করোনাভাইরাস সন্দেহে শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যুক্তরাজ্য প্রবাসী বৃদ্ধার মৃত্যু ॥ আক্রান্ত সন্দেহে আরো ৪ জন আইসোলেশনে ॥ জরুরী বৈঠকে শীর্ষ কর্মকর্তারা

4
করোনা সন্দেহে মৃত্যুবরণকারী বৃদ্ধার লাশ পুলিশ প্রহরায় এম্ব্যুালেন্সে করে হযরত মানিক পীর (র.) কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি- মামুন হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটে এই প্রথম করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে থাকা যুক্তরাজ্য প্রবাসী এক বৃদ্ধার (৬১) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রবিবার ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে শহীদ শামসুদ্দীন হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত বৃদ্ধার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার পাটলী গ্রামে। বর্তমানে তিনি নগরীর শামীমাবাদ আবাসিক এলাকার একটি ভাড়াটে বাসায় বাসিন্দা ছিলেন।
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানান, জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত শুক্রবার ওই বৃদ্ধা মহিলা শহীদ শামসুদ্দীন হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি হন। গত ৪ মার্চ তিনি যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছিলেন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কি না গতকাল রবিবার আইইডিসিআর এর একটি টিম এসে তার রক্তের নমুনা সংগ্রহের কথা ছিল।

সিলেটের শামসুদ্দিন হাসপাতালের আইসোলেশনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে চিকিৎসাধীন যুক্তরাজ্য প্রবাসী নারীর মৃত্যুর খবরের পর নগরীতে জন ও যান চলাচল সীমিত হয়ে যায়।

এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) গাইড লাইন অনুযায়ী মৃত্যুবরণকারী ওই মহিলাকে কঠোর সর্তকতার মধ্যে দিয়ে গতকাল রবিবার দুপুর দেড়টার দিকে নগরীর হযরত মানিকপীর (র.) গোরস্থানে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা: প্রেমানন্দ মন্ডল ও কয়েক জন পুলিশের উপস্থিতিতে দাফন সম্পন্ন হয়। সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: নুরে আলম শামীম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ডাব্লিউএইচও’র সংক্রমণ বিধি গাইড লাইন অনুযায়ী তাকে দাফন করা হয়েছে। এর আগে ওই মহিলার আত্মীয়রা জানাযাও পড়েছেন।
অপরদিকে, কোয়ারেন্টাইন করা হবে শোনেই বাসায় তালা দিয়ে পালিয়েছেন মারা যাওয়া সেই বৃদ্ধার স্বজনরা। রবিবার বিকেলে নগরীর শামীমাবাদ এলাকায় ওই নারীর বাসায় পুলিশ নিয়ে যান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একজন ম্যাজিস্ট্রেট। এ সময় বাসায় গিয়ে তারা কাউকে পাননি। দরজা তালাবদ্ধ দেখতে পান। এর আগে দুপুরে সংক্রমণ বিধি মেনে বৃদ্ধার দাফনের পরই সিভিল সার্জন ঘোষণা দেন, ওই বৃদ্ধা মহিলার স্বজন ও তার কাছাকাছি আসা সকলকে কোয়ারেন্টাইন করা হবে। এই ঘোষণার পরই বাসায় তালা দিয়ে পালিয়েছেন মারা যাওয়া সেই বৃদ্ধার স্বজনরা।
তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, মৃত্যুবরণকারী ওই বৃদ্ধা মহিলার পরিবারের ৩ সদস্যকে হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তবে তাদের শরীরে করোনা ভাইরাসের কোন লক্ষণ দেখা যায়নি।
কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সৌমেন মৈত্র জানান, ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে পুলিশের একটি দল ওই বাসায় গিয়েছিলো। তবে বাসায় কাউকে পাওয়া যায়নি।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, বিকেলে পুলিশ নিয়ে আমাদের একজন ম্যাজিস্ট্রেট নগরীর শামীমাবাদে ওই বৃদ্ধার বাসায় গিয়েছিলেন। তবে বাসায় গিয়ে তারা কাউকে পাননি। দরজা তালাবদ্ধ ছিলো। তবে তার একজন স্বজনের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে সবাইকে বাসায় আসতে বলা হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের ১০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ বলেন, মারা যাওয়া বৃদ্ধার মূল বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরের পাটলি গ্রামে। তিনি শামীমাবাদের হলিভিউ আবাসিক এলাকার ছয়ফুল ইসলাম কমপ্লেক্সে ভাড়া থাকতেন। স্বামীর সাথে দেশে এসেছেন তিনি। তাদের সন্তানরা যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। এই বাসায় তাদের নাতি সম্পর্কিত আরেকজন স্বজন থাকেন। তবে সদ্য যুক্তরাজ্য থেকে ফেরায় প্রতিবেশি কারো সাথে তাদের তেমন কোনো সখ্যতা ছিলো না। দেশে আসার পর তিনি জগন্নাথপুরে গ্রামের বাড়িতেও কিছুদিন ছিলেন বলে শুনেছি।
আক্রান্ত সন্দেহে আরো ৪ জন আইসোলেশনে: করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে সিলেটে ৪ জনকে হাসপাতালে রাখা হয়েছে। নগরীর শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইনে আছেন তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান। এরই মধ্যে আরেকজনকে রবিবার করোনা সন্দেহে ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে হাসপাতালের করোনা সন্দেহে রোগীর সংখ্যা পুনরায় ৪ এ দাঁড়ালো। এরমধ্যে ৩ জন পুরুষ ও একজন নারী রয়েছেন। এর মাঝে এক কিশোরের বাড়ী সিলেটের গোয়াইনঘাটে। সিঙ্গাপুর ফেরত চাচাতো ভাইয়ের সংস্পর্শে যাওয়ার পর সে জ্বরে আক্রান্ত হয়। এরপর ১৮ মার্চ রাতে তাকে হাসপাতালে এনে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তবে তার শারীরিক অবস্থা ভালো আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
জরুরী বৈঠকে শীর্ষ কর্মকর্তারা: সিলেটে করোনা ভাইরাস সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তি এক যুক্তরাজ্য প্রবাসী বৃদ্ধা মহিলার মৃত্যুর পর জরুরী বৈঠকে বসেছেন সিলেট বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো: মশিউর রহমান এনডিসি এ বৈঠক ডেকেছেন। বৈঠকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছাড়াও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা অংশ নিন। এছাড়া বৈঠকে সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগীয় পরিচালক ডা: দেবপদ রায় ও সিভিল সার্জন ডা: প্রেমানন্দ মন্ডলও অংশ নেবেন বলে জানান সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: নুরে আলম শামীম। এর আগে তিনি জানান, প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হিসাবে সিলেটে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি কোনভাবে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।