রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জরুরী

4

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা, করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্যও সরকার সদা তৎপর। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন থেকে আশ্রিত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মিয়ানমারে নিরাপদ ও সম্মানজনক পুনর্বাসনের বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন এখন প্রায় মৌনতা অবলম্বন করছে বলেই প্রতীয়মান হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে জাতিসংঘের বাংলাদেশের মিশনে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সভায় রোহিঙ্গা সমস্যার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এর দ্রুত সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বানও জানিয়েছিলেন। জাতিসংঘের এক্ষেত্রে ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে, যা এখনও দৃশ্যমান নয়। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি দু’দফা বিবৃতি দিয়েছে। শেষোক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ও নিরাপদে মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশকে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর রোহিঙ্গা ঢলের প্রভাব কমাতেও বিশ্বব্যাংক সহায়তা করছে।
বাংলাদেশ সরকারের অগ্রাধিকার ইস্যু হচ্ছে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন। আগেই সরকার সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, রোহিঙ্গাদের আত্তীকরণের কোন সুযোগ নেই। তাদের নিজের দেশেই ফিরে যেতে হবে। বাংলাদেশ মনে করে রোহিঙ্গাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য একটি মাত্র পথ এবং তা হচ্ছে তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া।
মিয়ানমার থেকে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে আসা সংখ্যালঘু এই মুসলমান জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশকে সহায়তায় বিশ্বব্যাংক কাজ করছে, এটি সত্য। আর শরণার্থীদের রূপরেখার যে পর্যালোচনা, সেটি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে হয়েছে। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনা বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে দেশে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। সে কারণে বিশ্বে তিনি মাদার অব হিউম্যানিটি অভিধায়ও ভূষিত হয়েছেন।
বাস্তবে রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য বহুমুখী বিষফোঁড়া হয়ে উঠছে ক্রমশ। স্বদেশ থেকে বিতাড়িত ভাগ্যবিড়ম্বিত আশ্রয় প্রার্থীরা পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই এক প্রধান সমস্যা। টেকনাফ-কক্সবাজার উপকূলবর্তী বাংলাদেশে দীর্ঘদিন থেকে আশ্রিত রোহিঙ্গারা নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে বলেও প্রমাণিত। রোহিঙ্গা শিবিরগুলো প্রাচীরবেষ্টিত ও সুরক্ষিত নয় বলে সীমিত পুলিশী নজরদারির সুবাদে তারা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের সর্বত্র। শিশু চুরি, ইয়াবা পাচারসহ জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে অথবা জাল করে পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। সেখানেও নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে রোহিঙ্গা বিশেষ করে তরুণদের জঙ্গি ও সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। সে অবস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আরও জরুরী উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে।