করোনাকালে সংসদ উপ-নির্বাচনের রেকর্ডের বছর

11
MANCHESTER, ENGLAND - AUGUST 08: Pakistan coach Misbah-ul-Haq looks on during Day Four of the 1st #RaiseTheBat Test Match between England and Pakistan at Emirates Old Trafford on August 08, 2020 in Manchester, England. (Photo by Gareth Copley/Getty Images for ECB)

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিদায়ী ২০২০ সালে দেশে জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনের রেকর্ড হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রমণের এ বছরে নির্বাচন কমিশনকে ১১টি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন করতে হয়েছে। এরমধ্যে ৯টির উপনির্বাচন হয়েছে করোনার ঝুঁকি নিয়েই। যেসব আসনে উপনির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে ১০টিতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট আসনের সংসদ সদস্য মারা যাওয়ায়। বাকি একটিতে সংসদ সদস্য পদত্যাগ করায় সেখানে উপনির্বাচন করতে হয়েছে। এই ১০ এমপি’র মধ্যে দুই জন মারা গেছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। বাকিরা বার্ধক্যজনিত বা রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সংসদ সচিবালয় ও নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট তথ্য যাচাই করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দেশে নিকট অতীতে একই বছরে এত উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনও রেকর্ড নেই। অবশ্য অতীতে যখন এক ব্যক্তির একইসঙ্গে পাঁচটি সংসদীয় আসনে নির্বাচন করার সুযোগ ছিল, ওই সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারা জাতীয় নির্বাচনে একাধিক আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। পরে তারা বিজয়ী হয়ে আইন অনুযায়ী একটি আসন রেখে দিয়ে অন্যগুলো ছেড়ে দিতেন। পরে সেখানে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো। এ কারণে নির্বাচনের পরপরই একইসঙ্গে বেশ কয়েকটি আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর বাংলাদেশ জাসদের সংসদ সদস্য মঈন উদ্দীন খান বাদল মারা যাওয়ায় শূন্য হওয়া চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি। গত বছর ২৭ ডিসেম্বর ইউনূস আলী সরকার মারা যাওয়ায় শূন্য হওয়া গাইবান্ধা-৩ আসনে উপনির্বাচন হয় ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি। আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি ইউনূস আলী সরকার মারা যাওয়ার পর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে পরপর তিন জন এমপি মারা যান। তাদের মধ্যে ৯ জানুয়ারি বাগেরহাট-৪ আসনের মো. মোজাম্মেল হোসেন, ১৮ জানুয়ারি বগুড়া-১ আসনের আবদুল মান্নান এবং ২১ জানুয়ারি যশোর-৬ আসনের ইসমাত আরা সাদেক মারা যান। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচন করার কারণে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস সংসদ সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করায় তার আসনটি ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর শূন্য হয়। নির্বাচন কমিশন একইসঙ্গে তফসিল দিয়ে ২০২০ সালের ২১ মার্চ বাগেরহাট-৪ ও ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচন সম্পন্ন করে। পাশাপাশি ২৯ মার্চ ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে যশোর-৬ ও বগুড়া-১ আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তবে করোনা সংক্রমণের কারণে শেষ সময়ে এসে নির্বাচন স্থগিত হয়। ২০২০ সালের ১৪ জুলাই এ দুটি আসনে ভোট হয়। এদিকে অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়া শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর আসন পাবনা-৪-এ উপনির্বাচন হয় ২৬ সেপ্টেম্বর, হাবিবুর রহমান মোল্লার ঢাকা-৫ আসনে উপনির্বাচন হয় ১৭ অক্টোবর ও সাহারা খাতুনের ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচন হয় ১২ নভেম্বর। করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী মোহাম্মদ নাসিমের সিরাজগঞ্জ-১ আসনে গত ১২ নভেম্বর ও ইসরাফিল আলমের নওগাঁ-৬ আসনে ১৭ অক্টোবর উপনির্বাচন হয়।
চলতি একাদশ সংসদের প্রথম বছরে (২০১৯ সালে) সংসদ সদস্যদের মধ্যে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আওয়ামী লীগের ইউনূস আলী সরকার এবং বাংলাদেশ জাসদের সংসদ সদস্য মঈন উদ্দীন খান বাদল মারা যান। ওই বছরে এরশাদের আসনে উপনির্বাচন হলেও বছরের শেষ দিকে মারা যাওয়ায় বাদল (৭ নভেম্বর) ও ইউনূস আলী সরকারের (২৭ ডিসেম্বর) আসনে উপনির্বাচন হয়েছে ২০২০ সালে। এদিকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গত বছর ৩ জানুয়ারি মারা যান। তবে এমপি হিসেবে শপথ নেওয়ার আগেই মারা যাওয়ায় তার আসনটিতে উপনির্বচন না হয়ে সাধারণ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনটি হয় গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি। এদিকে একাদশ সংসদে কোনও ব্যক্তি একাধিক আসনে নির্বাচিত না হওয়ায় কোনও আসন ছেড়ে দেওয়া বা উপনির্বাচনের প্রশ্ন আসেনি। অবশ্য বিএনপি থেকে নির্বাচিত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ না নেওয়ায় তার আসনটি আপনা-আপনি শূন্য হয়ে যায়। পরে ওই আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচনের সংখ্যা বেশি-কম তো কোনও বিষয় নয়। উপনির্বাচনের প্রয়োজন হলে তো করতেই হবে। মৃত্যুর ওপর তো কারও হাত নেই। কেউ মারা গেলে আসন শূন্য হবে। সেখানে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংবিধান অনুযায়ী আমাদের ভোট করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, গত দুই বছরে একাদশ সংসদের ১১ জন সংসদ সদস্য মারা গেছেন। এদের মধ্যে তিন জন মারা গেছেন ২০১৯ সালে এবং ২০২০ সালে ৮ জন। মৃত্যুবরণকারী এমপিদের মধ্যে এরশাদ ও বাদল ছাড়া সবাই আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য।
এ বছর পরপর চার জন এমপি মারা যাওয়ার পর ২১ জানুয়ারি সংসদে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘এটা কষ্টকর। এবারের নির্বাচনের পর অনেক সদস্যকে আমরা হারিয়েছি। জানি না, এবার আমাদের সংসদের কী রকম একটা দুর্ভাগ্য যে, পর পর চার জন সংসদ সদস্য মৃত্যুবরণ করলেন।’
পরে ১৪ জুন মোহাম্মদ নাসিম ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মুহম্মদ আবদুল্লাহর মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবে বক্তব্য দেওয়ার সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৪ জুন একই দিনে পরপর দু’জনের মৃত্যু খুবই কষ্টকর। আমাদের এই সংসদে বারবার শোক প্রস্তাব আনতে হচ্ছে।’
এদিকে দশম সংসদের ৫ বছরে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ তিন মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী ও একজন বিরোধীদলীয় হুইপ মিলে ১৬ জন এমপি মারা যান। তাদের মধ্যে ১৩ জন আওয়ামী লীগের। তিন জন জাতীয় পার্টির সদস্য। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মারা যান একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর। ফলে দশম সংসদে মৃত্যুজনিত কারণে ৫ বছরে ১৪টি আসনে উপনির্বাচন হয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেড়ে দেওয়া রংপুর-৬ আসনে উপনির্বাচন হয়। সেখানে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন মনোনয়ন পেয়ে জয়লাভ করেন। এছাড়া লতিফ সিদ্দিকী পদত্যাগ করায় ২০১৫ সালে টাঙ্গাইল-৫ আসনে উপনির্বাচন হয়।