হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী :
শামসুল উলামা আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ:) এর অন্যতম খলিফা, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ ও বহু গ্রন্থ প্রণেতা, উস্তাদুল উলামা ওয়াল মুহাদ্দিসীন, পীরে কামেল শায়খুল হাদীস মুফতীয়ে আজম আল্লামা মুফতী মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী ছাহেব কিবলাহ (রহ:) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রিয় পাঠকের কাছে আমি এক নগণ্য সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। মহান আল্লাহ তায়ালা যেন আমাকে তাওফিক দান করেন আল্লাহুম্মা আমিন।
জন্ম : ১৯২৯ সালের ২ ফেব্র“য়ারী সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার থানার অন্তর্গত এবং দুবাগ ইউনিয়নের দুবাগ গ্রামে শায়খুল হাদীস মুফতীয়ে আজম আল্লামা মুফতী মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী ছাহেব কিবলাহ (রহ:)র জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আফতাব আলী চৌধুরী।
মৃত্যু : আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ ও বহু গ্রন্থ প্রণেতা, উস্তাদুল উলামা ওয়াল মুহাদ্দিসীন, পীরে কামেল আল্লামা মুফতী মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী ছাহেব কিবলাহ (রহ:) ১০ জুলাই রোজ শুক্রবার জুম্মার পূর্বে বার্ধক্যজনিত রোগে লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯১ বছর বয়সে মাওলায়ে হাকীকির ডাকে সাড়া দিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। যুক্তরাজ্যে তিনি লেস্টারের ছাহেব হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।
বিলাতে ইসলাম প্রচারকারী এ মহান সাধকের ইন্তেকালের শোকাবহ খবরে দেশে-বিদেশে তাঁর অসংখ্য ভক্ত-অনুরক্তদের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। আমরা তাঁর রূহের মাগফিরাত ও বেহেশতে উচ্চ আসন কামনা করি এবং তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। মুসলিম উম্মার এ কঠিন দুঃসময়ে আল্লামা দুবাগী সাহেবের দুনিয়া ছেড়ে না ফেরার স্থানে চলে যাওয়া অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক খবর।
মৃত্যুকালে স্ত্রী, ৩ ছেলে, ১ মেয়ে, নাতী-নাতনী, হাজার হাজার আলীমগণ, মুরিদান ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর বড় ছেলে আল্লামা জিল্লুর রহমান চৌধুরী লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী ব্রিকলেন জামে মসজিদের খতীব। মেঝো ছেলে মাওলানা ওলিউর রহমান চৌধুরী নিউক্রস মসজিদের খতিব। ছোট ছেলে মাওলানা ক্বারী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ও ইসলাম প্রচারে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
শিক্ষা জীবন : শায়খুল হাদীস মুফতীয়ে আজম আল্লামা মুফতী মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী ছাহেব কিবলাহ (রহ:)র প্রাথমিক শিক্ষা হয় বিশুদ্ধভাবে পবিত্র কোরআন শরীফের শিক্ষার মাধ্যমে। অতঃপর চার বছর ব্যাপী মক্কা মোয়াজ্জামায় অবস্থানকারী পঞ্চখন্ড কোনা গ্রাম নিবাসী হযরত কারী বশির উদ্দীন ছাহেব (রহ:) এর কারিয়ানা মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং তাঁর কাছ থেকে বিখ্যাত সাত কেরাতের সনদ লাভ করেন। এরপর তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে নিজ গ্রামের মাদ্রাসায় কেরাত শিক্ষা শুরু করেন।
শায়খুল হাদীস মুফতীয়ে আজম আল্লামা মুফতী মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী ছাহেব কিবলাহ (রহ:) ছিলেন অসাধারণ মেধাবী এবং তাঁর কন্ঠস্বর ছিল সুমধুর। তাঁর তেলাওয়াত ও আযান শুনে শ্রোতারা মুগ্ধ ও মোহিত হতো। তাঁর বদৌলতে হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা কোরআন শরীফ ও তাজবীদ সহ শিক্ষা করে নির্ভরযোগ্য কারী হয়েছেন এবং অসংখ্য লোক শুদ্ধ করে কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা শিখেছেন। এরপর ইলমে কেরাতের সর্বোচ্চ শিক্ষালাভ করেন। তিনি ৬ থেকে ১০ বছরের এ কোর্সটি মাত্র ৩ বছরে শেষ করেন।
ইলমে কেরাত শিক্ষাকালে আল্লামা মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী প্রচলিত মাদ্রাসা শিক্ষার প্রাথমিক জামাতগুলোও একই সাথে অতিক্রম করতে থাকেন। খুবই কৃত্বিতের স্বাক্ষর রাখেন এবং কোনা গ্রামে আলিয়া মাদ্রাসা হতে তিনি আলিম পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার পর ঐতিহ্যবাহী গাছবাড়ী জামেউল উলুম আলিয়া মাদ্রাসা হতে আলিম পরীক্ষায় রেকর্ড সংখ্যক নম্বর পেয়ে প্রথম বিভাগে প্রথম হন। পরবর্তী পরীক্ষাগুলোতেও তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ছিল সর্বোচ্চ। তিনি আরবী, ফারসি এবং উর্দু ভাষায় যেমন ছিলেন পারদর্শি, তেমনি তার এসব ভাষায় হস্তলিপিও ছিল অতি সুন্দর ও চমৎকার। তিনি গাছবাড়ি আলিয়া মাদ্রাসায় দীর্ঘ ৮ বছর অধ্যয়ন করেন। এশিয়া উপমহাদেশের বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দিস পীরে কামিল আল্লামা মুশাহিদ উদ্দিন বায়ুম পুরী (রহ:) এবং বিশ্বনন্দীত আলেমে দ্বিন শামসুল উলামা আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ:) ও ছিলেন তাঁর ওস্তাদ। তাঁরা তাঁকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং তাদের বিভিন্ন জনসভায় নিয়ে যেতেন এবং তাঁকে দিয়েই কোরআন তেলাওয়াত করাতেন। তিনি কামেলমুহাদ্দিস সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা হতে কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন।
কর্ম জীবন : আল্লামা মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী শিক্ষা সমাপ্ত করার পর শিক্ষকতার পবিত্র পেশায় নিয়োজিত হন এবং সিলেটের বিভিন্ন মাদ্রাসায় অধ্যাপনা শুরু করেন। বিভিন্ন আলিয়া মাদ্রাসায় মুহাদ্দিস ও মুফতী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশের হাজার হাজার ছাত্র তাঁর নিকট বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন। সিলেটের বিভিন্ন মাদ্রাসায় তাঁর অধ্যাপনা জীবন প্রায় ১৬/১৭ বছর। ১৯৬৭ সালে প্রথম তিনি পবিত্র হজ্ব উপলক্ষে হারামাইন শরীফাইন জিয়ারত করেন। সিলেটে ইসলামী শিক্ষার প্রসার এবং বিশুদ্ধ কেরাত শিক্ষাদানে তাঁর ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লামা মুফতী মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী বিলাতের (লন্ডন) গমনের কাহিনীও খুব তাৎপর্যপূর্ণ। তখনকার দিনে বৃটেনের লেষ্টারে বাংলাদেশী লোকের কোন স্মৃতি নিদর্শন ছিল না। তাদের স্বতন্ত্র কোন মসজিদও ছিল না। সুতরাং ইংল্যান্ডবাসীদের প্রয়োজনের তাগিদে ১৯৭৮ সালের ১জানুয়ারী তিনি লেষ্টার শহরে গমন করেন।
কথিত আছে যে, সেখানে অবস্থানকারী সিলেটের মুসলমানগণ ইসলাম ধর্মের প্রতি বিশেষ অনুরাগী হওয়ায় সেখানে কোন মসজিদ না থাকায় দুশ্চিন্তায় ভোগছিলেন এবং ইসলামের রীতিনীতি তথা অনুশাসন ও ইসলামি শিক্ষা-দীক্ষার অভাব অনুভব করায় তাদের একান্ত ইচ্ছা ছিল। কোন ধর্মীয় আলেম যদি তাদের মধ্যে থাকতেন তাহলে তাদের বিশেষ উপকার হতো। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লামা দুবাগী সাহেবের ভক্ত -অনুরক্ত ছিলেন এবং তাকে ভালোভাবে চিনতেন, তাঁর কাছে তারা সংবাদ প্রেরণ করেন কিংবা পত্র লিখে তাঁকে লন্ডনে আসার জন্য অনুরোধ জানান। আল্লাম মুজাহিদ সাহেব এ আহবানে সাড়া দিয়ে সেখানে যাওয়ার জন্য মনস্থ করেন এবং প্রস্তুতি গ্রহন করে সেখানে চলে যান।
তিনি ব্রিটেনের লেষ্টার শহরে গমন করেন, সেখানে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশী মুসলমানগণ দারুনভাবে আনন্দিত হন এবং তাকে সাদরে গ্রহণ করেন। কেননা তাঁর যোগ্যতা, দক্ষতা, প্রতিভা এবং ওয়াজ-বয়ান সর্ম্পকে তারা প্রথম থেকেই অবহিত ছিলেন এবং তাঁর অবস্থানের জন্য যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেন। তিনি বাংলাদেশী মুসলমানগণকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতে থাকেন। ফলে প্রথমেই সেখানে মসজিদ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করার পরিকলপনা গ্রহণ করেন। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সকলের সাহায্য সহযোগীতায় লেষ্টারে প্রথম একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি ইমাম হিসেবে নামাজ পড়ানো শুরু করেন। এ মসজিদের প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু থেকে পূর্ণতা লাভ করার পর্যন্ত আল্লামা দুবাগী সাহেবকে কঠোর-অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছিল। প্রায় সভা সমাবেশের শেষভাগে মসজিদের উন্নতিকল্পে তিনি উপস্থিত জনতার নিকট মুক্তহস্তে দান করার জন্য চাঁদার ওয়াজ করতেন। তাতে হাজার হাজার পাউন্ড সংগ্রহ হতো। তাছাড়া তিনি নিজে একজন ইমাম হওয়া সত্ত্বেও স্বীয় শহর ছাড়াও বিলাতের বিভিন্ন শহরে গিয়ে লোকের দরজায় গিয়ে উপস্থিত হতেন এবং চাঁদা সংগ্রহ করতেন। মসজিদ প্রতিষ্ঠা লগ্ন হতে এই মসজিদেই তিনি মাদ্রাসা শুরু করেছেন। বহু ছাত্র-ছাত্রী তাঁর নিকট অধ্যয়ন করে সুযোগ্য কারী হয়েছেন।
শামসুল উলামা আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ:)’র স্নেহভাজন ব্যক্তি বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ দানবীর আলহাজ্ব বশির আহমদ লন্ডনী সাহেব বলেন, আল্লামা মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী ছাহেব (রহ:) দুবাগী জনসেবামূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৮০ সালে তিনি লেষ্টার শহরে সর্বপ্রথম ‘আঞ্জুমান আল-ইসলাহ’ সংগঠনের বুনিয়াদ স্থাপন করেন। তিনি আরো কয়েকটি সংগঠনের সভাপতি ও উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি বিলাতে গমনের পর থেকে মুফতী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। তরীকত পন্থীদের তালিমের জন্য তিনি বিলেতে বিভিন্ন শহরে খানকাহ স্থাপনের ব্যবস্থা করেন। একই সাথে তিনি লেখনীর মাধ্যমেও তা অব্যহত রাখেন এবং মাছআলা মাছাইল সমূহ লিফলেট আকারে জনগণের কাছে তুলে ধরেন। এ সম্পর্কে তাঁর আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে তিনি সুন্নী মুসলমান ভাই-বোনদেরকে ভ্রান্ত মতবাদ হতে নিরাপদ করার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করেন। তাছাড়া মুসলিম পর্ব -দিবসগুলো যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদার সাথে উদযাপনে উৎসাহিত করার পাশাপাশি সেগুলোর ফযীলত তাৎপর্য লিফলেট আকারে সর্বত্র ছড়িয়ে দেন। বিলাতে তাঁর এরূপ কর্ম-তৎপরতার সূদুরপ্রসারী প্রভাব দেখা দেয়।
হযরত দুবাগী ছাহেব (রহ:) আধ্যাত্মিক জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। দ্বীনি বিষয়ের একজন সুবক্তা, মুনাজিরে আজম, শায়খুল হাদীস এবং মুফতীয়ে আজম হিসেবে তাঁর বিশাল পরিচিতি ছিল। তাকওয়া ও পরহেজগারী সহ বহুগুণের অধিকারী বিশিষ্ট বুযুর্গ ব্যক্তিত্ব। তিনি মাসলা-মাসায়েল সম্পর্কে বিস্মিত হবার মত প্রগাঢ় জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। যে কোন কঠিন মাসলায় তাঁর দালিলিক সমাধান সর্বদলীয় ওলামায়ে কেরামের কাছে ঐক্যমতে গ্রহণযোগ্য ছিল। বিভিন্ন শহর থেকে ইমাম ও খতীবগণ তাঁর খেদমতে হাজির হয়ে জঠিল মাসালাগুলোর সমাধান জানতে চাইতেন। নিয়মিত তিনি কোরআন, হাদীস ও কিতাব চর্চা করতেন। দেশে বিদেশে সমকালীন অসংখ্য আলেমের ওস্তাদ। তিনি অসংথ্য দেশ সফর করেছেন। আরবী, উর্দু ও ফার্সি ভাষায় তাঁর অগাধ পান্ডিত্য ছিল এবং এসব ভাষায় অনর্গল বক্তৃতা দিতেন। তিনি বাংলা, উর্দু এবং আরবী ভাষায় প্রায় শতাধিক প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাছাড়া আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ:) একজন প্রবন্ধকার ও ছিলেন, বিভিন্ন সময় দৈনিক ইনকিলাব, সিলেটের ডাক, জনমত, বাংলা পোস্ট, সুরমা, নতুন দিন, মাসিক শাহ জালাল এবং পরোয়ানায় নানাবিধ বিষয়ে তাঁর লেখা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। দেশে বিদেশে তিনি বহু মসজিদ, মাদরাসা ও খানেকা প্রতিষ্ঠায় সম্পৃক্ত থেকে দ্বীনি খেদমত আনজাম দিয়েছেন। হযরত দুবাগী ছাহেব (রহ:) বৃটেনের অন্যতম প্রবীণ শ্রদ্ধাভাজন এক জন আলেম ও পীরে কামেল ছিলেন। তিনি মানুষকে শরীয়তের সঠিক দিক নির্দেশনা দিতেন। আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ:) হাজার হাজার মানুষকে আলোর পথে নিয়ে এসেছেন। তিনি ছিলেন ইমামে আহলে সুন্নাহ। আল্লামা মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী ছাহেব কিবলা দুবাগী (রহ:) সাত কিরাআতের ক্বারীউল কুররা ছিলেন।
মানবতার সেবা আল্লামা দুবাগী ছাহেব রহ, এর বিলাতে সীমাবদ্ধতা ছিল না। স্বদেশে ও তার প্রতিফলন ছিল। যখনই বাংলাদেশে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিয়েছে তিনি তখন চাঁদা সংগ্রহ করে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে দুর্গতদের সাহায্যের জন্য পাঠিয়েছেন। তাছাড়া বসনিয়া, কাশ্মীর, আফগানিস্তান, ফিলিস্তীনি প্রভৃতি দেশের মজলুম মুসলমানদের জন্যও অনুরূপভাবে সাহায্য প্রেরণ করেছেন।
আল্লামা দুবাগী সাহেব তাঁর সুদীর্ঘ জীবনে ব্যাপক সফর অভিজ্ঞতার অধিকারী ছিলেন। তিনি বহুবার পবিত্র হজ্ব এবং হারামাইন শরীফাইন যিয়ারত ছাড়াও অসংখ্য দেশ ভ্রমণ করেছেন।
আল্লামা মুজাহিদ উদ্দীন (রহ:) আরবী, উর্দু এবং বাংলা ভাষায় বহু পুস্তক-পুস্তিকা রচনা করেছেন যার সংখ্যা দুই ডজনের কম হবে না। ইসলামের নানাদিকের ওপর তিনি তার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধও রয়েছে এবং তাতে কিছু জীবনীও রয়েছে।
তিনি ছিলেন বৃটেনে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের এক বর্ষীয়ান দিকপাল। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা বিশ্বাস প্রচার ও প্রসারে তাঁর অবদান বৃটেনের মুসলিম কমিউনিটি সর্বদা মনে রাখবে। খ্যাতনামা এই মুফতী তাকওয়া ও পরহেজগারীসহ বহুগুণের অধিকারী বিশিষ্ট বুযুর্গ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। বক্তৃতা, মুনাজিরা ও লেখনীর মাধ্যমে তিনি দ্বীনের সঠিক শিক্ষা প্রসারে আমৃত্যু চেষ্টা করে গেছেন।
শায়খুল হাদীস মুফতীয়ে আজম আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী ছাহেব (রহ.) একজন ইসলামি দার্শনিক হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত। এছাড়া তাঁর প্রতিষ্ঠিত খানকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাকে করেছে জননন্দিত। তাঁর শিক্ষার্থীবৃন্দ দেশ-বিদেশে উচ্চ পর্যায়ের চাকুরীতে নিয়োজিত থেকে সুনাম কুড়াচ্ছেন। তাঁর রচিত কয়েকটি গ্রন্থ রয়েছে। তাঁর বাগ্মিতা এবং সমাজ ও দেশ হিতৈষী কর্মকাণ্ড তাকে সবার নিকট করেছে প্রশংসিত। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর সকল খিদমাতকে কবূল করুন এবং তাঁর দরজাহ বুলন্দ করুন আল্লাহুম্মা আমিন।