স্টাফ রিপোর্টার :
যুক্তরাজ্য থেকে মাতৃভূমির টানে দেশে এসে নিজেকে সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করতে চাইলেও একটি দুষ্টুচক্রের কারণে বাধার সম্মুখিন হচ্ছেন এক নারী। তিনি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চরনারচর ইউনিয়নের লোলারচর গ্রামের শ্রীপদ দাসের স্ত্রী চঞ্চলা দাস। শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন চঞ্চলা।
লিখিত বক্তব্যে চঞ্চলা দাস বলেন, যুক্তরাজ্যে আমার স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ থাকলেও প্রায়ই এলাকায় এসে মানুষের পাশে দাঁড়াতে যথাসাধ্য চেষ্টা করি। করোনাকালীন সময়ে দেশে অবস্থান করে গ্রামের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমার এসব জনকল্যাণমূলক কাজ স্থানীয় একটি কুচক্রী মহল ভাল চোখে দেখছে না। তারা আমাকে হেনস্থা করতে নানা রকম ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। আমার কষ্টার্জিত অর্থে গ্রামে একটি বাড়ি নির্মাণ করি। এই বাড়িটি বৃদ্ধাশ্রম হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, এই বাড়ির সীমানায় মাটি ভরাটের জন্য কন্টাক্ট দেই শ্যামারচর গ্রামের আজিজুর রহমানকে। তিনি সাব কন্টাক্ট দেন নেত্রকোনার ইতনা গ্রামের বাবুল মিয়াকে। গত ১৬ আগষ্ট তারা ভিট বালু দিয়ে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করে। সুরমা নদী থেকে ৬ সিলিন্ডার পাইপ লাগিয়ে তারা নৌকা থেকে ভিট বালু আমার বাড়ির সীমানায় ফেলতে থাকে। আমি তাদেরকে বুঝিয়ে বলি যেহেতু পানির প্রচুর স্রোত সেহেতু বাড়ির খালি জায়গায় পাইপ লাগাতে হবে। প্রথম দিন তারা আমার কথামত কাজ করে। কিন্তু ২য় দিন থেকেই তারা তাদের মতো কাজ করতে থাকে। তারা খালি জাযগায় পাইপ না লাগিয়ে বিল্ডিংয়ের উত্তর দিকে সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে পাইপ লাগায়। যেখানে বিল্ডিং এবং দেয়ালের দূরত্ব মাত্র ৩ ফুট। আমি তাদেরকে নিষেধ করে বলি এখানে পানি এসে পড়লে আমার সীমানা প্রাচীর ধসে পড়বে। কিন্তু তারা আমার কথায় কোন কর্ণপাত করেনি। মাত্র ৫ মিনিট বালু ফেলার পর হঠাৎ করে বিকট শব্দে আমার বাড়ির সীমানা প্রাচীর ধসে পড়ে। এতে আমার প্রায় ১৮ লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়। ৪ সিলিন্ডার পাইপ দিয়ে কাজ করার চুক্তি থাকা স্বত্ত্বে ৬ সিলিন্ডার দিয়ে কাজ করা ও ছিল তাদের ষড়যন্ত্র। আর এসব ষড়যন্ত্রের মূল হোতা প্রথম ঠিকাদার আজিজুর এবং আমার গ্রামের জগদীশ ও কবিন্দ্র। এদের মধ্যে জগদীশ চরনারচর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী লোক। তারা আামাকে গ্রাম থেকে বিতাড়িত করতে দীর্ঘদিন থেকেই চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তারা বিভিন্ন সময়ে আমার নিকট চাঁদা দাবি করেছে। আমার বাড়ির দেয়াল গুঁড়িয়ে দেয়ার পর বিষয়টি আমি স্থানীয় গণ্যমান্য লোকদের জানালে তারা আমার বাড়িতে সালিশে বসেন। কিন্তু আজিজুর এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের দেয়া রায় মেনে নেয়নি। সাব কন্ট্রাক্টর বাবুলের ছেলে আব্দুল্লাহ উল্টো আমাকে সরাসরি হুমকি দিয়ে বলে শুধু বাউন্ডারি ওয়াল নয় প্রয়োজনে বোমা মেরে বিল্ডিং গুঁড়িয়ে দেব। আজিজুর নিজেকে সাবেক এমপি মতিউর রহমানের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। এমনকি সাবেক এমপি মতিউর রহমান আমাকে ফোন করে বলেছেন আজিজুর তার আত্বীয়। বিষয়টি নিয়ে যেন আমি আর বাড়াবাড়ি না করি। দরকার হলে গ্রামবাসীর স্বাক্ষর নিয়ে তিনি নাকি আমাকে গ্রামছাড়া করবেন।
চঞ্চলা আরও বলেন, ওসিসহ দিরাই থারান একদল পুলিশ গত ১৮ আগষ্ট আমার বাড়িতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। ওসি বাড়ির দেয়াল ভাঙ্গার চিত্র ও সার্বিক ক্ষয়ক্ষতি দেখে আজিজুরকে বাড়ির দেয়াল নির্মাণ করে দিতে বলেন। কিন্তু সে পুলিশের কথা শুনেনি। কবিন্দ্র সরকারি রাস্তা দিয়ে আমাকে বালু, পাথর আনতে এবং পাইপ টানতে দেয়নি। তার ভাই ছানু আমার নিকট চাঁদা দাবি করেছিল। গত ২ জুন কবিন্দ্র তার সহযোগীদের নিয়ে আমার বাড়ির পশ্চিমের দেয়ালটি ভেঙ্গে ফেলে। ওইদিন তারা আমাকে ঘরে বন্দী করে বাইরে থেকে তালা মেরে দেয়। পরে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে। অন্যদিকে সম্প্রতি জগদীশ আমার নিকট ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। আমি তার হুমকিতে বাধ্য হয়ে একবার ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। বাকি টাকা না দেওয়াতেই সে এবং তার সহযোগীরা আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।
সংবাদ সম্মেলনে চঞ্চলা দাস আজিজুর, জগদীশ, কবিন্দ্র এবং তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তার নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদয় দৃষ্টি কামনা করেন।