কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাট লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের বড়খেওড় গ্রামে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন ছিঁড়ে নীচে পড়ে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাজু আহমদ নামে ১১ বছরের এক দরিদ্র পরিবারের শিশুর করুণ মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন বড়খেওড় গ্রামের আলমগীর হোসেন এক ব্যক্তি তার বাড়ীর পাশে মসজিদ থেকে দীর্ঘদিন থেকে অবৈধ ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ লাইন টেনে তার বাড়ীতে অবস্থিত একটি দোকান ঘর সহ করাতকলে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ব্যবহার করে আসছিলেন। গত বুধবার ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ সহ আর্তিং লাইন মাটিতে ছিঁড়ে পড়লে বিকেল অনুমান ৫টার দিকে বড়খেওড় গ্রামের দরিদ্র আব্দুল জলিলের শিশুপুত্র রাজু আহমদ মসজিদের পাশে তার একটি গরু আনতে গেলে বিদ্যুতের ছেড়া লাইনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে রাজু আহমদ। এ সময় তার আর্তচিৎকারে একই গ্রামের ১২ বছরের রেদওয়ান তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে সেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হয়। একপর্যায়ে মসজিদের ইমাম বিদ্যুতের মেইন স্লুইস বন্ধ করলে প্রাণে রক্ষা পায় আহত রেদওয়ান। এ ঘটনার খবর পেয়ে কানাইঘাট থানার এসআই পার্থ সারথী ও স্থানীয় মমতাজগঞ্জ বাজারস্থ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ইনচার্জ তমাল দাস ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ রাজু আহমদের লাশ উদ্ধার করে রাতে থানায় নিয়ে আসেন পোস্ট মর্ডামের পর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহত রাজু আহমদের লাশ গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। নিহত রাজু আহমদের বাড়ীতে গেলে তার আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের লোকজন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন অবৈধ বিদ্যু লাইন ছিঁড়ে নীচে পড়ার কারণে রাজু আহমদের মৃত্যু হয়েছে এটি হত্যাকান্ডের পর্যায় পড়ে। এর দায় পল্লীবিদ্যুৎ কর্র্তৃপক্ষ ও অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগকারী আলমগীর হোসেন এড়াতে পারেন না। এ ঘটনার সুষ্ঠুু বিচার চেয়েছেন স্থানীয় লোকজন। তারা বলেন রাজু আহমদের পিতা আবুল জলিল নৌকা বেয়ে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান রাজুর মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবী করেন তারা। রাজুর লাশ বাড়ীতে নিয়ে আসার পর তার মা-বাবা, ভাই-বোন সহ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং এ ঘটনার বিচার চান তারা। এব্যাপারে কানাইঘাট পল্লীবিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন একটি মসজিদ থেকে চোরাই লাইন নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়ে ছিল যার কারণে এ প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। পল্লীবিদ্যুৎ মমতাজগঞ্জ অফিসের ইনচার্জ তমাল দাস সহ অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলেন তারা বার বার আলমগীর হোসেনকে মসজিদ থেকে তার দোকান ঘরে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করার জন্য বলার পরও সে কোন কর্ণপাত করেনি। আমরা তার দোকানে বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ দিয়েছি কিন্তু তিনি মিটারের আবেদন না করার কারনে আমরা বৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারিনি। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগকারী আলমগীর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন মহল্লার লোকজনদের সিদ্ধান্তে তিনি মসজিদ থেকে তার দোকান ঘরে বিদ্যুৎ লাইন নিয়েছেন বলে জানান। থানার এসআই পার্থ সারথী দাসের সাথে কথা হলে তিনি বলেন রাজু আহমদ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে এ ঘটনায় তার বাবা আব্দুল জলিল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। স্থানীয় এলাকাবাসী বিষয়টি সুষ্ঠু ভাবে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দরিদ্র রাজু আহমদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য সিলেটের ঊর্ধ্বতন আইন-শৃংখলা বাহিনী ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়েছেন।