ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী ॥ লাভ নেন, কিন্তু ভেজাল দেবেন কেন

102
কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে প্রদর্শনী মেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভেজাল রোধে তার সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে বলেছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে সফলতা অর্জন করেছি। এখন মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। খাদ্যে ভেজাল দেয়াও এক ধরনের দুর্নীতি, এর বিরুদ্ধেও অভিযান চলছে। খাদ্যে ভেজাল রোধে দেশে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিশেষ ল্যাবরেটরি (পরীক্ষাগার) প্রতিষ্ঠা করা হবে। আর দেশের সব বিভাগীয় শহরে এর শাখা থাকবে। যাতে করে যে কোন জায়গায় যে কোন ভেজাল খাবার যেন সঙ্গে সঙ্গে আমরা পরীক্ষা করে দেখতে পারি। খাদ্যের নামে বিষ খেয়ে আমাদের দেশের কোন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হোক, এটা আমরা চাই না।
নিরাপদ খাদ্য দিবস-’১৯ উপলক্ষে রবিবার রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ যদি সচেতন থাকে, তবে কেউ তাদের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারবে না। তাই অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি এ বিষয়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্যে ভেজাল দেয়াটা মনে হয় কিছু শ্রেণীর একটি চরিত্রগত বদ অভ্যাস। এটা বন্ধ করতে হবে। এই ভেজাল খাদ্য খেলে তো মানুষের উপকার নয়, অপকারই হয়। দেশে ভেজাল খাদ্যবিরোধী অভিযান চলছে এবং এটিকে ভালভাবে পরিচালনার জন্য আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে নিয়ে একটি আলাদা কতৃর্পক্ষ করে দিয়েছি এবং তাদের লোকবলের যে সমস্যা রয়েছে সে সমস্যা আমরা দূর করে দেব। হাটে, মাঠে, ঘাটে সর্বত্রই যেন এই ভেজাল বিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকে তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও নেব।
শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন হোটেল-রেস্তরাঁয় ভেজাল, বাসি বা পচা খাবার সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে। এখানে নাগরিক সচেতনতা একান্তভাবে দরকার। জনগণ যদি সচেতন হয় তাহলে তাদেরকে এভাবে কেউ ঠকাতে পারবে না। তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা একটু লাভ যদি নিতে চান লাভ নেন, কিন্তু ভাল জিনিসটা দেন, ভেজাল কেন দেবেন? খারাপভাবে মানুষকে ঠকিয়ে, মানুষের জীবন ধ্বংস করার অধিকার কারো নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে আমরা নিরাপদ খাদ্য আইন ’১৩ প্রণয়ন করেছি এবং আমরা চাই আমাদের দেশের মানুষকে নিরাপদ খাদ্য দেব। তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধান করার কথা বলেছি। নির্বাচনী ইশতেহার যথাযথভাবে পূরণ এবং সেটা আমরা বাস্তবায়ন করব। তিনি বলেন, জনগণ ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছেন সেই ভোটের মর্যাদা যেমন আমরা রক্ষা করব, সেই সঙ্গে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাকেও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কারও কাছে হাত পেতে চলবে না, বাংলাদেশ বিশ্ব সভায় মাথা উঁচু করে চলবে। আমি জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ যে তারা আমাদের ওপর বিশ্বাস রেখেছেন, আস্থা রেখেছেন। আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা এটাই আমাদের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদিকে চিকিৎসা, অপরদিকে পুষ্টিকর খাদ্য। এই দুটোর সমন্বয় হলেই আমাদের দেশের মানুষ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, আজকের শিশু আগামী দিনের সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হোক। দরিদ্র মা বা কর্মজীবী মা, যারা সন্তানসম্ভবা তাদের আমরা ভাতা দিচ্ছি। আবার সন্তান প্রসবের পর মা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ায় তাকেও আমরা ভাতা দিচ্ছি। যাতে ওই শিশু একটু হƒষ্টপুষ্ট হয়। মাতৃত্বকালীন ছুটি আমি ৬ মাস করে দিয়েছি। এটা মাত্র ৩ মাস ছিল। প্রথমবার ক্ষমতায় এসে ৪ মাস করেছিলাম, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে ৬ মাস করে দিয়েছি। মা যাতে শিশুকে ভালভাবে লালন-পালন করে। ভবিষ্যত বংশধরদের যাতে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হয় সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। খাদ্য নিরাপত্তায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের খাদ্য খাওয়ার অভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন করতে হবে। পেট ভরে ভাত খাওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবারের দিকেও নজর দিতে হবে। কোন বন্যা বা কোন কিছু হলে কারও কাছে হাত পাততে হবে না।
এ সময় খাদ্যশস্য, মাছ-মাংস উৎপাদনের পরিমাণ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা যখন ’৯৬ সালে ক্ষমতায় আসি তখন দেখি মাত্র দুই ধরনের মাছ চাষ হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের যে বন্ধুবান্ধব, শিক্ষকরা ছিলেন তাদের বললাম আমাদের দেশী মাছ নিয়ে গবেষণা করতে। সেই গবেষণার জন্য বরাদ্দ দিয়েছিলাম। এখন অন্যান্য মাছের সঙ্গে মিষ্টি পানির মাছ উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ সময় সব বিষয়ে গবেষণা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার যে স্বপ্ন ছিল, তিনি সেটা পূরণ করে যেতে পারেননি। অকালে তাকে চলে যেতে হয়েছে।
এবারের নিরাপদ খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সুস্থ-সবল জাতি চাই, নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নাই’। এই প্রতিপাদ্যের প্রশংসাও করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নিরাপদ খাদ্য নিয়ে ক, খ ও গ বিভাগে যথাক্রমে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় প্রতিটি বিভাগে প্রথম তিনজনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। উদ্বোধন শেষে কেআইবি প্রাঙ্গণে নিরাপদ খাদ্যমেলা ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহাবুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থার চেয়ারম্যান মোঃ মাহফুজুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে দেশব্যাপী স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করেন।