কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশের কারাগারগুলো থেকে প্রিজনভ্যানে কোন আসামিকে আদালতে না নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বৃহস্পতিবার সব কারাগার কর্তৃপক্ষের প্রতি এ নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ মোকাবেলায় বিদেশ ফেরত প্রত্যেক ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে করোনা ভাইরাস ইস্যুতে কোর্ট বন্ধের আবেদনের বিষয়ে পরবর্তী শুনানি ২৩ মার্চ দিন ঠিক করেছে হাইকোর্ট। অন্যদিকে সংবিধানের ১৪১ এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণার জন্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেন সুপ্রীমকোর্টের তিন আইনজীবী।
দেশের কারাগারগুলো থেকে প্রিজনভ্যানে কোন আসামিকে আদালতে না নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। হাইকোর্টের স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আসামিদের জামিন বা জবানবন্দী শুনানির ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা। এদিকে সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্টার জেনারেল মোঃ আলী আকবর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, উপযুক্ত বিষয়ে নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে যে, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) জনিত দ্ভুত পরিস্থিতিতে কারাগার থেকে কারাবন্দী ও আসামিদের জামিন শুনানিকালে এবং মামলার অন্যান্য কার্যক্রমে আদালতে উপস্থিতকরণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বর্ণিতাবস্থায় জামিন শুনানিকালে এবং মামলার অন্যান্য কার্যক্রমে কারাবন্দী-আসামিদের কারাগার থেকে প্রিজনভ্যান বা অন্যকোনভাবে আদালত কক্ষে হাজির করা যাবে না। কারাবন্দী-আসামিদের কারাগারে রেখে জামিন শুনানি করতে হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মামলার কার্যক্রম মুলতবি করতে হবে। এমতাবস্থায় পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত দেশের অধস্তন আদালত সমূহে জামিন শুনানিকালে এবং মামলার অন্যান্য কার্যক্রমে কারাবন্দী-আসামিদের কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে বা অন্য কোনভাবে আদালত কক্ষে হাজির না করার নির্দেশ প্রদান করা হলো।
বিদেশ ফেরতদের কোয়ারেন্টাইনে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ : করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ মোকাবেলায় বিদেশ ফেরত প্রত্যেক ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ও পররাষ্ট্র সচিবকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ চার দফা নির্দেশনা দেন। অন্য তিন দফা নির্দেশনা হচ্ছেÑ বিদেশ ফেরত সবাইকে ১৪ দিন বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে। স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে হবে। বিদেশ ফেরতদের ও সন্দেহভাজনদের মেডিক্যাল চেকআপ/ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে করতে হবে। স্বাস্থ্য সচিব এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করবেন। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে কোয়ারেন্টাইনে রাখা ব্যক্তিদের তদারকি করতে জনপ্রশাসন সচিবের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এর আগে গত ১৫ মার্চ দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বাস্থ্যসচিব, শিক্ষাসচিব, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়। বৃহস্পতিবার এ রিটের ওপর শুনানি হয়। রিটের পক্ষে আইনজীবী ইউনুছ আলি আকন্দ নিজেই শুনানি করেন। আদালত এমিকাস কিউরি হিসেবে রেজা-ই রাব্বী খন্দকারের বক্তব্য শোনেন। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ এম আর চৌধুরী।
জরুরী অবস্থা ঘোষণা চেয়ে আবেদন : সংবিধানের ১৪১ এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণার জন্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেন সুপ্রীমকোর্টের তিন আইনজীবী। আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তার সঙ্গে রয়েছেন আইনজীবী আসাদ উদ্দিন ও জুবায়দুর রহমান।
আবেদনে বলা হয়, মরণব্যাধি করোনাভাইরাসের কারণে এরই মধ্যে বিশ্বের সাত দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। দিন দিন করোনাভাইরাস যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সংবিধানের ১৪১ এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। আবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারীর কারণ। এরই মধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লক্ষাধিক মানুষ এবং আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৯ হাজার মৃত্যুবরণ করেছেন। এটি অতিমাত্রায় সংক্রামক ভাইরাস।
এ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্ব। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, স্পেন, কানাডা ও বেলজিয়াম জাতীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশ মসজিদে নামাজ আদায় বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশেও এই সংক্রামক ভাইরাসের কবল থেকে মুক্ত নয়। এ পর্যন্ত ১৮ করোনা আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং আক্রান্তদের মধ্যে থেকে একজন মৃত্যুবরণ করেছে। হাজার হাজার মানুষকে কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে এবং সব খেলাধুলা স্থগিত করেছে। এই পরিস্থিতিতে জরুরী অবস্থা জারি করা হলে দেশ ও জাতি আসন্ন বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে রাষ্ট্রপতি পরবর্তী ঘোষণার মাধ্যমে ১৪১ক(২)(ক)-এর অধীনে জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার করা যেতে পারে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
কোর্ট বন্ধের আবেদনের পরবর্তী শুনানি ২৩ মার্চ : রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে করোনাভাইরাস ইস্যুতে কোর্ট বন্ধের আবেদনের বিষয়ে পরবর্তী শুনানি ২৩ মার্চ দিন ঠিক করেছে হাইকোর্ট। বিচারপতি আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মোঃ রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন ঠিক করেন। রিটের পক্ষে ছিলেন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আইন উদ্দিন ও সঙ্গে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী হুমায়ুন কবীর পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল দেবাশীষ ভট্টাচার্য।