সুপার সাইক্লোন আম্ফানের আঘাতের রেশ কাটার আগেই উত্তরের জেলা জয়পুরহাটসহ দেশের কয়েকটি জেলায় আঘাত হেনেছে ভয়াবহ ঝড়। গত মঙ্গলবার রাতের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে জয়পুরহাটের ২০ গ্রামের হাজারের বেশি ঘরবাড়ি। ভেঙে গেছে শত শত গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর বোরো ধান। বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ। এ ছাড়া কয়েক হাজার গাছপালা উপড়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। বগুড়ায় ঝড়ে গাছ পড়ে ঘর ভেঙে ঘুমন্ত অবস্থায় এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন। রাজধানীতে বয়ে যায় তীব্র কালবৈশাখী, যার বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮৩ কিলোমিটার। এই ঝড়ে ঢাকায় অন্তত ১০টি স্থানে গাছপালা ভেঙে পড়ে। রাজধানীর বাইরে সিলেটে কালবৈশাখী হানা দিয়েছে; সেখানে ৭৮ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়।
অন্যদিকে সুপার সাইক্লোন আম্ফান চলে যাওয়ার পর একে একে সামনে আসছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। কারো ঘর ভেঙেছে, কারো নষ্ট হয়েছে ফসল, কারো আবার চিংড়ির ঘর ভেসে গেছে পানির তীব্র স্রোতে। আম্ফানের কারণে কপাল পুড়েছে অনেক আম ও লিচু চাষির। কোথাও বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম।
জানা যায়, সিডর, ফণী, বুলবুলের চেয়েও যশোরে বেশি ক্ষতি হয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ফসলের। সবজি, আম, লিচু, পানসহ মোট ৩২ হাজার ৫১৬ হেক্টর জমির ফল ও ফসল নষ্ট হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী জেলায় ২২ হাজার ৭১৫টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ৬১ হাজার ঘরবাড়ি। কৃষি বিভাগে ক্ষতির পরিমাণ ১৩৭ কোটি ৬১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। মৎস্য বিভাগে ক্ষতির পরিমাণ ১৭৬ কোটি তিন লাখ টাকা। প্রাণিসম্পদের ক্ষতি হয়েছে ৭৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া ৮১ কিলোমিটার সড়ক ও ৫৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাগেরহাটে এখনো এক হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩০০ মিটার বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ, মোল্লাহাট ও চিতলমারীতে নদী পারে আট কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
এখন ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সে ব্যবস্থা নেবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।