কাজিরবাজার ডেস্ক :
“এসেছে কান্নার দিন, কাঁদো বাঙালি, কাঁদো। জানি, দীর্ঘদিন কান্নার অধিকারহীন ছিলে তুমি, যে ভাগ্যাহত বাংলার মানুষ আমি জানি, একুশ বছর তুমি কাঁদতে পারো নি। আজ কাঁদো। আজ প্রাণ ভরে কাঁদো, এসেছে কান্নার দিন, দীর্ঘ দুই দশকের শোকের ঋণ আজ শোধ করো অনন্ত ক্রন্দনে…।” কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর ‘আগস্ট, শোকের মাস, কাঁদো’ কবিতায় এভাবেই শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
কাঁদো, বাঙালি কাঁদো। সত্যিই আজ যে কাঁদারই দিন। আজ যে সেই ভয়াল-বীভৎস ১৫ আগষ্ট। সেদিন বাতাস কেঁদেছিল। শ্রাবণের বৃষ্টি নয়, আকাশের চোখে ছিল জল। গাছের পাতারা শোকে সেদিন ঝরেছে অবিরল। এসেছিল সেই ভয়াবহ দিন! চারদিকে ঘাতকের উদ্ধত সঙ্গিন। মুছে দিতে চেয়েছিল রক্তের চিহ্নসহ জনকের লাশ। ভয়ার্ত বাংলায় ছিল ঘরে ঘরে চাপা দীর্ঘশ্বাস…সেই শোক জেগে আছে রক্তরাঙ্গা ওই পতাকায়, সেই শোক অনির্বাণ এখনও বাংলায়। নদীর স্রোতের মতো চির বহমান কাল থেকে কালান্তরে জ্বলবে এ শোকের আগুন।
আজ সেই অন্তিম শোকার্দ্র বাণী পাঠের দিন। আজ রক্তঝরা ১৫ আগস্ট। বেদনাবিধুর ও কলঙ্কের কালিমায় কলুষিত বিভীষিকাময় ইতিহাসের এক ভয়ঙ্কর দিন। বিভিন্ন কবির অসংখ্য কবিতার পঙক্তিতে উঠে আসা সেই ধন্য পুরুষ স্বাধীন বাংলার স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী। বাংলাদেশ ও বাঙালির জন্য গভীর মর্মস্পর্শী শোকের দিন, জাতীয় শোক দিবস। কলঙ্কমুক্ত বাঙালি জাতি আজ গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় তাঁর শ্রেষ্ঠ সন্তানকে স্মরণ করবে।
শোকের দিবসে আজ সারাদেশের পথে-প্রান্তরে লাখো-কোটি কৃতজ্ঞ বাঙালির কণ্ঠে ধ্বনিত হবে অন্নদাশঙ্কর রায়ের সেই বিখ্যাত পঙ্ক্তিমালা- “যতকাল রবে পদ্মা যমুনা/ গৌরী মেঘনা বহমান/ ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।”
কর্মসূচী : জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে দেশব্যাপী আজ পালিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস। আজ সরকারী ছুটির দিন। আজ সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারী ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। দিনের শুরুতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থানে গিয়ে ১৫ আগস্টে শহীদ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্য ও অন্য শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর মাজারে ফাতেহা পাঠ এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। দুটি স্থানেই তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল বঙ্গবন্ধুর প্রতি গার্ড অব অনার প্রদান করবেন। এরপর মসজিদ প্রাঙ্গণে মিলাদ মাহফিলে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা, জাতীয় শোক দিবসের সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ কবিতা পাঠ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, হামদ ও নাত প্রতিযোগিতা ও দোয়ার আয়োজন করবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে- ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সারাদেশের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ছয়টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল, দেশের সকল ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় মিলাদ মাহফিল, মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা, দুস্থ ও অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ এবং বাদ আছর বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশব্যাপী অজস্র রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচীর মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতাকে শ্রদ্ধা জানাবেন। বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে বিশেষ সংখ্যা। রেডিও-টেলিভিশনসহ নানা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় জাতির জনককে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রচারিত হচ্ছে নানা অনুষ্ঠান। আজ ১৫ আগস্টে সারাদেশের ৭১ হাজার ১৯টি স্থানে আলোচনা সভা, কোরানখানি ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিশু একাডেমি এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর জাতীয় শোক দিবস ও বঙ্গবন্ধুর জীবনী ভিত্তিক বক্তৃতার আয়োজন করেছে। অফিসার্স ক্লাব চারদিনব্যাপী বইমেলাসহ বিস্তারিত কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।