যতই ঝড়-ঝঞ্ঝা আসুক, বাধা আসুক কাটিয়ে উঠতে পারব – প্রধানমন্ত্রী

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দুর্যোগ কাটিয়ে উঠে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যতই ঝড়-ঝাঞ্ঝা আসুক, বাধা আসুক কাটিয়ে উঠতে পারব। এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারব। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠকে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাজেট চূড়ান্ত করা হয়েছে। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্পোরেশনের ৮৯টি প্রকল্পে প্রায় ৯ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন করে এনইসি। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ এডিপির মোট আকার দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ ১৪ হাজার ৬১১ কোটি টাকা।
করোনাভাইরাস সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘ভার্চুয়ালি’ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার গণভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও সচিবরা এনইসি সম্মেলন কেন্দ্র থেকে এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। এনইসি সভায় গণভবন থেকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান অংশ নেন। অন্যদিকে এনইসি সভায় অংশ নেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান প্রমুখ।
অনুমোদিত এডিপির মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা ও বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা খরচ করা হবে। এর মধ্য দিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ। এনইসি সভায় যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা দুর্যোগের মধ্যে আরেক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড়। এই দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখিয়েছে। সেই সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। তাছাড়া আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছি। তিনি বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হবে। শুরু থেকেই আমরা কাজ করে যাচ্ছিলাম। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের মতো দুর্যোগ চলে এলো। এরপর আবার ঘূর্ণিঝড়। যতই আঘাত আসুক, ঝড়-ঝান্ডা আসুক, বাধা আসুক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমস্যা চিরদিন থাকে না। এক সময় নিশ্চয়ই এটা কাটিয়ে উঠতে পারব। সবকিছু আমাদের সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। এটাই মাথায় রাখতে হবে দুর্যোগ আসতে পারে, কিন্তু সেটাকে মোকাবেলা করে আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখব।
সভা শেষে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এটি ঐতিহাসিক সভা এই দিক থেকে এই প্রথম আমরা ভার্চুয়াল সভা করলাম। দুনিয়াতে যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, এভাবেই কাজ করতে হবে মনে হচ্ছে। পশ্চিমারা অনেকেই এভাবেই কাজ করছেন। আসন্ন অর্থবছরের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা বাজেট পেশ করতে হবে। বাজেটে বড় অংশ রাজস্ব আরেকটি উন্নয়ন বাজেট। উন্নয়ন বাজেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জনগণ তাকিয়ে থাকে। উন্নয়ন অংশ আমরা তৈরি করেছি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সমন্বয়ের কাজটি করেছে। প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ নিয়েও কথা বলেন। আমাদের বিভিন্ন কর্মকর্তা, ডাক্তার নার্স এদের ভূমিকা নিয়ে ধন্যবাদ দিয়েছেন। আমাদেরও ধন্যবাদ দিয়েছেন এমন সময়েও কর্মকর্তারা এটি তৈরি করেছেন সেজন্য। এ সময় বিভিন্ন খাত ও মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বরাদ্দ তুলে ধরেন মন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দারিদ্র্য নিরসন ও জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের লক্ষ্য সামনে রেখে সরকার প্রতিবারের মতো এ বছরও দেশজ সম্পদ, বৈদেশিক অর্থায়ন ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে এডিপি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। এডিপির সফল বাস্তবায়ন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মন্ত্রী বলেন, জনগণের চাহিদা অনুযায়ী, প্রয়োজন অনুযায়ী আরও প্রকল্প দেবেন সেটিও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
জানা গেছে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় ১২ হাজার ২২৪ কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে নতুন এডিপিতে। ফলে নতুন এডিপিতে ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতসহ সরকারের চলমান ৭ মেগাপ্রকল্পকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবারের এডিপি। আর সেভাবেই তৈরি হবে সরকারের নতুন অর্থবছরের বাজেট। আগামী ১১ জুন জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হবে। এর আগে ১২ মে পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। জানা গেছে, খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকছে পরিবহন খাতে। এ খাতে প্রায় ৫২ হাজার ১৮৩ কোটি (২৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ) টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরপর ধারাবাহিকভাবে ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ গৃহায়ন খাতে প্রায় ২৫ হাজার ৭৯৫ কোটি (১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ), বিদ্যুত প্রায় ২৪ হাজার ৮০৪ কোটি (১২ দশমিক ০৯ শতাংশ), শিক্ষা ও ধর্ম খাতে প্রায় ২৩ হাজার ৩৯০ কোটি (১১ দশমিক ৪০ শতাংশ), বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে প্রায় ১৮ হাজার ৪৪৮ কোটি (৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ), গ্রামীণ অর্থনীতি ও পরিবার কল্যাণ খাতে প্রায় ১৩ হাজার ৩৩ কোটি (৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ), কৃষিতে প্রায় ৮ হাজার ৩৮২ কোটি (৪ দশমিক ০৯ শতাংশ), পানি সম্পদে প্রায় ৫ হাজার ৫২৭ কোটি (২ দশমিক ৬৯ শতাংশ) এবং জনপ্রশাসনে প্রায় ৪ হাজার ৪৮ কোটি (১ দশমিক ৯৭ শতাংশ) টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ স্থানীয় সরকার বিভাগ ৩১ হাজার ১৩১ কোটি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২৪ হাজার ৮২৫ কোটি, বিদ্যুত বিভাগ ২৪ হাজার ৮০৪ কোটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১৭ হাজার ৩৮৯ কোটি, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ৪৯১ কোটি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ১০ হাজার ৫৪ কোটি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৯ হাজার ৮৬৫ কোটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৯ হাজার ৪০৪ কোটি, সেতু বিভাগ ৭ হাজার ৯৭৩ কোটি এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় পাচ্ছে ৬ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা।
এছাড়াও সরকারের চলমান সাত মেগাপ্রকল্পের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৫ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা। মেট্রোরেল প্রকল্পে বরাদ্দ ৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। মহেশখালী মাতারবাড়ির কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুত প্রকল্পে বরাদ্দ ৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। পয়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে ৩৫০ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পে বরাদ্দ ১৫০০ কোটি টাকা।
করোনাভাইরাসের কারণে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে কমছে উন্নয়ন প্রকল্প। বরাদ্দসহ অনুমোদিত প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে ১ হাজার ৫৮৮টি (স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া)। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৪৪টি। ফলে নতুন অর্থবছরে কমছে ১৫৬টি উন্নয়ন প্রকল্প।