অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা ইসলামে মারাত্মক গোনাহ

22

সায়মা তাহসিন সাবিহা এহসান :

বিয়ের পূর্বে তরুণ-তরুণীদের প্রেম-ভালোবাসা ইসলামে গুরুতর অপরাধ। গায়ের মাহরাম নারী ও পুরুষের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ, কথা ও বন্ধুত্ব হারাম ঘোষণা করেছে ইসলাম। গায়রে মাহরাম নারী ও পুরুষের মাঝে বন্ধুত্ব হচ্ছে ব্যভিচারের প্রথম দরজা। তরুণ-তরুণীদের অবৈধ সম্পর্ক-বন্ধুত্বকেই সহজ ভাষায় প্রেম বলে। সামাজিকভাবে প্রেম একটি জঘন্য কাজ। ‘প্রেম করা মহাপাপ-প্রেমে আনে অভিশাপ’এ প্রবাদ কথাটি বাস্তবতার নিরিখে নিরেট সত্য। সামাজিকভাবেও প্রেম নিন্দিত ও চরম ঘৃণিত একটি কুকর্ম। অবৈধ প্রেমের শেষ পরিণতি ‘আত্মহত্যা’ আরকি! প্রেমের কারণে সোনালী ভবিষ্যৎ বিনষ্ট হয় সম্ভাবনাময় অনেক তারুণ্যের। প্রেমের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে অনেক তরুণ-তরুণী শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। প্রেম মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের সকল অকল্যাণ বয়ে আনে। দৈনিক পত্রিকায় খুললেই দেখা যায় আজ অমুক স্থানে অমুক তরুণী প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। অমুক স্থানে প্রেমে বাধা দেয়ায় তরুণীকে এসিড মেরে শরীর জ্বলসে দিয়েছে বখাটেরা। প্রেম মানুষের মাঝে সম্পর্ক বিনষ্ট করে। যে প্রেম মানুষকে আত্মহত্যা করতে উদ্ধুদ্ধ করে সে প্রেম কি কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ করতে পারেন? ইসলাম অনুমোদন করে না এসব কাজ করা মারাত্মক গোনাহ। অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা ইসলামে মারাত্মক গোনাহ। তাই এ গোনাহ থেকে বেঁেচ থাকা প্রতিটি তরুণ-তরুণীর ঈমানী দায়িত্ব। অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) বলেন, নারী কিংবা ছোট বাচ্চাদের প্রতি আসক্তি কোনো ব্যক্তিকে এমন বিপর্যয়ে নিপতিত করতে পারে, যার থেকে উদ্ধার করার ক্ষমতা কারো নেই। এর পরিণতি খুবই ভয়াবহ, তার পুণ্যের ভাণ্ডার একেবারে শূন্য হয়ে যায়। প্রথম পর্যায়ে কারো অন্তরে কারো চেহারার প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হয়, দ্বিতীয় পর্যায়ে সে তার প্রেমে মগ্ন হয়ে যায়। যার প্রভাবে সে ধীরে ধীরে নানা অপকর্ম ও অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ে যা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। তবে সবচেয়ে বড় মসিবত হচ্ছে, আল্লাহর রহমত থেকে দূরে নিক্ষিপ্ত হওয়া। কারণ, বান্দা যখন আল্লাহর ইবাদত ও তার প্রতি নিবিষ্ট চিত্ত থাকে, তখন তার কাছে আল্লাহর মহব্বতের চেয়ে মধুর ও সুখকর কোনো জিনিস হতে পারে না। (মাজমুউল ফাতওয়া, খন্ড ১০, পৃষ্ঠা, ১৮৭)।
অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা সম্পর্কে কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-‘তোমরা জেনা তথা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। জেনা তথা অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক হারাম। (সূরা বনি ইসরাঈল : ৩২)। জেনার নিকট যাওয়াই নিষেধ। অর্থাৎ যে সকল জিনিস জেনার নিকটবর্তী করে দেয় তার কাছে যাওয়াই পাপ। বিবাহ পূর্ব প্রেম নর-নারীকে জেনার নিকটবর্তী করে দেয়। আর জেনা মারাত্মক একটি কবিরা গুনাহ। এ ব্যপারে আল্লাহ বলেন-‘স্বাধীনভাবে লালসা পূরণ কিংবা গোপনে লুকিয়ে প্রেমলীলা করবে না’। (সূরা আল মায়িদা : ৫)। সূরা নূরের ৩০ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পুরুষদের চোখ নীচু রাখতে এবং লজ্জা স্থান হেফাজত করার নির্দেশ দিয়েছেন। সূরা নুরের ৩১ নং আয়াতে নারীদের বেলায়ও পর্দা করার কথা বলা হয়েছে। সূরা আহজাবের ৫৯ নং আয়াতে পর্দা করার নির্দেশ আরো পরিস্কার ভাষায় বলা হয়েছে। যেখানে দৃষ্টি নীচু ও সংযত রাখা, লজ্জা স্থান হেফাজত করার কথা এবং পর্দা করার কথা বলা হয়েছে। অবৈধ প্রেম-ভালোবাসার শেষ পরিণতি দুনিয়া ও আখেরাতে অশান্তি। একমাত্র আখেরাতের ভয় ও মহান আল্লাহর নির্দেশনা মেনে চলাই প্রেম প্রতিকারের প্রেসক্রিপশন।