স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশী নির্যাতনে রায়হান উদ্দিন আহমদ হত্যার ঘটনায় আরেক পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। গত শুক্রবার রাতে কনষ্টেবল হারুন রশিদকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত হারুন কোতোয়ালী থানার আওতাধীন বন্দরবাজার পুলিশ ফাাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি বরখাস্ত রয়েছেন।
গতকাল শনিবার বেলা ৩টার দিকে পিবিআই এর তদন্ত কর্মকর্তা মুহিদুল ইসলাম কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে গ্রেফতারকৃত কনষ্টেবল হারুন রশিদকে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতে হাজির করে তার বিরুদ্ধে ৭ দিনে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। এ সময় আদালতের বিচার শারমিন খানম নীলা রিমান্ড শুনানী শেষে তার ৫ দিনে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে পিবিআই এ ঘটনায় ২ আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। আগের আসামী টিটু চন্দ্র দাস এখনও রিমান্ডে রয়েছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ অক্টোবর রবিবার ভোরে রায়হান উদ্দিন আহমদ (৩৩) নামে নগরীর আখালিয়া নেহারীপাড়ার এক যুবক নিহত হন। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে প্রচার করা হয়, ছিনতাইয়ের দায়ে নগরীর কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন রায়হান। তবে বিকেলে পরিবারের বক্তব্য পাওয়ার পর ঘটনা মোড় নিতে থাকে অন্যদিনে। পরিবার দাবি করে, মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে প্রাণ হারান রায়হান। ওই রাতেই পুলিশকে অভিযুক্ত করে কোতোয়ালি থানায় হেফাজতে মৃত্যু আইনে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। যার নং ২০ (১২-১০-২০২০)। পরদিন রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) শাহরিয়ার আল মামুনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সিলেট মহানগর পুলিশ। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে রায়হানকে ফাঁড়িতে এনে নির্যাতনের প্রাথমিক প্রমাণ পায় কমিটি। এই তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত এবং এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়। এ মামলায় ২০ অক্টোবর মঙ্গলবার পুলিশ কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে গ্রেফতার করে ৫দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই।
এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনমুখর হয়ে পড়ে সিলেট। সিলেট মহানগর পুলিশকে সৃষ্ট হয় তীব্র সমালোচনা। এই সমালোচনার মুখে গত বুধবার ২২ অক্টোবর মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে বদলি করা। আর এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত আকবর হোসেন ভূঁইয়া ১২ অক্টোবর থেকে পলাতক রয়েছেন। তদন্তে নেমে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতাও পায় তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি জানতে পারে রবিবার ভোর ৩টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে সুস্থ অবস্থায় রায়হান আহমদকে আনা হয় বন্দরবাজার ফাঁড়িতে। সেখানে ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বেই তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রায়হানকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সকাল ৭টার দিকে মারা যান তিনি। রায়হান নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়া এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের পুত্র। তিনি স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারি হিসেবে কাজ করতেন।