বড়লেখায় এক বছরে ১১ জন খুন

18

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিদায় নিয়েছে ২০২০। বিদায়ী এ বছরজুড়ে সংঘটিত নানা অপরাধের ঘটনায় বেশ আলোচনা-সমালোচনায় ছিল মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা। এসব ঘটনা সাধারণ মানুষের মনে এখনও নাড়া দেয়। এর মধ্যে স্ত্রী-শ্বাশুড়িসহ চারজনকে নৃসংশভাবে হত্যার পর ঘাতকের আত্মহত্যার ঘটনায় উপজেলা জুড়ে তোলপাড় হয়েছিল। পৃথকস্থানে নৃসংশভাবে খুন হয়েছেন আরও ছয়জন। ঘটেছে ধর্ষণের ঘটনা। উদ্ধার হয়েছিল কয়েকটি লাশও, এরমধ্যে কয়েকজনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। বেশিরভাগ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকি ঘটনাগুলোর রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
জানা গেছে, গত ১৯ জানুয়ারি ভোরে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের পাল্লাথল চা-বাগানে পারিবারিক কলহের জের ধরে নির্মল কর্মকার তার স্ত্রী জলি বুনার্জিকে দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। এসময় জলিকে বাঁচাতে তাঁর মা জলি বুনার্জি ও পাশের ঘরের বসন্ত ভৌমিক এবং বন্তের মেয়ে শিউলী ভৌমিক এগিয়ে এলে নির্মল তাদেরও কুপিয়ে হত্যা করে। সবাইকে হত্যার পর ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘাতক নির্মল গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এই ঘটনায় আহত মৃত বসন্ত ভৌমিকের স্ত্রী কানন বালাও চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৭ জানুয়ারি সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়।
গত ১৯ মে নিখোঁজের পরদিন রহমানীয়া চা বাগানের একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে পুলিশ মৎস্য খামার মালিক সমছ উদ্দিনের জবাই করা লাশ উদ্ধার করে। তিনি গ্রামতলা গ্রামের আমির উদ্দিনের ছেলে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডে জড়িত ৫ আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ৩টি দা উদ্ধার করে।
গত ২১ মে রাতে উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের আরেঙ্গাবাদ গ্রামে দোকানের পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে প্রবাস ফেরত যুবক আজিম উদ্দিনের চুরিকাঘাতে এসএসসির ফলপ্রার্থী জাকারিয়া হোসেন নির্মমভাবে খুন হয়। ছেলে খুনের ঘটনায় সালাহ উদ্দিন ঘাতক আজিম উদ্দিনকে প্রধান আসামী করে থানায় মামলা করেন। সম্প্রতি মামলার প্রধান আসামি আজিম উদ্দিন আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।
গত ২৩ জুলাই উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নে জমি ক্রয় সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশী মাতাব উদ্দিন দায়ের কোপে আহত আব্দুল আহাদ (৩৫) রাতেই সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। নিহত আব্দুল আহাদ সুজাউল (হরিনগর) গ্রামের শফিক উদ্দিনের ছেলে। পরে পুলিশ ঘাতক বন্ধু মাতাব উদ্দিনকে গ্রেফতার করে।
গত ৩১ জুলাই উপজেলার আহমদপুর গ্রামের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার সাইফুর রহমানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর ঘাতকরা তার বাড়ির মেঝেতে তাকে শুইয়ে রাখে। ঘটনাটি আড়াল করতে সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হয় বলে ঘাতকরা প্রচার করে। রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়। অবশেষে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে হত্যার তথ্য উঠে আসে। এরপর প্রকৌশলী হত্যার অভিযোগে পুলিশ আহমদপুর গ্রামের আনছার আলীর ছেলে বাবলু আহমদ, জবলু হোসেন ও কামাল হোসেনকে গ্রেফতার করে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে উপজেলার বাউরিলখাল এলাকায় অস্থায়ী বসতঘরে দিনমজুর আমির উদ্দিন ও তার স্ত্রী বিলকিছ বেগমের ওপর স্থানীয় সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালায়। পাষন্ডরা বৃদ্ধ আমির উদ্দিনের মাথা, হাত ও পা তেথলে দেয়। কানের ভেতর সিক ঢুকিয়ে অপর কান দিয়ে বের করে। তাদের নির্যাতন মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। সিলেট ওসমানী মেডিকেলে ৭ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় নিহত আমির উদ্দিনের মেয়ে জেনেফা বেগম জেবার হত্যা মামলায় পুলিশ এজাহার নামীয় আসামি আব্দুল্লাহ (২৬) ও হোসেন আহমদকে (৩৫) গ্রেফতার করে।