আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজার পরিবার ঘর পাবে জানুয়ারিতে

39

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সারাদেশ যখন করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) ছোবলে নাকাল, তখনই সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’র আঘাতে লন্ডভন্ড হয় দেশের উপকূলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জেলা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও গাছপালা। আম্ফানের সেই ক্ষতি এখনও পুষিয়ে উঠতে পারেননি ক্ষতিগ্রস্তরা। অনেকেই ঘরহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এসব গৃহহীন মানুষের জন্য এক হাজার ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী জানুয়ারির মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজার পরিবার দুই কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা ঘর পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহায়ন অনুদানের অর্থে মুজিববর্ষে এই এক হাজার ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২৫ জেলায় ঘরগুলো নির্মাণে ব্যয় নির্বাহের জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরে জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে জেলাভিত্তিক ক্রসড চেকের (অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেক) মাধ্যমে ১৭ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলা প্রশাসকরা ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাসমূহের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও মাত্রা বিবেচনায় উপজেলাভিত্তিক গৃহের সংখ্যা নির্ধারণ করে ক্রসড চেকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) অনুকূলে অর্থ প্রদান করবেন। নির্মাণ কাজ শেষের পর উপকারভোগীদের নামের তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রদত্ত সংযুক্ত ছক মোতাবেক সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পাঠানো হবে। এরপর ইউএনও ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ নীতিমালার আলোকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ঘর বানিয়ে দেবেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীনের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা ২০২০-এ অন্তর্ভুক্ত নকশা অনুযায়ী এসব ঘর নির্মাণ করতে হবে।
এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে অর্থপ্রাপ্তির পর তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে সমাপ্তি প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছে দিতে হবে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করবে। পিআইসির সদস্যরা গৃহ নির্মাণকালে প্রতিটি গৃহ সার্বক্ষণিকভাবে নিবিড় তদারকি ও পর্যবেক্ষণ করবেন এবং গৃহ নির্মাণের গুণগত মান নিশ্চিত করবেন।
যেসব জেলায় ঘর নির্মাণ হবে
এ প্রকল্পের আওতায় বাগেরহাটে ২৫টি, বরিশালে ২৫টি, ভোলায় ১০টি, গোপালগঞ্জে ৫০টি, মাদারীপুরে ৫টি, ঝালকাঠিতে ৫টি, খুলনায় ২৪৯টি, লক্ষ্মীপুরে ৬টি, নোয়াখালীতে ৫টি, পটুয়াখালীতে ১০টি, সাতক্ষীরায় ২১১টি, শরীয়তপুরে ৬টি, ঝিনাইদহে ১৬৩টি, চুয়াডাঙ্গায় ১৫টি, কুষ্টিয়ায় ১৫টি, মেহেরপুরে ১০টি, বগুড়ায় ১০টি, রংপুরে ৮টি, লালমনিরহাটে ৭টি, কুড়িগ্রামে ১টি, যশোরে ১৩৯টি, মানিকগঞ্জে ৫টি, ফরিদপুরে ৫টি, মাগুরায় ১০টি এবং রাজবাড়ীতে ৫টি ঘর নির্মাণ হবে।
এ বিষয়ে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘উদ্যোগটি নেয়া হয়েছে অল্প কিছুদিন আগে, বেশিদিন হয়নি। আমরা কাজ শুরু করেছি মাত্র। বিষয়টি আমরা সবাই অবজারভেশনে রাখছি, কোনো ধরনের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আমরা ডিসিকে টাকা দিয়েছি, তারা উপজেলাগুলোতে টাকা ভাগ করে দেবেন। যে উপজেলাগুলোতে বেশি ক্ষতি হয়েছে সেখানে ভাগ করে দেবেন। পরে কমিটি সিলেক্ট করে দেবে কারা কারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরে ইউএনওরা তাদের ঘর বানিয়ে দেবেন। আমরা আশা করছি, এ কাজ শেষ করতে তিন মাসও সময় লাগবে না। তবে কিছু কিছু জায়গায় বন্যা, কোথাও পানি নামেনি; এসব কারণে একটু সময় লাগতে পারে। আশা করি জানুয়ারির মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।’
এ প্রসঙ্গে খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ‘আমরা এখনও কাজ শুরু করিনি। তবে বরাদ্দ পেয়েছি। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে আমরা কাজ শুরু করব। ইউএনওদের মাধ্যমে এগুলো করা হচ্ছে। আমার মনে হয় জানুয়ারির মধ্যে শেষ করতে পারব।’
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা ইউএনওদের কাছে টাকা পুনর্বণ্টন করে দিয়েছি এবং যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের আগেই চিহ্নিত করা আছে, কাজ শুরু হয়ে যাবে। আমরা তিন মাসের মধ্যেই কাজটি শেষ করতে পারব। ডিসেম্বরের ১ তারিখে পুরো জেলাতেই কাজ শুরু করব। জানুয়ারির মধ্যে অবশ্যই ঘরগুলো হয়ে যাবে।’