বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
প্রশাসনের নিষেধ অমান্য করে রাতের আঁধারে যাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালু বিক্রি করছে নদীর দু’তীরবর্তী একদল অসাধু বালু খেকো চক্র। চক্রের লোকজন উপজেলার ঘাঘটিয়া, ঘাঘরা, লাউড়েড় গড়, বিন্নাকুলী, মুদেরগাঁও, মিয়ারচর ও সোহালা গ্রামের কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি।
বালুখেকো চক্রের সদস্যরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় সাধারণ লোকজন তাদের নাম জানলেও বলতে সাহসে পাচ্ছেন না। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে প্রশাসন রাতের আঁধারে অভিযান চালিয়ে দু’একটি নৌকা ও নৌকার মাঝিদের আটক করলেও অধরা থেকে যাচ্ছে মূল হোতারা। কারণ, মূল হোতাদের দাঁড়িয়ে থেকে নদীর তীর কাটতে হয় না। নৌকার মাঝি ও শ্রমিকরাই তাদের হয়ে কাজ করে। মূল হোতাদের কাজ হলো প্রশাসন নৌকা কিংবা মাঝিদের আটক করলে সে বিষয়টি দেখা। ফলে যাদুকাটা নদীতে দু’একদিন বালু পাথর চুরি বন্ধ থাকলে পরবর্তীতে তারা আবারও কোন না কোন ভাবে বালু পাথর চুরিতে সক্রিয় হয়ে উঠে। মাঝি শ্রমিকরা কোন কাজ না পেয়ে কিছু রোজগারের আশায় নদীর তীর কাটতে সম্মতি হয়ে যায় প্রভাবশালীদের কথায়।
গত সোমবার দিনভর যাদুকাটা নদীর তীরবর্তী এলাকায় তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন মাইকিং করে যাদুকাটা নদীর বালু পাথর উত্তোলন ও পরিহবন বন্ধে আইন অমান্য করলে অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রচার করেন।
এর মধ্যেও রাতের আঁধারে নদীর ঘাঘটিয়া বড়টেক এলাকা ও নদীর পূর্ব পাশে জামালের টেক এলাকায় বেশ কয়েকটি নৌকা নদীর তীর কেটে বালু নিয়ে আসায় জন্য যায়। গোপন সংবাদ পেয়ে উপজেলা প্রশাসন রাতেই যাদুকাটা নদীতে গিয়ে অভিযান চালিয়ে একটি ছোট স্টিল বডি নৌকা আটক করেন। সে সময় আটককৃত নৌকার মাঝি ও অন্য নৌকাগুলো পালিয়ে যায়।
জানা যায়, এ চক্রের সাথে জড়িতরা উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসনের সোর্সদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করেই রাতের আঁধারে নদীতে বালু কাটতে যায়। সোর্সরা প্রশাসনের গতি বিধি লক্ষ্য রেখে তাদের বলে দেয়। তাই অনেক ক্ষেত্রেই প্রশাসন ঘটনা স্থলে গিয়ে তাদের পান না। উপজেলা সদর থেকে যাদুকটা নদীর বড়টেক পর্যন্ত নদী পথে যেতে যেতে সময় লাগে ৩০ মিনিট। আর এ সময়ের মধ্যে তারা পালিয়ে যায়।
ঘাগটিয়া, বড়টেক, গড়কাটি, ঘাগড়া, রাজারগাঁও, লাউড়েরগড়, বিন্নাকুলি, মাহারাম, মানিগাঁও, পাঠানপাড়া, কুনাটছড়া, পিরিজিপুর সহ অর্ধশতাধিক গ্রামের তীর কেটে নদী তীর কেটে বালু-উত্তোলন করায় গ্রামগুলো নদী ভাঙ্গনের মুখে পড়ে ক্রমান্বয়ে বিলীন হচ্ছে।
সেই সাথে বিলীন হচ্ছে নদী তীরবর্তী হাজার হাজার একর ফসলি জমি। ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে, লাউড়ের গড়ের একটি বিশাল গোচরণ ভূমি, কবরস্থান, নোয়াহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, অদ্বৈত প্রভূর আশ্রম, আনোয়ারপুর বাজার, বিন্নাকুলি বাজার, ফাজিলপুর বাজার।
উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগড়া গ্রামের কামাল মিয়া বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বালুখেকোরা যাদুকাটা নদীর ঘাগড়া ও গড়কাটির, ঘাঘটিয়া বড়টেক থেকে রাতের আঁধারে নদীর তীর কেটে বালু বিক্রি করছে।
উপজেলার বালুজুরি ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বাবুল মিয়া বলেন, যাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলনের ফলে নদী তীরবর্তী অনেক গ্রাম, বিদ্যালয় ও বাজার ভাঙ্গনের মুখে পড়ছে।
বাদাঘাট ইউনয়িন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, রাতের আঁধারে তীর কেটে বালু বিক্রির বিষয়ে আমি তাহিরপুর থানা অফিসার ইনচার্জকে অবহিত করেছি। সরকারী ভাবে বন্ধের নির্দেশ রয়েছে, যারা আইন অমান্য করে রাতের আঁধারে বালু বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাই।
তাহিরপুর থানা অফিসার ইনচার্জ আব্দুল লতিফ তরফদার বলেন, আমরা গত রাতেও একটি নৌকা আটক করেছি, আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমরা অভিযানে যাই। কিন্তু অভিযানে গিয়ে ঘটনাস্থলে তাদের পাই না। কিভাবে যে তারা খবর পায় তা আমরা বুঝতে পারি না। এ ব্যাপারে আমরা আরো কঠোর হয়ে অভিযান চালাবো।
স্থানীয়দের দাবী যাদুকাটা নদীর দু’তীর রক্ষায় ও তীরকাটা ঠেকাতে বিজিবিকে সম্পৃক্ত করলে হয়তো তীর কাটা কিছুটা কমবে। অন্যথায় নদীতে নৌ পুলিশ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দাবীও জানান স্থানীয় লোকজন।