ঘৃণ্য মানব পাচারে জড়িত বিদেশী এয়ারলাইন্স শীর্ষক সংবাদটি চমকে ওঠার মতো নিশ্চয়ই। সরষের মধ্যেই যদি ভূত থাকে তবে তা দিয়ে দৈত্য-দানব তাড়ানো অসম্ভব। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ কিছুদিন আগে লিবিয়ার মরুভূমিতে মানব পাচারকারী চক্রের হাতে নিহত ২৬ বাংলাদেশীর পাচারের কারণ অনুসন্ধানে নেমে প্রমাণ পেয়েছে বিষয়টি। গত মঙ্গলবার সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ও ইউরোপে মানব পাচারে জড়িত অন্তত দুটি বিদেশী এয়ারলাইন্সের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এই দুটি সংস্থায় কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদসহ গ্রেফতারের খবরও আছে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশও জারি হয়েছে, যাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। লিবিয়ায় যারা নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তারা সবাই ভিজিট ভিসায় ওয়ানওয়ে টিকিট কেটে গেছেন, যার সঙ্গে জড়িত বিদেশী এয়ারলাইন্স দুটি। উল্লেখ্য, দেশে-বিদেশে ব্যাপক সাড়া জাগানো লিবিয়ার হত্যাকাণ্ডটি নিয়ে এ পর্যন্ত ২৫টি মামলায় আসামি করা হয়েছে ২৯৯ জনকে। এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ১৭১ জনকে। এখনও দেশে-বিদেশে পলাতক রয়েছে অনেকেই। অধিকতর তদন্ত শেষে বিদেশী এয়ারলাইন্স দুটির নামও প্রকাশ করা হবে অচিরেই।
বৈশ্বিক করোনা মহামারীর মৃত্যুঝুঁকিসহ নানা সঙ্কট সত্ত্বেও ঘৃণ্য মানব পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য থামছে না কিছুতেই। কিছুদিন আগে ড্যান্সপার্টির আড়ালে তথাকথিত নৃত্যশিল্পী পাচারের এক সচিত্র প্রতিবেদন উঠে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইউএইর দুবাইয়ের নামী-দামী হোটেল সম্পর্কে। সেখানে তাদের ক্যাবারে নাচের কথা বলে নিয়ে মূলত বাধ্য করা হতো যৌনবৃত্তিতে। এই ঘটনায় সেদেশে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। পরে টনক নড়ে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। অভিযোগ পাওয়ার পর মানব পাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে গ্রেফতারে সক্ষম হয়েছে পুলিশ, যাদের মধ্যে রয়েছে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন পুরুষ নৃত্যশিল্পী। এবার ইউরোপের দেশ ইতালিতে পাচারের উদ্দেশ্যে কয়েক শ’ বাংলাদেশী যুবা ও কিশোরের সন্ধান পাওয়া গেছে বসনিয়া, ক্রোয়েশিয়া এবং স্লোভেনিয়া সীমান্তের গভীর জঙ্গলে। মানব পাচারকারী চক্রের নিকট ইউরোপে পাচারের এটি হয়ে উঠেছে নতুন রুট। গত দু’বছর ধরেই চলছে এই ধরনের অপরাধ ও অপকর্ম।
মানব পাচারকারীরা বিপদসঙ্কুল যেসব রুট ব্যবহার করে থাকে সেখানে কারও কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। আছে জীবনের সমূহ ঝুঁকিসহ পথে পথে আটকানো, জিম্মিদশা, মুক্তিপণ আদায়সহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম, নির্যাতন ইত্যাদি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তখন এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, মানব পাচারকারীদের কঠোর শাস্তি দেয়া না হলে এটা বন্ধ হবে না।
এদিকে অভিবাসী শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানসহ যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নিরাপদ অভিবাসন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এতে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা করলে ৫ বছরের জেল-জরিমানাসহ মানব পাচারের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হলে প্রবাসীদের দুর্ভোগ কমার পাশাপাশি নিরাপত্তা অনেকটা নিশ্চিত হবে বলে আশা করা যায়।