সৌদি আরবের পবিত্র মক্কানগরীতে এবার হজ্ব পালিত হচ্ছে ৩০ জুলাই করোনা মহামারীর দুঃসময়ে। ইলেক্ট্রনিক স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে এবার সৌদি আরবে বসবাসরত ১৬০টি দেশের বাসিন্দাকে আবেদনের ভিত্তিতে এবার হজ্বে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। মোট হজ্ব পালনকারীর ৩৫ শতাংশ হবেন সৌদি নাগরিক। কোন গ্র“পে ২০ জনের বেশি থাকতে পারবেন না। সবাইকে অন্তত দুই মিটার দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধির গাইডলাইন মেনে অবস্থান, চলাচল ও হজ্ব প্রক্রিয়া পালন করতে হবে। এবার সর্বোচ্চ ১০ হাজার মানুষ সুযোগ পাচ্ছেন হজ্ব পালনের।
পবিত্র ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি হচ্ছে হজ্ব। আর্থিকভাবে সচ্ছল, দৈহিকভাবে সক্ষম ও সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমানের জন্য হজ্ব পালন ফরজ করা হয়েছে। সৎ পথে উপার্জিত অর্থ দ্বারা হজ্ব পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্যকর্তব্য। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্বপূর্ণ ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ অনুষ্ঠান হজ্বব্রত পালনের লক্ষ্যে সারাবিশ্ব থেকে নানা বর্ণের, নানা ভাষার লাখ লাখ মুসলমান নর-নারী পবিত্র মক্কা নগরীতে সমবেত হন। বাংলাদেশের কিছু সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমানও অংশ নিয়েছেন হজ্বে। এবারই প্রথম বাংলা ভাষায় খুতবা প্রচারিত হবে।
এ ধরনের বিশাল ধর্মীয় সমাবেশ পৃথিবীর আর কোথাও হয় না। সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে সমর্পণের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধির অন্যতম লক্ষ্য নিয়েই এই ভাবগম্ভীর সমাবেশ। ফলে এর গুরুত্ব অপরিসীম। সুশৃঙ্খল নিয়মের মধ্য দিয়ে হজ্ব পালিত হয়। ইহরাম বাঁধা, কাবা শরীফ তাওয়াফ করা, আরাফাতের ময়দানে অবস্থানÑ সবকিছুর মধ্যেই রয়েছে নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলার নির্দেশ। হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে সমবেত বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তা মেনেও চলেন। প্রতিবছর হজ্ব পালনের সময় মক্কা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে বিশাল আরাফাত ময়দানে অগণিত মুসলমান লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক উচ্চারণ করতে করতে সমবেত হন। এবার তা হতে পারছে না মূলত করোনার কারণে। হজ্বের মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় মুসলমানদের পারস্পরিক সমতা এবং বিভেদহীন ঐক্য। আরাফাতের ময়দানে মানুষ সব বৈষম্য ভুলে যায়। বিশ্বের সব মুসলমানের মধ্যে গড়ে ওঠে সাম্য ও সৌভ্রাতৃত্বের পবিত্র বন্ধন। প্রত্যেক মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি, তাঁরই অনুগত দাস এবং হযরত মুহম্মদের (সা.) উম্মত। হজ্ব পালনের সময় ভাষা, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সবাইকে পরিধান করতে হয় সেলাইবিহীন ইহরাম। যার দ্বারা প্রমাণিত হয় পবিত্র ইসলাম সাম্য ও শান্তির বাণী প্রচার করার জন্যই রাসূলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠা ও পূর্ণতা পেয়েছে। বস্তুত, সমগ্র মানবজাতিকে শান্তি ও সম্প্রীতির চেতনায় উজ্জীবিত করার প্রকৃত আবেদন এই সুবিশাল মহাসমাবেশের এক পরম শিক্ষা। বিশ্বের সব মুসলমানের মধ্যে ইসলামের মৌলিক সত্যটি উদ্ভাসিত হয়ে উঠুক, শান্তি ও সাম্যের সুবাতাস বইতে থাকুক, এটিই প্রত্যাশা।