সিলেটের জাফলং, বিছনাকান্দি ও রাতারগুলসহ অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোর উন্নয়নে এবং পর্যটকদের নিকট স্পটগুলোকে আকর্ষণীয় করে তুলতে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত প্রস্তাবনা প্রেরণ করেছে সিলেটের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন সিলেট চেম্বার।
উল্লেখ্য যে, সিলেটের পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারের পক্ষ থেকে ৭ কোটি ২৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মোঃ মাহবুব আলী সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সিলেট চেম্বারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। চেম্বার সভাপতি আবু তাহের মোঃ শোয়েব কর্তৃক স্বাক্ষরিত প্রস্তাবনায় সিলেটের দৃষ্টিনন্দন স্থানগুলো নিয়ে পৃথক পৃথক প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-
বিছনাকান্দি : পাহাড় থেকে পাথরের বুক বয়ে চলা স্বচ্ছ জলধারার সৌন্দর্যমন্ডিত গোয়াইনঘাটের এক দৃষ্টিনন্দন স্থান হচ্ছে বিছনাকান্দি। হাজার হাজার পর্যটক এখানে ভিড় জমান। কিন্তু স্যানিটেশন, পোশাক পরিবর্তন, বসার ব্যবস্থা, গাড়ি পার্কিং, ট্যুরিস্ট পুলিশ, ট্যুরিস্ট গাইড কোন কিছুই নেই। নেই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের জন্য থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা। তাই সিলেটের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিছনাকান্দিতে স্যানিটেশন ও পোশাক পরিবর্তন কক্ষ এবং শিশু ও মহিলাদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিছনাকান্দি বিদেশী পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে নোয়াখালির হাতিয়া ও নিঝুমদ্বীপের মত সরকারী ব্যবস্থাপনায় রেস্তোরা, কটেজ ও পর্যটকদের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বীচবেডের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
রাতারগুল : রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন এবং বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। মিনি সুন্দরবন খ্যাত এই পর্যটন স্পটে অসংখ্য পর্যটকের ভিড় দেখা যায় কিন্তু এই পর্যটনকেন্দ্রে নেই পর্যটকদের কোন বসার ব্যবস্থা। যে কয়েকটি নৌকা রয়েছে সেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাছাড়া বনের মধ্যে ঘাট বাধাইয়ের ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকরা অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন। রাতারগুলের পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তার বিষয়টিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কোন অঞ্চল যতই পর্যটন সম্ভাবনাময় হোক না কেন সেখানে যদি নিরাপত্তার অভাব থাকে তাহলে কোন মানুষই সেই অঞ্চলে পর্যটনে যাবে না। তাই রাতারগুল পর্যটন স্পটে নিরাপত্তা আরো জোরদার করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে সরকারীভাবে ট্যুরিস্ট গাইড ও পর্যটন পুলিশ সেবা আরোও বৃদ্ধি করতে হবে। সম্প্রতি রাতাগুল জলাবনে পর্যটকদের যাতায়াত শুরু হলে ওয়াচ টাওয়ারে ওঠানামার ক্ষেত্রে সর্তকতার একটি নির্দেশনা দেয়া হয়। পরবর্তীতে পর্যটকরা বিধিনিষেধ না মানায় ওয়াচ টাওয়ারে ওঠানামা পুরোপুরি বন্ধ করা হয়। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা হিজল-করচ-বরুণা গাছের পাশাপাশি বেত, ইকরা ও শণজাতীয় গাছ রাতারগুলকে জলার বন হিসেবে অনন্য করেছে। এই অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকনে ওয়াচ টাওয়ার সংস্কার করার প্রস্তাব জানানো হয়েছে।
জাফলং: জাফলং পর্যটন কেন্দ্র যাতায়াতের ক্ষেত্রে সিলেট সদরের পরই রাস্তার বেহাল দশা পর্যটকগণকে বিমুখ করে তোলে। সম্প্রতি সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক পৃথক এসএমভিটি লেনসহ ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হয়েছে। এই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সিলেট চেম্বারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তাছাড়া জাফলং এর পিয়াইন নদীতে গোসল করতে নেমে অনেক সময় পর্যটকগণ মৃত্যুবরণ করেন। এক্ষেত্রে পিয়াইন নদীর যতটুকু পর্যটকদের জন্য নিরাপদ ততটুকু উন্মুক্ত রেখে বাকি অংশ নিরাপত্তাবেস্টনির মধ্যে রাখা ও এ স্থানে সর্বদা ট্যুরিস্ট পুলিশ নিয়োজিত রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তাছাড়া জাফলং এর অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, জাফলং পর্যটন স্পটে কৃত্রিম বিনোদনের ব্যবস্থা, মেডিকেল সেন্টার স্থাপন, স্যানিটেশন ও পোশাক পরিবর্তন কক্ষ এবং শিশু ও মহিলাদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাব জানানো হয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জাফলং এর সৌন্দর্য বর্ধনে পাথর উত্তোলনের নিষেধাজ্ঞা অব্যহত রাখা প্রয়োজন বলে প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও সিলেটের ট্যুরিস্ট স্পটগুলোর তথ্য, ছবি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা সহ যাবতীয় তথ্যাবলী পর্যটন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ওয়েবসাইট ও ফেইসবুক পেইজে প্রচার করা এবং প্রয়োজনে এ সংক্রান্ত একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করার প্রস্তাব জানানো হয়েছে। সিলেটের পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে এসব কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সিলেট চেম্বারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি