কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
উচ্চ আদালতের অনুমতি থাকার পরও কানাইঘাট লোভাছড়া পাথর কোয়ারী থেকে পাথর পরিবহনে প্রশাসন বাধা প্রদান করে আসছে এমন অভিযোগ এনে পাথর ব্যবাসায়ী ও শ্রমিকরা সভা সমাবেশ, মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট সহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছেন। এমতাবস্থায় পাথর পরিবহনের সুযোগ করে দেয়ার জন্য সরকারের উচ্চ মহল সহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করে গতকাল শনিবার বিকেল ৩টায় কানাইঘাট প্রেসক্লাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি আব্দুল হেকিম শামীম বলেন, লোভাছড়া পাথর মহাল হচ্ছে দেশের একটি প্রাচীনতম কোয়ারী। যুগ যুগ ধরে এখান থেকে পাথর ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর শুকনো মৌসুমে কোয়ারীর ইজারাদারের কাছ থেকে পাথর খরিদ করে লোভা নদীর দুই তীরে বিভিন্ন ব্যক্তির মালিকানাধীন জমিতে স্তুপ করে রাখেন এবং বর্ষা মৌসুমে পাথর নদীপথে পরিবহন করে থাকেন। করোনা দুর্যোগকালীন সময়ে ১৩ এপ্রিল ২০২০ইং তারিখে কোয়ারীর লীজের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় শ্রমিক সংকট ও নৌযান চলাচলে সীমাবদ্ধতার কারনে লীজের মেয়াদকালীন সময়ে কোয়ারী থেকে নৌপথে তারা পাথর পরিবহন করতে পারেন নি। এমতাবস্থায় গত ১৫ জুলাই পরিবেশ অধিদপ্তর বেআইনী ভাবে লোভা নদীর দুই তীরের ব্যবসায়ীদের স্তুপকৃত ১ কোটি ঘনফুট পাথর জব্দ করে ৩ দফা নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু সর্বশেষ গত ১২ আগস্ট শেষ দফায় নিলাম বিজ্ঞপ্তির নিলামের তারিখ ধার্য্য থাকার পরও এই ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। ব্যবসায়ীদের খরিদকৃত পাথর পরিবেশ অধিদপ্তর জব্দ করায় কোয়ারীর ৫ জন ব্যবসায়ী মহামান্য হাইকোর্টে ৫টি রীট মামলা করেন। এর মধ্যে ভিসি রীট পিটিশন নং- ১০৩১/২০, ১০৫০/২০, ১০৫৫/২০ মামলায় বিগত ২৮ জুলাই ৩০ দিনের মধ্যে পাথর সরিয়ে নেয়ার অনুমতি দিলেও সিলেটের নির্বাহী প্রশাসন আমাদের কোন পাথর সরাতে দিচ্ছে না। এভাবে তামিল ছাড়াই এই তিন রীটের মেয়াদ শেষ হয়। এখন ভিসি রীট পিটিশন মামলা নং- ৫১/২০ ও ৮২/২০ মামলার আদেশের মেয়াদও শেষ হওয়ার পথে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা মামলার সার্টিফাই আদেশ ও মালিকানার কাগজ সহ সিলেটের জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ও কানাইঘাটের ইউএনও অফিসে বার বার ধর্না দিয়েও তারা তা গ্রহন করে কোন সমাধান দিচ্ছেন না। প্রশাসন উচ্চ আদালতে নির্দেশনা বার বার উপেক্ষা করায় শত শত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা পাথর পরিবহনের সুযোগ দেয়ার জন্য অদ্যবধি পর্যন্ত সরকারের উচ্চ মহলের সুদৃষ্টি কামনা করে নানা ধরনের কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছেন, যা আপনারা সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা দেখেছেন। এই অবস্থায় সুরমা নদীতে আমাদের ২ শতাধিক পাথর বোঝাই নৌকা আটকা আছে। ডুবে গেছে ১৪টি নৌকা। অন্য নৌকাগুলোও ডুবুডুবু। মাত্র ২০/২৫ দিন পর সুরমা ও লোভা নদীর পানি শুকিয়ে যাবে, তখন অনুমতি পেলেও পাথর পরিবহন সম্ভব হবে না। ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকার লোকসানের সম্মুখীন হবেন, তারা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবেন। অনেক ব্যবসায়ীরা আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না। এই অবস্থায় সংবাদ সম্মেলনে পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা উচ্চ আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তাদের পাথর দ্রুত নৌপথে পরিবহনের জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়া সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে পাথর ব্যবসায়ীরা বলেন, লোভাছড়া কোয়ারীতে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। সিলেটে অবস্থানরত মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মোহাম্মদ কামাল হোসেন মহোদয় আজ রবিবার লোভাছড়া পাথর কোয়ারী পরিদর্শন আসছেন। কোয়ারীর কার্যক্রম যেনো সচল থাকে পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা তাদের পাথর পরিবহন করতে পারেন এজন্য তার হস্তক্ষেপ কামনা করেন ব্যবসায়ীরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মুলাগুল আদর্শ পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন, সহ সভাপতি জেলা পরিষদ সদস্য আলমাছ উদ্দিন, লোভাছড়া পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান পাথর ব্যবসায়ী শমসের আলম, সাবেক ইউপি সদস্য পাথর ব্যবসায়ী ফখরুদ্দিন চৌধুরী, পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সচিব খাজা শামীম আহমদ শাহীন, রীটকারী পাথর ব্যবসায়ী মঈনুল হক, হাজী বিলাল আহমদ, এনামুল হক, উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক জুনেদ হাসান জীবান সহ অর্ধ শতাধিক পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।