মুজিববর্ষেই উদ্বোধন হবে ১৭০টি মডেল মসজিদ

226

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ইসলামকে শুধু মসজিদে আটকে রাখলে হবে না। এটি যে একটি পূর্ণ জীবন বিধান সেটা বোঝাতে চাই মডেল মসজিদ। যেখানে নিয়মিত ইসলামি জ্ঞানচর্চা হবে, কেন্দ্র হবে। এমন লক্ষ্য নিয়েই সারা দেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ জেলা-উপজেলায় ৫৬০টি মডেল মসজিদ গড়ে তুলছে সরকার। এর মধ্যে মুজিববর্ষেই ১৭০টি মসজিদ উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
রংপুর, সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধা জেলায় সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, দ্রুত তৈরি হচ্ছে এসব মডেল মসজিদ। সিরাজগঞ্জ ও রংপুর জেলায় ৯০ শতাংশ নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে এ মসজিদগুলো নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এর প্রাথমিক পরিকল্পনা করেন স্বয়ং দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার গঠনের পর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প ৮ হাজার ৭২২ কেটি টাকা ব্যয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়।
সেই ধারাবাহিকতায় অনুমোদিত প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী জেলা পর্যায়ে ৪ তলা ও উপজেলার জন্য ৩ তলা এবং উপকূলীয় এলাকায় ৪ তলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এসব মসজিদ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে।
তিন ক্যাটাগরিতে নির্মিত হচ্ছে মসজিদগুলো। জেলা শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬৯টি চারতলা মডেল মসজিদ থাকছে এ-ক্যাটাগরিতে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২৩৬০ বর্গমিটার। ১৬৮০ বর্গমিটার আয়তনের বি-ক্যাটাগরির ৪৭৫টি মসজিদ হচ্ছে উপজেলাগুলোয়। ২০৫২ বর্গমিটার আয়তনের সি-ক্যাটাগরির মসজিদ হবে ১৬টি উপকূলীয় এলাকায়।
জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মাণাধীন মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ১২০০ মুসুল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে নামাজ আদায় করতে পারবে ৯০০ জন।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. নজিবর রহমান জানান, ‘মুজিববর্ষে ১৭০টি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হবে। আগামী এপ্রিলে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেপ্টেম্বরে ৬০টি এবং মুজিববর্ষের শেষভাগে ডিসেম্বরে আরও ৬০টি মসজিদ উদ্বোধন করা হবে।’
প্রকল্পের মোট কাজের ৩২ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে নজিবর রহমান বলেন, ‘আগামী দুই বছরের মধ্যে সবগুলোর নির্মাণ সম্পন্ন হবে।’
নজিবর রহমান আরও বলেন, ৫৬০টি মডেল মসজিদে সারা দেশে প্রতিদিন ৪ লাখ ৯৪ হাজার ২০০ পুরুষ ও ৩১ হাজার ৪০০ নারী নামাজ আদায় করতে পারবেন। এসব মসজিদে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি জ্ঞান অর্জন ও গবেষণার সুযোগ থাকবে।
মডেল মসজিদ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সে পাঠাগার, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র, পবিত্র কোরআন হেফজ বিভাগ, শিশুশিক্ষা, অতিথিশালা, পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, অটিজম কেন্দ্র, গণশিক্ষা কেন্দ্র ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থাকবে।
এছাড়া ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা এবং গাড়ি পার্কিং সুবিধা রাখা হয়েছে। মসজিদগুলোতে দ্বীনি দাওয়াত কার্যক্রম ও ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি মাদক, সন্ত্রাস, যৌতুক, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা রোধে সচেতনতা কার্যক্রমও পরিচালনা করা হবে।
পাঠাগারে প্রতিদিন ৩৪ হাজার পাঠক পবিত্র কোরআন ও ইসলামিক বই পড়তে পারবেন। ইসলামিক বিষয়ে গবেষণার সুযোগ থাকবে ৬ হাজার ৮০০ জনের। ৫৬ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে দোয়া ও তসবিহ পড়তে পারবেন। মসজিদগুলোতে প্রতি বছর ১৪ হাজার হাফেজ তৈরির ব্যবস্থা থাকবে। আরও থাকবে ইসলামিক নানা বিষয়সহ প্রতিবছর ১ লাখ ৬৮ হাজার শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা। ২ হাজার ২৪০ জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসন ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হবে প্রকল্পের আওতায়। কেন্দ্রগুলোতে পবিত্র হজ পালনের জন্য ডিজিটাল নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, একেকটি মসজিদ নির্মাণে জেলা শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ব্যয় হচ্ছে ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা। উপজেলা পর্যায়ে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং উপকূলীয় এলাকায় ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৮২ হাজার টাকা। উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নিচতলা ফাঁকা থাকবে।
সিরাজগঞ্জ মডেল মসজিদ পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক ফারুক আহমেদ বলেন, সিরাজগঞ্জ জেলায় ১০টি মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এগুলো চালু হলে এখান থেকে প্রদত্ত ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধে ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।