কাজিরবাজার ডেস্ক :
ই-নামজারি বা অনলাইনে নাম জারি প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন ভূমি মন্ত্রণালয়কে এনে দিয়েছে জাতিসংঘের মর্যাদাপূর্ণ ইউনাইটেড নেশনস পাবলিক সার্ভিস এ্যাওয়ার্ড-২০২০। ডিজিটাল বাংলাদেশের অঙ্গীকার পূরণে সরকারের কাজের বড় স্বীকৃতি হিসেবে দেখা হচ্ছে এই পুরস্কারকে। জাতিসংঘের স্বচ্ছ এবং দায়বদ্ধ ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার পেল ভূমি মন্ত্রণালয়। শুক্রবার এই পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি জাতিসংঘের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
এক সময় নামজারি করতে ভূমি অফিসে অফিসে ঘুরতে হতো জমির মালিককে। এর পর দালালদের খপ্পরে পড়ার পাশাপাশি হয়রানি আর অর্থের অপচয় হতো। এভাবে সারাদেশের মানুষ ভূমি অফিসের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুলত। তবে এখন সেই হয়রানি আর নেই। সবকিছুই হচ্ছে অনলাইনে। গ্রাহককে আর কোথাও যেতে হয় না, নেই কোন হয়রানি-প্রতারণার শিকার হওয়ার ভয়। ভূমি ব্যবস্থাপনায় ই-নামজারি এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যার সফল বাস্তবায়নের স্বীকৃতি দিল জাতিসংঘ।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী পুরস্কার পাওয়ার পর এক বিবৃতিতে বলেন, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমাকে প্রদত্ত এক চিঠির বরাত দিয়ে (শুক্রবার) আনুষ্ঠানিকভাবে ভূমি মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ল্যু ঝেনমিন চিঠিতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলেন, জনস্বার্থে সেবার উন্নয়নে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘ মনে করে এই উদ্যোগ বাংলাদেশের জনপ্রশাসনের উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছে। প্রকৃতপক্ষে, এই কাজ (ই-নামজারি) জনসেবায় ব্রতী হতে অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা এবং উৎসাহ হিসেবে কাজ করবে। এই স্বীকৃতি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০০৯ সাল থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সকল কার্যক্রম অটোমেশন করা হচ্ছে। ই-মিউটেশন তারই একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। জাতিসংঘের মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার প্রাপ্তিতে মন্ত্রণালয়ের সচিব মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী, ভূমি সংস্কার বোর্ড, আইসিটি বিভাগ, এটুআই, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানান সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
প্রতিবছর ২৩ জুন, যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে জাতিসংঘ দিবসটি উদ্যাপন করে আসছে। এই সময়ে বিশ্বজুড়ে সরকারী খাতে গৃহীত সর্বোত্তম উদ্ভাবনী উদ্যোগসমূহকে পুরস্কারের মাধ্যমে স্বীকৃতি দেয়া হয়। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ এ বছর পাবলিক সার্ভিস পুরস্কার বিতরণ আপাতত অনুষ্ঠান স্থগিত করেছে। তবে, জাতিসংঘ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নমুখী প্রচার কার্যক্রমের মাধ্যমে এই অসামান্য অর্জন ও পুরস্কার বিজয়ের বিষয়টি তুলে ধরার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়ের স্বপ্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে ভূমি মন্ত্রণালয় সকল ভূমিসেবা ডিজিটাল সেবায় রূপান্তরের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। আইসিটি বিভাগের এটুআই প্রকল্পের সার্বিক সহায়তায় ভূমি সংস্কার বোর্ডের মাধ্যমে ই-নামজারি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
ভূমিমন্ত্রীর উদ্যোগে গত বছর ১ জুলাই থেকে সারাদেশে তিনটি পার্বত্য জেলা বাদে বাকিসব জেলায় একযোগে শতভাগ ই-নামজারি বাস্তবায়ন শুরু হয়। বর্তমানে ৪৮৫ টি উপজেলা ভূমি অফিস ও সার্কেল অফিসে এবং তিন হাজার ৬১৭ টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস ই-নামজারি বাস্তবায়ন হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে গত মে মাস পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭০ টি আবেদন পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৫৮৮ টি আবেদন অনলাইনে নিষ্পত্তি হয়েছে। মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ১৭ মার্চ ২০২০ হতে ম্যানুয়াল আবেদন গ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে। প্রান্তিক অঞ্চলে অনেক সময় সেবা গ্রহীতাগণ ভূমি অফিসে গিয়ে বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করেন ই-মিউটেনের কারণে যা তাঁরা বাসায় বসেই করতে পারেন। ভূমি অফিসে ই-নামজারি চালু হওয়ায় দালালদের দৌরাত্ম্য ও মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতির সুযোগ কমছে। সেবা প্রার্থীদের হয়রানি এবং সর্বোপরি সেবা পেতে কম সময় ও কম খরচ হচ্ছে। এর ফলে নাগরিক সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, নাগরিক সেবা গ্রহণ করার পর সেবা প্রদানের মান নিয়ে সেবা গ্রহীতাগণ তাদের সন্তুষ্টি বা অসন্তুষ্টি বিষয়ক প্রতিক্রিয়া যাতে জানাতে পারেন সেজন্য ওয়েবসাইটে সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যাতে এগুলো পরবর্তীতে মূল্যায়ন করে সেবার মান বৃদ্ধি করা যায়।