কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উদ্যোগে ন্যায্যতার ভিত্তিতে করোনাপ্রতিরোধী টিকা বণ্টনের জন্য গড়ে তোলা জোট কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ফেব্রুয়ারিতেই বিনা মূল্যের টিকা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে টিকাদান কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান।
তিনি বলেন, এ মাসের শেষের দিকে দেশে কোভ্যাক্সের ১ লাখ ৩১ হাজার ডোজ টিকা আসবে, যা বিনা মূল্যে মিলছে।
কোভ্যাক্স সব দেশের জন্য ন্যায্যতার ভিত্তিতে করোনার টিকা নিশ্চিতে ডব্লিউএইচও, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (গ্যাভি) ও কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের গড়ে তোলা প্ল্যাটফর্ম।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্রত্যেক দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য বিনা মূল্যে করোনাপ্রতিরোধী টিকার ব্যবস্থা করা হবে। এই জোটের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে বাংলাদেশ ১ কোটি ২৭ লাখ ডোজ টিকা পাবে। শুরুতে বলা হচ্ছিল, কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বাংলাদেশকে দেয়া হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের উদ্ভাবিত টিকা। সংরক্ষণ প্রক্রিয়া অনেকটা দুঃসাধ্য এই টিকা নিতে আগ্রহ দেখায় সরকার।
কিন্তু পরে জানানো হয়, ফাইজারের নয়, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে কোভিশিল্ড নামে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাই দেবে কোভ্যাক্স। এরই মধ্যে এই টিকার প্রয়োগ শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। সিরাম থেকে ৩ কোটি ডোজ টিকা কেনার পাশাপাশি ভারত সরকার থেকে এই টিকার ২০ লাখ ডোজ উপহার পেয়েছে ঢাকা।
কোভ্যাক্সের টিকা প্রসঙ্গে গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশকে ফাইজারের নয়, বরং অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাই দিচ্ছে কোভ্যাক্স। জোটটি প্রথম পর্যায়ে ১ কোটি ২৭ লাখ ডোজ টিকা দেবে, যার ৫০ লাখ ডোজ আগামী মার্চেই আসতে পারে।
তিনি জানিয়েছিলেন, কোভ্যাক্স এক চিঠিতে জানিয়েছে বাংলাদেশকে তারা অক্সফোর্ডের টিকা দেবে। ফাইজারের টিকা পেলে তা সংরক্ষণের জন্য আমাদের খুব সমস্যায় পড়তে হতো। এখন অক্সফোর্ডের টিকা দিলে তা ভালোই হবে।
কিন্তু স্বাস্থ্যসচিব আব্দুল মান্নান জানালেন মার্চে নয়, ফেব্রুয়ারিতেই কোভ্যাক্সের টিকা পাবে বাংলাদেশ। আর ৫০ লাখ নয়, প্রথম চালানে টিকা থাকবে ১ লাখ ৩১ হাজার। সচিব বলেন, ‘টিকা নিয়ে কোনো অস্থিরতার কারণ নেই। পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন আছে। আরো ভ্যাকসিন আমরা পাচ্ছি বিভিন্ন সোর্স থেকে।
‘যত দিন জনগণ টিকা নিতে চাইবে, টিকার মূল্য যাই হোক, প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সুরক্ষা দিতে মানসিকভাবে ও আর্থিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন।’
মঙ্গলবার দেশে তৃতীয় দিনের মতো গণটিকা কর্মসূচী চলেছে। টিকার প্রতি জনগণের আগ্রহ বেড়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যসচিব আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, টিকা নিয়ে যতটা ভয়ভীতি ছিল, এখন একেবারেই নাই; একটা উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
একই কথা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলমেরও। বলেন, তৃতীয় দিনের মতো সারা দেশে করোনার ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলছে। রাজধানীতে ভ্যাকসিন গ্রহণে জনগণের আগ্রহ বেড়েছে।
টিকার অপচয় কেমন হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে টিকার অপচয় এখনও পর্যন্ত ১০ শতাংশ ছাড়ায়নি। ১০ শতাংশ অপচয় ধরেই টিকা আনা হয়েছে। এ পর্যন্ত তা পেরোয়নি।