কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এবারের বন্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, সে ব্যাপারেও আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি ও যথেষ্ট ব্যবস্থা আছে। আমাদের বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, সকলকে কাজ করতে হবে। আমাদের তরফ থেকে ত্রাণের কোন সঙ্কট নেই। পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা রয়েছে।
রবিবার বিকেলে ধানমন্ডিতে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সভাপতি এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকের মুঠোফোনে ভিডিও কলে সংযুক্ত হয়ে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেল চারটার দিকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমানের নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এক অনির্ধারিত বৈঠকে বসেন। বৈঠকে গণভবন থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ভিডিও কলে সংযুক্ত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশকিছু দিক-নির্দেশনাও দেন।
বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দিপু মনি, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সুবর, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
গণভবন থেকে ভিডিও কলে সংযুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, যেসব এলাকা বন্যাকবলিত, সেসব এলাকার স্থানীয় সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করে তারা যেন বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায় সেভাবে নির্দেশ দিতে হবে। এদিকে আবার করোনা ভাইরাস; এটা নিয়েও সতর্ক থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে। আমাদের তরফ থেকে ত্রাণের কোন সঙ্কট নেই। পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বন্যায় যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছে, তাদের ঘরবাড়ি করে দিচ্ছি। স্কুল কলেজ; সেখানে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে ধান কাটাও আমরা আমাদের নেতাকর্মীদের সহায়তায় ভালভাবে করতে পেরেছি।
সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগষ্ট জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে যেভাবে করতে চেয়েছিলাম, করোনা ভাইরাসের কারণে সেভাবে আমরা পারলাম না। তাই আমরা একদিকে বৃক্ষরোপণ করব, আরেকদিকে বন্যার্ত দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ দেব। দোয়া-মোনাজাত করা হবে। বন্যাদুর্গত মানুষের ঘরে ঘরে যাতে ত্রাণ পৌঁছানো, খাবার বিতরণ, এবং তাদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করা-এটাই হবে আমাদের কাজ। আমি বলব, আমার পিতা (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু), তিনি তো সাধারণ মানুষের জন্যই জীবন দিয়ে গেছেন।
সবাইকে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, এবার যেহেতু করোনাভাইরাস। তারপরও পবিত্র কোরবানির ঈদ। সবাই সবার মতো মানুষকে সাহায্য করা, মানুষের পাশে থাকতে হবে। স্বাস্থ্য সচেতন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। সে ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশন সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে। আমাদের সকলকেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
ভিডিও কলে বক্তব্যের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আপা (দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা), আপনি যে নির্দেশনা দিয়েছেন আমরা সে অনুসারে এগিয়ে যাব। আপনাকে জানাতে চাই, আমাদের বিভিন্ন সংগঠন বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে কাজ করছে, ত্রাণ কার্যক্রম করছে। আমাদের নেতৃবৃন্দ করোনার মধ্যেও ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ কারণে আমাদের অনেক নেতৃবৃন্দ একের পর এক মৃত্যুবরণ করছে, আমরা অনেক নেতৃবৃন্দকে হারিয়েছি।’
জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সবচেয়ে বেশি আমাদের নেতাকর্মীদের হারালাম। কারণ প্রত্যেকে, সবাই কিন্তু কাজ করেছে। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতারা সারাদেশে করোনাসহ বিভিন্ন বয়সজনিত রোগে মৃত্যুবরণকারী নেতাদের নাম উল্লেখ করে দলীয় প্রধানকে অবহিত করেন।
এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি খবর পাচ্ছি। আসলে এই সময়ে অনেকেই আমাদের ছেড়ে চলে গেল। আমার কাছে সব খবর আছে। সবারই আমি কনডোলেন্স (শোক বিবৃতি) জানাচ্ছি। আসলে এখন এমন একটা সময় যে, মারা গেলে যে দেখব, সেটাও এখন করা যাচ্ছে না। তারপরও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন যেহেতু উত্তরবঙ্গের কিছু এলাকা বন্যাকবলিত, এখন মধ্য এলাকায় নেমে আসবে। হয়ত জুলাইয়ের শেষেরদিকে মধ্য এলাকা থেকে আগস্টের শেষের দিক হতে শেষের এলাকায় (দক্ষিণাঞ্চল) নামবে। আগষ্টের মাঝামাঝি সময় বা আমাদের দক্ষিণাঞ্চল। এটা আমাদের দেশের প্রাকৃতিক নিয়ম। মধ্য উপকূলীয় এলাকায় বন্যা তেমন হয় নাই। কিন্তু আমাদের পদ্মার ওপারে যারা এসব এলাকায় আবারও বন্যা ব্যাপকহারে দেখা যেতে পারে এবং এই বন্যাটা স্থায়ী হতে পারে। ঠিক ১৯৯৮ সালের বন্যা যেমন ছিল সব থেকে দীর্ঘতম বন্যা।
তিনি বলেন, সব থেকে দীর্ঘ সময় ১৯৯৮ সালের বন্যা স্থায়ী ছিল। ১৯৮৮ সালের বন্যাটা দুই সপ্তাহ ছিল। ১৯৯৮ সালের বন্যা কিন্তু দীর্ঘ ৬৯ দিন ছিল। এই বন্যাটা যে ওই সময় এত বেশি ছিল (১৯৯৮ সালে) সেই সময় অনেকেই বলেছিল যে, দুই কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। আল্লাহর রহমতে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। কোন মানুষ না খেয়ে মারা যায়নি। সে কারণে এবারের বন্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে তা থেকে আমাদের কি করণীয়, সে ব্যাপারেও প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় অতীতে বন্যার সময়গুলোতে দুর্যোগ কবলিত এলাকায় কিভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সে বিষয়েও স্মৃতিচারণ করেন। এক্ষেত্রে তিনি নিজ হাতে রুটি বানানোর কথা, খাবার বিতরণের কথা, খাবার পানি, স্যালাইন তৈরিসহ ওষুধপত্রাদি বিতরণের অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি ও ব্যবস্থা আছে যথেষ্ট। তারপরও আমাদের সেভাবেই তৈরি থাকতে হবে। এছাড়া দলীয় নেতাদের সবাইকে নিজ নিজ এলাকাভিত্তিক মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।