কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মুখে দেশে অঘোষিত লকডাউনের এক মাস পূর্ণ হয়েছে গতকাল শনিবার (২৫ এপ্রিল)। এই এক মাসে করোনার সংক্রমণ যেভাবে বেড়েছে, একই সঙ্গে বেড়েছে অর্থনৈতিক স্থবিরতা। রাস্তায়-রাস্তায় ত্রাণের জন্য অপেক্ষমান অসহায় মানুষ। দিন দিন ভিড় বেড়েই চলেছে।
সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ায় গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই ভাষণে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ ঘোষণা করেন তিনি। তবে এ সময় কাঁচা বাজার, খাবার ও ওষুধের দোকান এবং হাসপাতালসহ জরুরি সেবা কার্যক্রম চালু রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু দেশে দিন দিন করোনার সংক্রমণ বাড়ায় সরকার পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় পাঁচ দফা ছুটি বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে।
দীর্ঘ এ সময়ে দেশে করোনা আক্রান্ত ও তাতে মৃত্যুর সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে। শনিবার পর্যন্ত সরকারি হিসেবে করোনা ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে মোট ১৪০ জনের। আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৯৮ জনে। এখন পর্যন্ত দেশের ৬০টি জেলায় এ ভাইরাস ছড়িয়েছে।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে দিন-রাত কাজ করছেন স্বাস্থ্যকর্মীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও প্রশাসনের সদস্যরা।
এদিকে করোনার দেশ কার্যত লকডাউন থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। বড়, ক্ষুদ্র, মাঝারি সব স্তরের ব্যবসাযই ক্ষতির মুখে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের পোশাক শিল্প। করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশের তৈরি পোশাকখাতের এক হাজার ১৪৬টি কারখানায় ৩.১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রফতানি আদেশ বাতিল হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কারখানার মালিক ও শ্রমিকরা। এসব কারখানাৎ ২২ লাখ ৭০ হাজার শ্রমিক বেকার হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
উদ্ভূত অর্থনৈতিক বাস্তবতা মোকাবিলায় গত ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব মোকাবিলায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করছি। এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক গতিশীলতা অব্যাহত থাকবে। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।
করোনা পরিস্থিতি ও সরকারের প্রণোদনা প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা বৈশ্বিক অর্থনীতিসহ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতোমধ্যেই বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, রেমিট্যান্স, আমদানি ও রপ্তানি, ট্রান্সপোর্ট খাত ও ট্যুরিজম খাতে প্রভাব পড়েছে। করোনা আমাদের অর্থনীতির জন্য হতাশার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ থেকে উত্তরণে সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন তার যথাযথ বাস্তবায়ন হলে সময় নিয়ে হলেও দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে আশাবাদ তাদের।
তবে দিন যত যাচ্ছে বেকারত্ব, অসহায় দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষের হাহাকার বেড়েই চলেছে রাজধানীসহ সারাদেশে। লকডাউনের মধ্যে বেকার হয়ে পড়া অসহায় খেটে খাওয়া মানুষগুলো প্রতিনিয়ত ত্রাণের আশায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভিড় করছেন। লকডাউনের শুরুর দিকে বেশ কিছু সংগঠন অসহায় মানুষকে ত্রাণ দিতে দেখা গেলেও, সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেসব তৎপরতা কমে এসেছে। সব মিলিয়ে সংকটের মধ্য দিন কাটছে অসহায় ও কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষগুলোর।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে সর্বপ্রথম করোনা ভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়। পরে ক্রমাগত সে সংখ্যা বাড়তে থাকায় ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব স্কুল, কলেজ ও কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়। স্থগিত হয় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। এছাড়া ১৯ মার্চ থেকে বিদেশ হতে আগত সব যাত্রীর জন্য বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে সরকার।