কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ পবিত্র রমজানের ২১তম দিবস। দেখতে দেখতে দুটি দশক পার করে এসেছি আমরা। আজ সমাপনী দশকে পদার্পণ। রোজাদারের জন্য এ দশকটির মর্যাদা অতুলনীয়। এমনিতেই মাহে রমজানের ত্রিশ দিনের প্রতি দশ দিনই মুমিন মুসলমানদের জন্য বড় নেয়ামত স্বরূপ। ১ম দশ দিন রহমত, ২য় দশ দিন মাগফিরাত ও ৩য় দশ দিন নাজাতের। নাজাতের দশ দিন তথা শেষ দশ দিন সর্বাধিক ফজিলত সম্পন্ন। এই দশ দিনের মধ্যেই রয়েছে আলাহর অশেষ নেয়ামত ও করুনার রজনী লাইলাতুল ক্বদর। তজরীদ নামক গ্রন্থে হযরত আয়েশার (রা.) উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যখন রমজান মাসের শেষ দশদিন আরম্ভ হতো তখন রাসূলে খোদা (স.) স্বয়ং জেগে থাকতেন, পরিবার পরিজনদের জাগিয়ে রাখতেন, রাতভর জেগে থেকে ইবাদত বন্দেগী করতেন, ক্বদরের রাত্রি তালাশ করতেন। যে রাত হাজার রাতের চেয়েও উত্তম। আলাহপাক সূরা ক্বদরে ইরশাদ করেছেন: ইন্না আনযালনাহু ফী লাইলাতিল ক্বদর। ওয়ামা আদরাকামা লাইলাতুল ক্বদর। লাইলাতুল ক্বদরি খায়রুম মিন আলফি শাহর…। অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমি এ কিতাব নাযিল করেছি ক্বদর রজনীতে। আপনি জানেন কি লাইলাতুল ক্বদরের মর্যাদা কি? লাইলাতুল ক্বদর হাজার মাসের চেয়ে সেরা। এতে ফেরেশতাগণ ও পবিত্র আত্মা (জিব্রাইল (আ.) তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে প্রত্যেকটি কাজের (নির্দেশ নিয়ে) অবতীর্ণ হন। উল্লেখ্য, কোন রজনী কিংবা মাসের গুরুত্ব বুঝানোর জন কোরানে কোন সূরা নাযিল হয়নি, একমাত্র শব-ই ক্বদরের ফজিলত বুঝানোর জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল হয়েছে।
আর লাইতুল ক্বদর রমজান মাসের শেষ দশ দিনের যে কোন বেজোড় রাত্রি হতে পারে, তাই রমজানের শেষ দশ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাসূলে করীম (স.) বলেছেন: তোমরা এ মাসের শেষ দশ দিনের বেজোড় তারিখের রাত্রিসমূহে ক্বদরের রাত্রি তালাশ কর। হুজুরে করীম (স.) রমজানের শেষ দশদিনে ইতিকাফ থাকতেন। উম্মতে মুহম্মাদির জন্য তাই ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ আলাল কিফায়া। বুখারী ও মুসলিম শরীফে উম্মুল মু’মেনীন হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, মহান ও পরাক্রমশালী আলাহ নবী করীম (স.)কে ওফাত দান করার আগ পর্যন্ত তিনি নিয়মিতভাবে শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। তারপর তার পবিত্র স্ত্রীগণ ইতিকাফ করতেন। উম্মতের সাধক পুরুষ বুজুর্গানে দ্বীন এ পুণ্যধারা আজও অব্যাহত রেখেছেন। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে পুরুষ মুসল্লিদের মসজিদে মসজিদে ইতিকাফ এবং মহিলারা তাদের ঘরের কোন উত্তম কামরায় ইতিকাফকরণ। হুজুরে করীম (স.) ইরশাদ করেছেন : শেষ ভাল যার সব ভাল তার। রহমতের প্রথম দশদিনের পর আসে মাগফিরাতের দশদিন, এই বিশদিনের ইবাদতের পর আসে নাজাতের দশ দিনের শেষ সুযোগ। এ সময় কঠোর সাধনার মাধ্যমে পবিত্র রমজানের পরিসমাপ্তিতে রয়েছে মুমিন জীবনের পরম সার্থকতা।
অতএব রমজানের শেষ দশদিন তথা নাজাতের দিনসমূহে আমাদের একনিষ্ঠভাবে রোজা পালন, তারাবি, ইতিকাফ, লাইলাতুল ক্বদর অন্বেষণ ও বেশি বেশি নফল ইবাদত করা প্রয়োজন। এছাড়া আজ ২১ রমজান ঐতিহাসিক মক্কা বিজয় দিবস। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে রোজাদার সাহাবীগণ অনেকটা রক্তপাতহীনভাবে মক্কা নগরীতে প্রবেশ করেন এবং বিজয় নিশান উড়ান। এদিন মহানবী ভিন্ন মতাবলম্বী মক্কাবাসীদের সঙ্গে যে অহিংস ও ক্ষমা সুন্দর ব্যবহার দেখিয়েছেন তা দুনিয়ার বিজয় ইতিহাসে বিরল। কোরানুল কারীমেও এ ঐতিহাসিক বিজয়ের প্রশংসাগাথা বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়া এ দশকে রয়েছে জুমাতুল বিদা, অধিকাংশ বড় বড় মসজিদে খতমে তারাবির আখেরী মুনাজাত। সবশেষে ঈদপূর্ব রাত্রিতে মুমিন মুসলমানদের ইবাদত বন্দেগী ও রাত্রি জাগরণের মাধ্যমে বিশেষ মর্তবা লাভের সুযোগ। হাদীস শরীফে আছে, এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ অসংখ্য দোজখিকে তাদের ইবাদত ও তওবার কারণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতের তালিকাভুক্ত করেন। আর রমজানের একা শেষ রাত্রিতে গোটা মাসের সমপরিমাণ জাহান্নামীকে মুক্তি দেন।
কেউ কেউ বলে থাকেন এ দশক ইহতিসাব বা আত্মসমালোচনারও। আসুন গত ২ দশকের ইবাদত বন্দেগীর অবস্থা বিবেচনা করে ইহতিসাবে উপনীত হই। আলাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদেরকে যেন এই দিনগুলো সুষ্ঠুভাবে অতিবাহিত করে তার নাজাতের ভাগী হওয়ার তওফিক দান করেন। আমীন।