কাজিরবাজার ডেস্ক :
বেসরকারি বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে চলতি মাসেই এ কার্যক্রম শুরু করবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক মামলা দায়ের হওয়ায় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে মতামত পেলেই চলতি মাসে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
‘জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে এনটিআরসিএ’র পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। নিয়োগের পক্ষে মতামত পেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হবে।’ এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান
এনটিআরসিএ সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের এমপিওভুক্ত (মাসিক চুক্তিভিত্তিক) স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫৭ হাজার ৩৬০টি শূন্যপদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্যপদের তালিকা সংগ্রহ কাজ শেষ করে তা মাঠ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই শেষ করা হলেও নিয়োগপ্রত্যাশীদের দায়ের করা আদালতে একাধিক মামলার কারণে তা স্থবির হয়ে পড়েছে।
অনুমোদিত বিভিন্ন বিষয়ে প্রথম ধাপে ৫৭ হাজার ৩৬০টি পদ শূন্য পাওয়া গেলেও বর্তমানে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। ২০১৭ সালে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি মেধাতালিকা তৈরি করা হয়। নিবন্ধিত প্রার্থীদের ওই তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে এমপিও নীতিমালা-২০১৮ প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আপিল ডিভিশন ১৩তম নিবন্ধিত প্রার্থীদের সরাসরি নিয়োগ দেয়ার নির্দেশনা দেয়।
দুটি সিদ্ধান্ত ভিন্ন হওয়ায় সারাদেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্যপদের তালিকা চূড়ান্ত হলেও নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে প্রার্থীরা আদালতে প্রায় ৪০০টি মামলা করায় এনটিআরসিএ’র নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। এ থেকে মুক্তি পেতে নতুন করে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে এনটিআরসিএ।
জানতে চাইলে এনটিআরসিএ’র গণবিজ্ঞপ্তিপ্রত্যাশী ফোরামের সমন্বয়ক শান্ত আলী বলেন, বর্তমান নিয়োগ জটিলতার জন্য নিবন্ধিতদের বৃহত্তর অংশ দায়ী নয়, কিছু প্রার্থী এ জটিলতা সৃষ্টি করেছেন। ১৫তম নিবন্ধিত ব্যাচে তিনটি ধাপে কঠিন পরীক্ষায় পাস করতে হয়েছে। ফলাফল প্রকাশের এক বছর ধরে অপেক্ষা করেও তারা এখনও নিয়োগ পাচ্ছে না। এটি কর্তৃপক্ষের অযৌক্তিক ও নিষ্ঠুর আচরণ। নিবন্ধিত বৃহৎ একটি অংশকে এভাবে বঞ্চিত করা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ৮০ হাজার শূন্যপদ পূরণ, মুজিববর্ষের অঙ্গীকার বাস্তবায়নসহ বেকারদের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি। যদি দ্রুত গণবিজ্ঞপ্তি বা নিয়োগ কার্যক্রম শুরু না হয়, তবে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া নিবন্ধিত উচ্চশিক্ষিত বেকাররা রাজপথে নামতে বাধ্য হবেন। ন্যায্য অধিকার আদায় করতে তারা একযোগে কঠোর আন্দোলন শুরু করবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন।
এনটিআরসিএ’র কর্মকর্তারা জানান, প্রথম থেকে ১৫তম নিবন্ধনের মেধাতালিকায় ৬ লাখ ৩৪ হাজার ১২৭ জন রয়েছেন। এর মধ্যে এক লাখ ৮২১ জনের বয়স ৩৫ বছর পার হওয়ায় তারা নিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন না। ৩৫ বছরের মধ্যে আরও দুই লাখ ৮৮ হাজার নিবন্ধিত প্রার্থী রয়েছেন। তাদের অনেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরাসরি নিয়োগ পেয়েছেন। মামলা জটিলতায় অনেকের বয়স পার হলেও চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বর্তমানে প্রায় দেড় লাখ নিবন্ধিত প্রার্থী নিয়োগের অপেক্ষায়।
সম্প্রতি আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক এমপিওভুক্ত নীতিমালা-২০১৮ জারির আগে অর্থাৎ ২০১৮ সালের ২১ জুনের আগে যারা শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করেছেন তাদেরও এমপিও ইনডেক্সধারীদের ক্ষেত্রে বয়সের সময়সীমা কার্যকর হবে না। এর মধ্যে তিন ধাপে এনটিআরসিএ নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করলেও চলতি মাসে তৃতীয় ধাপে নিয়োগের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হতে পারে।
এদিকে এনটিআরসিএ’র তালিকাভুক্ত বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৭ হাজার শূন্যপদের মধ্যে ৫৫ হাজার পদে নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। সম্প্রতি তিনি এনটিআরসি’র চেয়ারম্যানকে এ সংক্রান্ত পরামর্শ দিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মাহবুব হোসেন বলেন, ১৩তম নিবন্ধনে পাস করা প্রায় দুই হাজার প্রার্থী আদালতে মামলা করে তাদের পক্ষে রায় এনেছেন। এ রায়ের প্রেক্ষিতে নতুনভাবে আপিল করেছে এনটিআরসিএ। সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৭ হাজার শূন্যপদের মধ্যে দুই হাজার বাদ দিয়ে বাকি ৫৫ হাজার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সে মোতাবেক কাজ শুরু করেছে এনটিআরসিএ।
জানতে চাইলে এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘সারাদেশে ৫৭ হাজারের বেশি পদ শূন্য হলেও আমরা নিয়োগ দিতে পারছি না। একটি মহল তাদের নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে প্রার্থীদের নানাভাবে লোভ দেখিয়ে চাঁদা তুলে বিভিন্ন সময় মামলা করে তারা লাভবান হয়েছে।’ চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘সচিব পরামর্শে দুই হাজার পদ বাদ দিয়ে বাকি ৫৫ হাজার শূন্যপদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। গত মাসের (জানুয়ারি) মাঝামাঝি আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে এনটিআরসিএ’র পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। নিয়োগের পক্ষে মতামত পেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হবে।’