আমাদের দেশটি ছয় ঋতুর দেশ হলেও আবহাওয়া ও বৈশিক পরিবর্তনের ফলে দেশের ছয়টি ঋতুর মধ্যে পরিবর্তনের কোন মিল নেই। ফলে দেশের সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়তে হচ্ছে। প্রকৃতি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের অবহেলা আর তদারকির অভাবের খেসারত দিতে হচ্ছে দেশবাসীকে।
বাংলা বর্ষ অনুযায়ী ১২ মাসে ছয়টি ঋতুকে দু-মাস নিয়ে একটি কাল, ছয়টি কাল হিসাবে যুগের-পর যুগ গড়িয়ে চলেছে। এ ছয় ঋতুর মধ্যে বৈশাখ-জ্যৈষ্ট দু-মাস নিয়ে গঠিত গ্রীষ্মকাল, আষাঢ় -শ্রাবণ এ দু-মাস নিয়ে গঠিত বর্ষা কাল, ভাদ্র-আশ্বিন দু-মাস নিয়ে গঠিত শরৎ কাল, কার্তিক-অগ্রহায়ণ দু-মাস নিয়ে গঠিত হেমন্ত কাল, পৌষ-মাঘ দু-মাস নিয়ে গঠিত শীত কাল, ফাল্গুন-চৈত্র এ দু-মাস নিয়ে গঠিত বসন্ত কাল। কিন্তু বর্তমানে কোন ঋতু কোন সময়ে অতিক্রম করছে তা বলা বড়ই মুশকিল।
অনেকের মতে; দেশে ঋতুর পরিবর্তন লক্ষ্যণীয় হওয়ায়, প্রতিটি ঋতু যথাসময়ে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। গ্রীষ্মকালের যে প্রচন্ড তাপ পরিবর্তন হয়ে বর্ষা-শরৎ পেরিয়ে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ তথা হেমন্তকাল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। শীতকালের প্রচন্ড শীতের প্রভাব অনেক কমে যাওয়ায়, মাত্র কয়েক দিনের জন্য প্রচন্ড শীত অনুভব করা গেলে ও বেশী সময় গরম ও বৃষ্টির প্রভাব বেড়ে চলেছে। কোন কালের সাথে কোন কালের তা মারাত্মক গড়মিল দেখা দিয়েছে। কিছু কালের পূর্বের কাল সমূহের যে একটা মিল ছিল, তার কোন মিল এখণ পাওয়া যাচ্ছে না। ঋতুর কাল অনুসারে দেশে একেক সময়ের একেক ধরনের পণ্যে উৎপাদনের সমাহার এখন আর বিশেষ দেখা যায় না। দেশের এ ছয়টি ঋতু নিয়ে দেশ-বিখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, ছড়াকাররা হাজারো ধরনের কবিতা, সাহিত্যে, প্রবন্ধ রচনা করেছেন তার শেষ নেই। দেশের এ ঋতু পরিবর্তনে সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞমহলের মতে; দেশে অপরিকল্পিত ভাবে গাছ-পালা নিধন, পাহাড়-টিলা ধ্বংস করে, পরিবেশ বিনষ্টের কারণে আবহাওয়া পরিবর্তন হওয়ায় ঋতু প্রবাহের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তাই আমাদেরকে পরিবেশ রক্ষায় মনোনিবেশ হতে হবে। পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
দেশের মানুষ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওর, পাহাড়-টিলা, সব-ধরনের জলাভূমির রক্ষণাবেক্ষণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।