঠনের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে এদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসলেই এদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়। কেন হয়? এই জন্য হয়, আমরা তো মাটি ও মানুষের মধ্য থেকে উঠে এসে মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই এই সংগঠনটা তৈরি। কাজেই আমাদের চিন্তা চেতনাটা ওখানেই থাকে।
মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকার জন্য যতটুকু সম্ভব খাদ্য উৎপাদনে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর দুটি তরঙ্গের পরে, এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব আরেকটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। তাই আমাদের নিজেদের ব্যবস্থা তৈরি রাখতে হবে এবং সেজন্য এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা উচিত নয়, বরং আমরা যে যা করতে পারি তা উৎপাদন করতে হবে।
সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে সরকারপ্রধান বলেন, দেশের প্রতিটি নাগরিকের উচিত তাঁর জমি থেকে কিছু না কিছু উৎপাদন করা, যা শুধু তাদের চাহিদাই মেটাবে না, দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভর হতেও সাহায্য করবে। তিনি বলেন, বিশ্ব সঙ্কটের কারণে দেশ যাতে কোন সঙ্কটের সম্মুখীন না হয় সেজন্য আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সকলকে এই বার্তা প্রচার করার আহ্বান যে, দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না।
সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, রাষ্ট্রদূত-এ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমম্বয়ক জুয়েনা আজিজ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।