শ্রীমঙ্গল ও জুড়ীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে নারীসহ দু’জনের মৃত্যু

10
শ্রীমঙ্গলে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী নারীর লাশ জানাযা ও দাফনের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজার জেলায় শ্রীমঙ্গল ও জুড়ী উপজেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে পৃথক স্থানে নারীসহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতরা হলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুর খান ইউনিয়নের পুরানগাঁও গ্রামের কনরী বেগম (৪৫) এবং জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের কোনাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাসুক মিয়া (৫৮) মৃত্যু হয়।
জানা গেছে, কনরী বেগম করোনা উপসর্গে রবিবার রাতে মৃত্যুবরণ করায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে ওই নারীর জানাযা ও দাফন-কাফন সম্পন্ন করে ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার জেলা কমিটি।
ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশনের শ্রীমঙ্গল উপজেলার টিম প্রধান মাওলানা আব্দুর রহিম নোমানী জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম এর নির্দেশনায় রবিার রাত একটা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত কনরি বেগমের লাশ ধৌত করা, কবর খোড়াসহ জানাযা ও দাফন-কাফন সম্পন্ন করে ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার।
সংস্থাটির মহিলা টিম প্রধান ফাতেমা পপির নেতৃত্বে মহিলার টিম সহকারী ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা টিমকে নিয়ে সোমবার সকালে দাফন-কাফন শেষ হয়। মৃত মহিলাকে গোসল করানো ও কাফন পরানোর দায়িত্বে ছিলেন মহিলা টিম, জানাযা নামাজ পড়ান জেলা টিম প্রধান মাওলানা আহসান জাকারিয়া।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে জেলার জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের কোনাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাসুক মিয়া করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। রবিবার রাত ৯টার দিকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
নিহত মাসুক মিয়ার ছেলে শিপলু জানান, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে গত বুধবার (১০ জুন) দুপুরে আমার বাবাকে নিয়ে জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাই। কিন্তু তার রোগের বর্ণনা শুনে চিকিৎসকরা করোনা সন্দেহে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বিকেলে ওসমানী মেডিক্যাল থেকে ভর্তি না করে শহীদ শামসুদ্দিন জেনারেল হাসপাতালে যেতে বলা হয়। পরে জুড়ী হাসপাতালের চিকিৎসক ফোন করলে তাকে ওসমানীতে ভর্তি নেয়। ৫ দিন সেখানে চিকিৎসা চলে। গত (বুধবার) বিকেলে আমাকে বলা হয় রোগীর করোনা নয়, হৃদরোগের সমস্যা। তাকে আইসিইউতে রাখতে হবে। ওসমানীতে আইসিইউ নেই, অন্য কোথাও নিয়ে যেতে। আমরা তাকে নর্থইস্ট হাসপাতালে নিয়ে যাবার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বাবা মারা যান।
জানা যায়, মাসুক মিয়া প্রায় ৩৫-৪০ বছর থেকে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসবাস করছেন। সেখানে জনৈক মালিকের কয়েকটি ভবনের কেয়ারটেকার হিসেবে চাকরি করতেন। তিনি গত প্রায় ৪ বছর থেকে ডায়েবেটিস, বুকে পিটে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। এক মাস আগে তার জ্বর, কাশি দেখা দেয়। যা কয়দিন পর পর কমে বাড়ে। তিনি করোনা সন্দেহে ঢাকার কয়েকটি সেন্টারে নমুনা পরীক্ষার জন্য গেলে ৪-৫ ঘন্টা লাইনে থেকেও সিরিয়াল পাননি। এভাবে ৫-৬ দিন গিয়ে ফেরৎ আসেন। এক পর্যায়ে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। খাবার খেতে পারছিলেন না। গত মঙ্গলবার সকালে তিনি বাড়িতে চলে আসেন। রাতে তার অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় বুধবার দুপুরে তাকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে কিছু ৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় মৃত্যু হয়।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহতের বড় ভাই ফুলতলা বশির উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরমান আলী। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপজেলা প্রশাসন দাফন-কাফন করেছেন।