বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান বলেছেন, এক যুগেরও বেশী সময় থেকে বিএনপির শত শত নেতাকর্মী গুম খুনের শিকার হয়েছেন। লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী গায়েবী মামলার আসামী হয়েছেন। আমি নিজেও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমরা যে বাড়িতে জন্ম নিয়েছি তা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। দেশনেত্রীকে বাড়ি থেকে কিভাবে বের করে দেয়া হয়েছে তা নিশ্চয়ই মনে আছে। এই মুহুর্ত পর্যন্ত যারা অত্যাচার নির্যাতনের সহ্য করেছেন, যারা দলের নাম ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছে- এই ত্যাগ নিশ্চয়ই তাদের জন্য নয়? যারাই দলের নাম ব্যবহার করে কোন অন্যায় করতে চাইবে, দলের সুনাম নষ্ট করতে চাইবে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
শনিবার বিকেলে সিলেট জেলা ও মহানগর আয়োজনে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে ভার্চুয়ালী মতবিনিময় সভায় দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেন। নগরীর একটি কনভেনশন হলে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সকল সহকর্মী হত্যার শিকার হয়েছেন, কিছু মানুষ তাদের রক্তের সাথে বেঈমানী করতে পারবেন না, আমি কাউকে ছাড়ব না। সময় সুযোগ মতো ব্যবস্থা নেব। আমি আপনাদের মাধ্যমে সবার কাছে একটি ম্যাসেজ পৌঁছে দিতে চাই, কেউ যদি দলকে ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিল করতে চায়। তাহলে আমি সুযোগ পেলে সবাইকে খোঁজে খোঁজে আইনের হাতে তোলে দেব।
তারেক রহমান বলেন, আপনারা যে পর্যায়ের নেতাই হোন না কেন, নিজেকে ছোট মনে করবেন না। কারন আপনি শহীদ জিয়া ও বিএনপির সৈনিক। আপনার দায়িত্ব অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। স্বৈরাচারের পতন হলেও আজকে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে তার দাঁতভাঙা জবাব তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই দিতে সক্ষম। দেশের মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। কারন মানুষ জানে বিএনপি যতবার দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে, দেশকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা বিগত বছরগুলোতে সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উঠে এসেছেন, তাই আপনারা সবাই পরিক্ষিত নেতা। যেহেতু স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, অনেকেই মনে করছেন আমরা ক্ষমতায় চলে এসেছি। আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, আমরা অতিতেও বিরোধী দলে ছিলাম, এখনো আমরা বিরোধী দলে আছি। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা বিরোধী দলে আছি। তাই আমাদেরকে প্রত্যেকটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
বিএনপির শীর্ষ নেতা বলেন, যেকোন মূল্যে আপনাকে আপনার এলাকার মানুষের আস্তা ধরে রাখতে হবে, মানুষের প্রত্যাশা মতো চলতে হবে। না হলে আপনি পিছিয়ে পড়বেন। মানুষের আস্তা এবং বিশ্বাসের মূল্যায়ন করতে হবে। মানুষের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আসছে। সাধারণ মানুষের চিন্তা চেতনার সাথে সামাঞ্জস্য রেখে আমাদের চিন্তা চেতনারও পরিবর্তন করতে হবে। তাই আসুন আমরা প্রত্যেকে নিজেদেরকে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী গড়ে তোলতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের সামনে স্বৈরাচার ছিল দৃশ্যমান প্রতিপক্ষ, আর আজকে আমাদের দিকে অদৃশ্য প্রতিপক্ষ এগিয়ে আসছে। এরা পেছন থেকে ছুরি মারবে। স্বৈরাচারের পতনের পর বহু ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তা তৃণমূলকেই মোকাবেলা করতে হবে। ষড়যন্ত্র মোকাবেলার পাশাপাশি মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী কিভাবে নিজেদেরকে পরিবর্তন করব সেই পরিকল্পনা করতে হবে। আমাদের আগামী দিনের লক্ষ্য হতে হবে, দেশকে ও মানুষকে বাঁচানোর। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, জনগণ আমাদের উপর যে আস্তা ও বিশ্বাস রেখেছে তা তৃণমূল কখনো নষ্ট হতে দেবে না।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদী লুনা, ড. এনামুল হক চৌধুরী ও আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ্ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় সহ ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডাঃ শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী ও আবুল কাহের চৌধুরী শামিম, জাসাস’র আহবায়ক হেলাল খান, সিলেট জেলা বিএনপি সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী প্রমূখ।