করোনার বহুল সংক্রমণে সবচেয়ে বিপন্ন অবস্থার শিকার জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষা ব্যবস্থা। ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার যে দুঃসময় শুরু হয়, সেটা আজও চলমান। ফলে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে শিক্ষাকার্যক্রম। শ্রেণী পাঠ থেকে শুরু করে কোন পরীক্ষাই এ পর্যন্ত শুরু করা সম্ভব হয়নি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। অনলাইনভিত্তিক পাঠ্যক্রম শুরু করা হলেও শেষ অবধি তা কতখানি সফল হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় দেয়া হয়েছে অটো প্রমোশন। সেখানে বিবেচনায় আনা হয়েছে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল। সেটাও বিভিন্ন প্রশ্নের অবতারণা করেছে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে এসএসসিতে যারা মানসম্মত রেজাল্ট করেছে, এইচএসসিতেও কি তারা সবাই তেমন ফল করতে পারত? তার পরেও পরিস্থিতি বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি কার্যক্রম, যা বিশ্ববিদ্যালয় অভিগমনের গুরুত্বপূর্ণ যাত্রা তা নিয়ে জটিলতা। শুধু ভর্তি পরীক্ষায় বসা নয়, সেখানে বসতে গেলে যোগ্য বিবেচনায় আসতে হয় এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে। বিশেষ করে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলই নির্ণায়কের ভূমিকায় কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনলাইনের মাধ্যমে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করবে। অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে প্রথমেই এসে যায় বিদ্যুত বিভ্রাটসহ তথ্যপ্রযুক্তি সেবার মানে অপর্যাপ্ততা। বিশেষ করে গ্রামগঞ্জে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রযুক্তিগত পরিষেবার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। এখান থেকে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী মনন যোগ্যতায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে সুযোগ পেয়ে যাওয়ার নজিরও কম নেই। তার ওপর পরীক্ষায় দুর্নীতির ব্যাপারটিও আমলে নিচ্ছেন অনেকেই। তবে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা আশ্বস্ত করেছেন পরীক্ষা সংক্রান্ত এ্যাপসটি এমনভাবে সম্প্রসারিত করা হবে যাতে নকলের সুযোগ থাকবে না। এ্যাপসটি অন করার সঙ্গে পুরো ব্যাপারটি নজরদারি করার চাবিকাঠিও কর্তৃপক্ষের কাছেই থাকবে। ফলে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীরা হলের সার্বিক বিধিনিষেধকে মেনেই তাদের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে পারবে। তবে বিদ্যুত বিভ্রাটের জন্য মাত্র ১০ মিনিটও যদি পরীক্ষার্থীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় তাহলে সে মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি হবে। সেখানে সবচেয়ে বিপাকে পড়তে পারে গ্রামগঞ্জের মেধাবী শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও রয়েছে আসনের তুলনায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ার অন্য মাত্রার সঙ্কট। সাড়ে ১৩ লাখের ওপরে এইচএসসি পরীক্ষার্থীর বিপরীতে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। সব মিলিয়ে ভর্তি পরীক্ষা যাতে অনিশ্চয়তার কবলে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখা ইডিজিসির সচেতন দায়বদ্ধতা। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এমসিকিউতে পরীক্ষা নিলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ কলেজসমূহ পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তি করবে। সেখানে পূর্ববর্তী বোর্ড পরীক্ষার ফল বিবেচনায় থাকবে। দেখা যাক জাতির আগামীর ভবিষ্যতের উচ্চ শিক্ষা কাযক্রম কোন পথে এগোয়।