বৃটিশ আমলের তৈরি সিলেট অঞ্চলের রেল পথ, যুগ-যুগ ধরে রেল চলাচল করলে ও প্রকৃত পক্ষে মেরামতের অভাবে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। ফলে চরম নিরাপত্তাহীনতায় যাত্রী সাধারণ চলাচল করতে হচ্ছে। রেলপথে দুর্ঘটনা ঘটলেও মেরামতের উদ্যোগ নামে মাত্র নেয়ায় দুর্ঘটনা ঠেকানো যাচ্ছে না।
এক কালে সিলেট থেকে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল জল পথ এবং রেলপথ, কিন্তু সড়ক পথ বলতে বেশ কোন ব্যবস্থা ছিল না। সিলেটের সাথে যোগাযোগের লক্ষ্যে বৃটিশ সরকারের আমলে রেল পথ নির্মাণের পর সড়ক পথে যোগাযোগ করতে সর্বপ্রথম সিলেট-কাছাড় তথা করিমগঞ্জের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য সিলেট-জকিগঞ্জ তথা করিমগঞ্জ ট্রাক রোড স্থাপন করা হয়। কিন্তু তৎকালীন সময়ে ভারত বর্ষে যোগাযোগ করতে রেল পথের সৃষ্টি হয়। সে সময়ে সিলেট-আখাউড়া, কুলাউড়া, লাতু-জুড়ী হয়ে মহিশাসন ভায়া করিমগঞ্জ হয়ে রেল পথে সারা ভারতের সাথে যোগাযোগ করা হতো। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্ত হয়ে পড়ায় শুধু সিলেটের রেল পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ঢাকার সাথে করার একমাত্র ব্যবস্থা ছিল। সিলেটের রেলপথের মধ্যে সিলেট-আখাউড়া, কুলাউড়া, লাতু-জুড়ী। এছাড়াও ছাতক পেপার মিল স্থাপনের পর সিলেট- ছাতক রেলপথ স্থাপন করা হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে পাক হানাদার বাহিনী মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পালিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে এ অঞ্চলের সড়ক অসংখ্য কালভাট, ছোট-বড় ব্রিজ, রেল লাইনের স্লিপার তুলে ফেলে এমনকি সারা সিলেট অঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
স্বাধীনতার দীর্ঘ অর্ধশতাধিক বছর অতিবাহিত হলেও শুধু জোড়াতালি দিয়ে রেল চলাচল করছে।
৭১’র পাক-হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার বাহিনী চেয়েছিল সর্বদিক দিয়ে বাঙালি জাতিকে পঙ্গু করে দেয়া এবং সম্পূর্ণ যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া। ফলে সিলেট অঞ্চলের রেল লাইনের ব্রিজ গুলো উড়িয়ে দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এ ব্রিজ গুলো সংস্কার করে রেল যোগাযোগ চালু করা হয়। সময়ে অসময়ে এগুলো সংস্কার কাজ করা হলেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত হওয়ায় মাঝে-মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটছে।
সম্প্রতি সিলেট-আখাউড়া রেলপথের ব্রিজ গুলো লক্কর-ঝক্কর ভাবে চলছিল। যে কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে, বিগত কয়েক দিনের মধ্যে ফেঞ্চুগঞ্জ, কুলাউড়া ও শ্রীমঙ্গলে রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে, এসব দুর্ঘটনায় রেল চলাচলে বিঘ্নতার সৃষ্টি হয়েছে। এসব রেল দুর্ঘটনায় যাত্রীরা চরম আতঙ্কে চলাচল করতে হয়।
যাত্রী সাধারণের আতঙ্ক দূরীকরণের লক্ষ্যে রেল পথের ব্রিজ ও রেল লাইনের শক্তিশালী মেরামত করা জরুরী।