শ্রীমঙ্গল থেকে সংবাদদাতা :
দুঃসহ গরমে অসহনীয় ৮ ঘণ্টা কাটিয়েছেন শ্রীমঙ্গলের মানুষজন। অত্যাধিক গরমে উপজেলার প্রায় শতাধিক ক্ষুদ্র পোলট্রি খামারের ১০ সহগ্রাধিক মুরগী মারা যাবার খবর পাওয়া গেছে। খামারিরা বলেছেন এতে ক্ষুদ্র খামারীরা ২০ লক্ষাধিক টাকা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
আবহাওয়ার উপর দিয়ে চলা তাপদাহের মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে শহরের তাপমাত্রা ছিল ৩৫ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময়ে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ঘোষণায় চলছিল টানা ৮ ঘণ্টা লম্বা বিদ্যুৎ বিহীন সময়। এতে দুঃসহ গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ।
বিদ্যুৎবিহীন অসহনীয় গরমে ঘরে-বাহিরে মানুষকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দেয়। মঙ্গলবার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তাদের নির্ধারিত সময়ের আগে বেলা ১টার মধ্যে ছুটি দিয়ে দিতে দেখা গেছে। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় মিল, শিল্প কারখানার স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ থাকে। মার্কেট ও বিপণী বিতানগুলোতে স্বাভাবিক বেচাকেনায় ভাটা পড়ে। খাঁ খাঁ রোদে নিম্ন আয়ের মানুষ বিশেষ করে রিক্সাচালক ও দিনমজুরদের ভ্যাপসা গরমে হাঁপিয়ে উঠতে দেখা গেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সদর দপ্তর কর্তৃক শুধু শহরে মাইকিং করে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩ টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার ঘোষণা দেয়া হয়। তবে মঙ্গলবার সকাল ৮টার কিছুটা পরে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হলেও ঘোষণার ৪৫ মিনিট পরে ৩টা ৪৮ মিনিটে উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়। এতে করে মানুষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেও উপজেলার কয়েক লাখ গ্রাহক গরমে অসহনীয় ৮ ঘণ্টা কাটিয়েছেন।
এদিকে, দীর্ঘ ৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় বেশ কিছু পোলট্রি খামারের প্রচণ্ড গরমে মুরগি মরে যাবার খবর পাওয়া গেছে। ভ্যাপসা গরম, তার উপর টানা ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় উপজেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র পোলট্রি খামারের ৫ সহগ্রাধিক মুরগি মারা যাবার খবর পাওয়া গেছে। উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের তাজুল মিয়ার আসিফ পোলট্রি খামারের ২ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ৮শ’, এই ইউনিয়নের খোসবাশ ওয়াহিদ পোলট্রির ১ কেজি ৮শ’ গ্রাম ওজনের ২ শতাধিক, মোহাজিরাবাদ গ্রামের ৩ কেজি ওজনের ২০টি, শিববাড়ী গ্রামের মালিক মো. লিটন মিয়ার পোলট্রি খামারের ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের ৪শ’ ভূনবীর ইউনিয়নের শুশীল ঘোষের মালকানাধীন রাজপাড়ার বিসমিল্লাহ পোলট্রি ফার্মের ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ৪শ’, কামার পাড়ার নিপেন্দ্র সরকারের ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের ১শ’ ৬০, একই গ্রামের নূর মিয়ার ১১০, আলিশারকুল গ্রামের আব্দুল্লাহ মিয়ার ৯০, কামারপাড়া গ্রামের শান্ত সরকারের ৩ কেজি ওজনের ৭৫টি, কালাপুর ইউনিয়নের সিরাজনগর গ্রামের বিসমিল্লাহ পোলট্রি ফার্মের মালিক হাবিবুর রহমানের দুটি ফার্মের ১২শ’, একই গ্রামের সুফিয়ান মিয়ার খামারের ১শ’, নূরজাহান চা বাগানের মুনসুর মিয়ার খামারের ৮০টি, এম আর খান চা বাগানের মোহাজিরাবাদ গ্রামের ইব্রাহিম মিয়ার খামারের ১৬০টি, মির্জাপুর গ্রামের বৌলাশী গ্রামের রোমান মিয়ার খামারের ১শ ৫০, খিলগাঁও গ্রামের শাহজাহান মিয়ার খামারের ২শ’ যাত্রাপাশা গ্রামের কৃষনদে’র খামারের ১শ’ ৫০টিসহ প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার মুরগী মারা যাবার খবর পাওয়া গেছে।
এতে এসব ক্ষুদ্র পোলট্রি খামারিরা প্রায় সাড়ে ২০ লক্ষাধিক টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন শ্রীমঙ্গল পোলট্রি বিজনেস এস্যোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি বলেন, টানা ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় সারা উপজেলায় ছোট বড় ৫ শতাধিক ক্ষুদ্র খামারের মধ্যে একশ’রও বেশি খামারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ১ কেজি থেকে ৩ কেজি ওজনের ৮ থেকে ১০ হাজার মুরগি মারা যাবার খবর পেয়েছি। এসব মুরগীর বাজার মূল্য প্রায় ২০ লক্ষ টাকা।
জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শ্রীমঙ্গলস্থ সদর দপ্তরের জেনারেল ম্যানেজার শিবু লাল বলেন, বেশ কিছু দিন পুর্বে সাব স্টেশনের সঞ্চালন লাইনের একটি খুঁটি বিপজ্জনকভাবে ভেঙে পড়ে। গেল রমজান মাসে এর ক্রটি মেরামত করার প্রয়োজন থাকলেও রমজান মাসের কথা বিবেচনায় রেখে তা করা সম্ভব হয়নি। আবহাওয়ার এই দাবদাহে কেন সঞ্চালন লাইন মেরামতের সময় বেছে নেয়া হলো- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গরমে গ্রাহকরা কষ্ট করছেন এজন্য আমরা দুঃখিত। কিন্তু এর কোনও বিকল্প ছিলো না। ভবিষ্যত জটিলতা এড়াতে মেইন্টেন্যান্স কাজ করতে হচ্ছে।