কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাট সীমান্তবর্তী লোভাছড়া পাথর কোয়ারীর ইজারার মেয়াদ ১৩ এপ্রিল শেষ হওয়ার প্রেক্ষিতে কোয়ারীতে মজুদ করা পাথর পরিবহন, বিপণন ও পাথর উত্তোলন বন্ধে মাঠে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু গত কয়েকদিনে লীজ বিহীন পাথর কোয়ারী থেকে ৩৫ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা লোভাছড়া চা-বাগান এলাকায় রয়্যেলিটি ঘাট থেকে আদায় করেছেন পাথর কোয়ারী নিয়ন্ত্রণকারী কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। এই টাকা আদৌ কী সরকারী কোষাগারে জমা হয়েছে কী না প্রশ্ন রয়েছে সচেতন মহলের।
কোয়ারী থেকে সব ধরনের পাথর নদী পথে নৌযান যোগে সাপ্লাই বন্ধ এবং কোয়ারীতে পাথর শ্রমিক জড়ো না করার জন্য শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বারিউল করিম খান কোয়ারীতে যান। এ সময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জাহাঙ্গীর আলম, লোভাছড়া বিজিবি এবং কানাইঘাট থানা পুলিশের একটি টিম। কোয়ারীতে অবস্থানকালে নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খান পাথর ব্যবসায়ীদের জানান, যেহেতু কোয়ারীর ইজারার মেয়াদ ১৩ এপ্রিল শেষ হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত এখন থেকে কোয়ারী থেকে সব ধরনের পাথর উত্তোলন, বিপণন ও পরিবহন কেউ করতে পারবেন না এবং রয়্যেলিটি আদায় করে সরকারের রাজস্ব কেউ ফাঁকি দিলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোয়ারীতে প্রশাসনের নজরদারী সব-সময় থাকবে বলে তিনি জানান।
জানা যায়, কোয়ারীর আশপাশ এলাকায় বর্তমানে কয়েক’শ কোটি টাকার পাথর মজুদ রয়েছে। লোভা ও সুরমা নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে পাথর ব্যবসায়ীরা এই করোনা দুর্যোগকালীন সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কোয়ারীতে ইঞ্জিন চালিত বড় বড় নৌযান ও শত শত পাথর শ্রমিকদের জড়ো করার পাঁয়তারায় লিপ্ত হলে সচেতন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সিলেটের জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল হকের নির্দেশে ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ায় লোভাছড়া পাথর কোয়ারী থেকে সব-ধরনের পাথর উত্তোলন, বিপণন ও পরিবহন বন্ধে গত বৃহস্পতিবার পাথর কোয়ারীতে যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য থানা পুলিশকে চিঠি দেন নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খান। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাথর কোয়ারী এলাকার অনেকে জানিয়েছেন, প্রভাবশালী পাথর ব্যবসায়ীরা করোনার দুর্যোগকালীন এ সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় নৌযানের মাধ্যমে পাথর নদীপথে সাপ্লাই দেয়ার জন্য মুলাগুল বাজার ও কান্দলা নয়া বাজারে ইতিমধ্যে কয়েক’শ পাথর শ্রমিক নেত্রকোণা, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ থেকে এনে জড়ো করেছেন। এতে করে বাজারের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অনেকের মধ্যে এক ধরনের আতংক বিরাজ করছে। তারা বলেছেন, কানাইঘাট উপজেলা এমনিতেই করোনার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, এরমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিক ও নৌযান কোয়ারী এলাকায় অবস্থান করলে এলাকায় করোনার প্রাদুর্ভাব মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা প্রশাসন কোয়ারী থেকে সব ধরনের পাথর সাপ্লাই বন্ধে কঠোর থাকলেও রাতের আঁধারে অনেক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা ইঞ্জিন চালিত বাহন দিয়ে পাথর সাপ্লাই করেছেন এবং গত কয়েকদিনে রয়্যেলিটির নামে তারা পাথর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
অনেক ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তারা লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে কোয়ারী থেকে পাথর তুলে মজুদ করে রেখেছেন। মজুদকৃত পাথর এই মৌসুমে তারা নদীপথে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে থাকেন। কোয়ারীর ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে প্রশাসনের বাধার কারণে পাথর বিক্রি করতে পারছেন না। এ ব্যাপারে তড়িৎ প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করে ব্যবসায়ীরা যাতে করে পাথর সাপ্লাই দিতে পারেন এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন।