জেড.এম. শামসুল :
স্বাধীনতা সংগ্রামের ১৯৭১ সালের মার্চ মাস ছিল বাঙালির আবেগে প্রোজ্জ্বল এক সময়। বাঙালি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে ২ মার্চ সারা বাংলাদেশে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত বিদ্রোহ বিক্ষোভে গর্জে ওঠা ছাত্র-গণজমায়েতে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা, তৎকালীন স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ পতাকা উত্তোলন করেন। এদিনের সমাবেশে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকার করার ঘোষণাসহ স্বাধীনতার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় শপথ নেয়া হয়। এ সভায় ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলন শুরু করা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশানুযায়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই দিন বিকালে অনির্ধারিত এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয় বায়তুল মোকাররম ও পল্টন ময়দানে। সেদিন ঢাকা সহ দেশের প্রত্যান্তঞ্চলের রাজপথে ছিল স্বাধীনতাকামী মুক্তি পাগল মানুষের ঢল। মিছিল, মিটিং, সভা-সমাবেশ। এদিন রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আকস্মিক ভাবে দেশে সান্ধ্য আইন জারি করে। কিন্তু বিক্ষুব্ধ বাঙালি সেই কার্ফু ঘৃণাভরে উপেক্ষা করে অংশ নেয় মিছিল-মিটিংয়ে। এতে স্বৈরাচারী সরকার বেপরোয়া গুলি বর্ষণ করে। হতাহত হন অনেক। এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, বাঙালিরা আর নির্যাতিত হতে রাজি নয়। তারা তাদের অধিকার অর্জনে দৃঢ়সংকল্প। বাংলাদেশের স্বাধিকার অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। বঙ্গবন্ধু ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালনের ঘোষণা দেন এবং পরের দিন ৩ মার্চকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেন। পাকিস্তানী স্বৈরশাসকরা এদিন ১১০নং সামরিক আদেশ জারি করে। এই আদেশের বলে পত্রিকা সমূহে পাকিস্তানের সংহতি বা সার্বভৌমত্ব’র পরিপন্থী কোন খবর, মতামত বা স্থিরচিত্র প্রকাশ নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু বাংলার স্বাধীনতাপ্রেমী ছাত্র-জনতা তাদের কর্মসূচী চালিয়ে যেতে থাকে।