করোনা দুর্যোগে নাজুক শিক্ষা ব্যবস্থপনা মার্চ মাস থেকে যে ক্রান্তিকাল পার করছে সেখানে এখনও ভর করে আছে প্রবল অনিশ্চয়তা। সেই ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবে খুলবে সেটাও স্পষ্ট করে ধারণা করা যাচ্ছে না। ফলে বিপন্ন অবস্থায় সময় কাটাচ্ছে কয়েক কোটি শিক্ষার্থী। প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক মিলিয়ে অসহায় কয়েক কোটি শিক্ষার্থী তাদের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রম পালন করছে ঘরে বসেই।
’৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় এমন বিপর্যয় দেখা গেলেও সে সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ঘোরতর সঙ্কটেও চালু হয়েছে। এবার তেমন সম্ভাবনাও ক্ষীণ। সংসদ টিভি, রেডিও কিংবা অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও তা কোনভাবেই সর্বজনীন হয়নি। ন্যূনতম অংশগ্রহণ দৃশ্যমান হলেও সিংহভাগ শিক্ষার্থী এই প্রযুক্তিগত পাঠগ্রহণ থেকে বঞ্চিতই ছিল। উন্নত বিশ্বে অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা প্রণালী চালু থাকলেও বাংলাদেশের অগণিত শিক্ষার্থী এর থেকে অনেক দূরে ছিল। আগে সেভাবে প্রয়োজনই পড়েনি টিভি কিংবা বেতার মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম প্রচলন করার। নতুন দেখা জ্ঞানচর্চার এই নবতর সংযোজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে তেমন আগ্রহ তৈরি করতে পারেনি। বিশেষ করে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা এমন পাঠদানে কখনই অভ্যস্ত ছিল না। মাধ্যমিক পরীক্ষা বোর্ড কর্তৃক সময় মতো নেয়া হলেও এইচএসসিসহ বাকি কোন উত্তরণ পর্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু করা প্রায় অসম্ভব ছিল। করোনার দাপট কমলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার মধ্য দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পথ তৈরি হলেই সেসব বিষয়ে ভাবার অবকাশ থাকবে। ইতোমধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে হরেক রকম গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অস্থিরতা ছড়ালে বোর্ড এবং মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরও বৈর্য ধরার আবেদন জানায়। বলা হয়, অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি না হলে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে ভাবতে হবে। সঙ্গত কারণে কোন সিদ্ধান্ত তড়িঘড়ি করে দেয়া যাবে না। বৈধ গণমাধ্যমে সময়মতো তার বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করে শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ সমাপনী পরীক্ষা নিয়েও চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন কর্তৃপক্ষ। বছর পার করা শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় যে পিছিয়ে পড়ছে এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। অন্যদিকে টিউশন ফি নিয়েও অভিভাবক এবং শিক্ষকদের মধ্যে বিরোধ চলার ঘটনা দৃশ্যমান হচ্ছে। সব থেকে বেশি টানাপোড়েনে অসহায় শিক্ষার্থীরা। তবে এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করা উভয়েরই নৈতিক দায়বদ্ধতা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই তো খোলা সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে টিউশন ফির নিয়মমাফিক চাপও অগ্রহণযোগ্য। শিক্ষার্থীরা তো শিক্ষকদের ক্লাসও নিয়মিত করতে পারেনি। সব মিলিয়ে পুরো শিক্ষা কার্যক্রম এক চরম অব্যবস্থাপনার কবলে। এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ের যৌক্তিক সিদ্ধান্তের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধৈর্যশীল হতে হবে। শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে অহেতুক বিভ্রান্তি কোনভাবেই কাম্য নয়।