স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতা এলাকা থেকে স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল ছিনতাইর ঘটনায় আলোচিত মহিলা পকেট চোর সীমা বেগম পপিকে (৩৫) আবারও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগেও কয়েকবার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই ও চুরিকালে গ্রেফতার হয় পপি। সর্বশেষ গতকাল রবিবার দুপুরে হাসপাতালে আসা এক রোগীর স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়ার সময় তাকে নাতে-নাতে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত পপির বাড়ি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার বামুরা গ্রামে। বর্তমানে সে নগরীর শাহজালাল উপশহরের এইচ ব্লকের ৪ নং রোডের বিলের পার এলাকায় তার নিজের গড়ে তুলা ৫ তলা বাসায় স্বামী ও এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন।
পুলিশ বলছে- মানুষের পকেট কাটার পাশাপাশি গ্রেফতারকৃত পপি জড়িয়ে আছে মাদক ব্যবসা, অসামাজিক কর্যকলাপ, মারধর ও ছিনতাইসহ নানা অনৈতিক কাজে। বার বার ধরা খান পুলিশ ও জনতার হাতে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে দ্রুত বেরিয়ে আসেন জেল-হাজত থেকে। ফেরেন পুরনো অন্ধকার জগতে। পুলিশ আরো বলেছে, উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ ও সাক্ষীর অভাবে পপি দ্রুত জামিন পান।
পুলিশ ও ছিনতাইর শিকার হওয়া সূত্রে জানা গেছে, রবিবার দুপুর দেড়টার ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভ্যাকসিন নিতে আসেন এক বৃদ্ধ মহিলা। লিফটে করে ৫তলায় ওঠার সময় তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল পপি। এ সময় বৃদ্ধাকে ধরে রাখার ভান করে মুহুর্তে কৌশলে তার দুই ভরি ওজনের গলার হার ও কানের স্বর্ণের দোল খুলে নেয় পপি। লিফট থেকে বেরিয়েই ফাহমিদা নামের আরেক মহিলার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করতে গিয়ে হাতে-নাতে ধরা পড়ে আলোচিত পপি। এ সময় পপি হাত থেকে টাকা নিচে ফেলে দিয়ে নিজেকে সাধু প্রমাণ করতে গেলেও জনতা তাকে আটক করে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের হাতে তুলে দেন। খবর পেয়ে ওসমানী হাসপাতালের ফাঁড়ির পুলিশ গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। তবে বৃদ্ধার চুরি হওয়া স্বর্ণালঙ্কার পপির কাছ থেকে উদ্ধার করা যায়নি। পরে বিকেলে পপিকে কোতোয়ালি মডেল থানায় নিয়ে আসা হয়। আনসার সদস্যরা জানিয়েছেন, এর আগে পপিকে চুরি-ছিনতাইর ঘটনায় আরো ৩ বার গ্রেফতার করা হয়েছিল।
অভিযোগ রয়েছে- পপি জিনিসপত্র চুরি করে দ্রুত তার চক্রের সদস্যদের হাতে পাচার করে দেয়। যার করণে পরবর্তীতে তল্লাশি চালালেও তার কাছ থেকে কিছু উদ্ধার করা সম্ভব হয় না।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আলী মাহমুদ জানান, যারা চুরির অভিযোগ করছেন তাদের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সীমা বেগম পপি নগরীর শাহজালাল উপশহরের এইচ ব্লকের ৪ নং রোডের বিলের পার এলাকায় গড়ে তুলেছেন ৫ তলা বাসা। সেখানে পরিবার নিয়ে থাকেন পপি। সেখানে রাত-দিন রয়েছে পরিচিত-অপরিচিত মানুষের আনাগুনা। বাসার পাশেই পপি একটি মোদি দোকান ও খামার রয়েছে। তার স্বামী সেই দোকান ও খামার দেখাশুনা করেন। আর ওসমানী হাসপাতাল এবং নগরীর জিন্দাবাজার ও বন্দরবাজারে পকেটমার হিসেবে পপির পরিচিতি। বিশেষ করে ওসমানী হাসপাতালে তার দৌরাত্ম্য বেশি। সকাল হলেই বোরকা পরে নগরীর অলিগলি ও পথের পাশাপাশি বিভিন্ন মার্কেটে ঢুঁঁ মারেন তিনি। ঘুরে বেড়ান ওসমানীসহ সরকারি-বেসরকাীর বিভিন্ন হাসপাতালে। সুযোগ বুঝে কৌশলে ছিনিয়ে নেন স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন ও টাকা-পায়সা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন পপি। কিন্তু প্রত্যেকবারই জেল থেকে বেরিয়েই পুরোনো পেশায় যুক্ত হন।
পুলিশ জানায়, পপির বিরুদ্ধে এসএমপি শাহপরান থানাসহ বিভিন্ন থানায় অগনিত মামলা রয়েছে। তার মূল পেশা চুরি। কিন্তু পাশাপাশি ছিনতাই, অসামাজিক কাজ, মাদক কেনাবেচার নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তিনি। ২০১৯ সালের ৩০ মে নগরীর জিন্দাবাজার থেকে পপি ও তার সহযোগী স্বপ্নাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন পুলিশ প্রসিকিউশনের মাধ্যমে আদালতে প্রেরণ করে। ওইদিনই তারা বেরিয়ে আসেন জামিনে। একই বছর ৩০ জুন নগরীর জিন্দাবাজার সিটি সেন্টারের সামনে থেকে স্বপ্না ও পপিকে আবার গ্রেফতার করে পুলিশ। থানা হাজতে তাদেরকে এক রাত আটকেও রাখা হয়। পরে রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। প্রসিকিউশনের মাধ্যমে তাদেরকে আদালতে হাজির করা হলে সেখান থেকে সহজেই বের হয়ে আসেন পপি ও স্বপ্না। বিভিন্ন সময় আরও অন্ততঃ ৫ বার পুলিশ এবং জনতার হাতে ধরা খয়েছেন পপি। কিন্তু কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না তার অপকর্ম। এছাড়াও একটি মারামারির ঘটনায় শাহপরাণ থানায় পপির বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। থানা সূত্রে জানা গেছে, ওই মামলায় চার্জশিটও হয়েছে। পপি একটি কিশোর গ্যাং পোষেন বলেও জানা গেছে।