কাজিরবাজার ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ইসরায়েলে দখলকৃত পশ্চিম তীরের একটি ইহুদি বসতি ভ্রমণ করেছেন। ঘটনাটিকে নজিরবিহীন বলছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। বিবিসি বলছে, মার্কিন কোনো শীর্ষ কর্মকর্তার এমন সফর এটাই প্রথম।
বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলের দখলকৃত এলাকায় ইহুদিদের বসবাস আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী নয়, এমন ঘোষণার এক বছরের মাথায় পাসাগোট নামক ইহুদি বসতিটি পরিদর্শনে যান পম্পেও। এরপর ইসরায়েল দখলকৃত আরেক এলাকা গোলান উপত্যকা ভ্রমণে যান তিনি। ইসরায়েল দখল করে নেওয়ার পর এটিই প্রথম কোনো শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তার গোলান সফর। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর এলাকা দুটি সফর করেন পম্পেও।
১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে সিরিয়ার গোলান উপত্যকা দখল করে নেয় ইসরায়েল। প্রায় ১ হাজার ২০০ বর্গকিলোমিটারের এই মালভূমিতে ইসরায়েলের ৩০টির বেশি বসতিতে ২০ হাজারের মতো ইহুদি বসবাস করছে-যা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। অন্যদিকে মালভূমির অপর প্রান্তে বসবাস করছে ২০ হাজারের মতো দ্রুজ আরব জনগোষ্ঠী-যারা ১৯৬৭ সালে যুদ্ধের সময় ওই এলাকা ছেড়ে যাননি, তাদের ওই অঞ্চলের আদি বাসিন্দা হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।
এর মধ্যে ইসরায়েল ১৯৮১ সালে গোলানে নিজেদের শাসন ও আইন বলবৎ করে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এর স্বীকৃতি দেয়নি। সিরিয়া ধারাবাহিকভাবে এই উপত্যকার ওপর নিজের সার্বভৌমত্ব ফেরত চেয়ে দাবি জানিয়ে আসছে।
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক থেকে ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে এই উপত্যকার অবস্থান। ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যকার অমীমাংসিত এই ভূমির ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা জুড়ে আছে অসামরিক অঞ্চল-যেখানে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দল নজরদারি করছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পম্পেওয়ের এই সফর ট্রাম্প প্রশাসনের বিদায়ের আগে বিদায়ী সফর। স্থানীয় সময় বুধবার ইসরায়েলে পৌঁছান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। জানুয়ারিতে ক্ষমতা ছাড়ার আগে এটাই হতে পারে তার শেষ ইসরায়েল সফর। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকালে নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।
সেখানে সাংবাদিকদের পম্পেও বলেন, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলিদের দখল নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এত দিন ভুল ধারণা নিয়ে বসেছিল। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র এমন এক ধারণা নিয়ে বসেছিল যেটি এই বিশেষ অঞ্চলের ইতিহাসকে স্বীকার করেনি। কিন্তু এখন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর যথাযথ উপায়ে, বৈধভাবে এসব অঞ্চলে ইসরায়েলিদের বসবাসের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য শক্ত অবস্থান নিয়েছে।
এরপর হেলিকপ্টারে চড়ে তিনি রামাল্লার পার্শ্ববর্তী ইহুদি বসতি পাসাগোট ভ্রমণে যান। এদিকে পম্পেওয়ের এ সফরের নিন্দা জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে ফিলিস্তিনিরা।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর (যেটি মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ নামেও পরিচিত) পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে অন্তত ১৪০টি স্থানে ইহুদিদের বসতি সম্প্রসারণ করে ইসরায়েল। বর্তমানে এসব এলাকায় ছয় লাখের বেশি ইহুদি বসবাস করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশির ভাগই আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এটিকে অবৈধ বলছে। যদিও ইসরায়েল বরাবরই এসব অস্বীকার করছে। তারা এসব অঞ্চল নিজেদের বলে জোর দাবি করে আসছে।