কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আতঙ্কিত না হয়ে একাট্টা হয়ে আঞ্চলিকভাবে উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে একমত পোষণ হয়েছেন সার্কভুক্ত দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা। তাঁরা বলেছেন, সব দেশ একসঙ্গে কাজ করলে তবেই এই ভাইরাস সফলভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। বিশ্বব্যাপী মহামারীর আকার নেয়া করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সার্কভুক্ত দেশগুলো এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলায় ও নাগরিকদের রক্ষা করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোর বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি সার্কভুক্ত দেশগুলোকে এই অঞ্চলের মারাত্মক করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি ‘শক্তিশালী কৌশল’ তৈরি এবং নিবিড়ভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার আহ্বানও জানান।
অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রাণ সংহারক নোভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সার্ক তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, প্রাথমিকভাবে ভারত এক কোটি ডলার দিয়ে এই তহবিলের শুরুটা করতে পারে। এই তহবিলের অর্থ ব্যয় সমন্বয়ের কাজটি ভারতের দূতাবাসগুলো করতে পারে বলেও প্রস্তাব দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। সার্কভুক্ত অন্য দেশের নেতারাও এক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বিনিময়ের ওপর জোর দেন এবং এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দ্রুত উপায় খোঁজার তাগিদ দেয় সার্কভুক্ত দেশগুলোকে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণে রবিবার সার্কভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের এক ভিডিও কনফারেন্সে একসঙ্গে এই ভাইরাস মোকাবেলার ব্যাপারেও একমত পোষণ করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনুষ্ঠিত এই ভিডিও কনফারেন্সে তাঁরা এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে নিজেদের অভিমত তুলে ধরেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে আয়োজিত এই ভিডিও কনফারেন্সে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও যোগ দেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবে রাজাপাকসে, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জাফর মির্জা।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্কভুক্ত দেশগুলোকে এই অঞ্চলের মারাত্মক করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি ‘শক্তিশালী কৌশল’ তৈরি এবং নিবিড়ভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই জনস্বাস্থ্যের হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সার্কের ব্যাপক কৌশল অবলম্বন করা দরকার। তিনি বলেন, এই মহামারী মোকাবেলার জন্য সকল সার্কভুক্ত দেশকে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা এবং সহায়তা করা দরকার। আমাদের সম্মিলিত সক্ষমতা, দক্ষতা এবং সম্পদের সাহায্য এই সহযোগিতা তৈরি করতে হবে।
সম্মিলিতভাবে করোনা মহামারী মোকাবেলা করে সার্কভুক্ত দেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এ মহামারী মোকাবেলায় সার্কভুক্ত দেশগুলো সহযোগিতা ও সমন্বিত হয়ে কাজ করতে হবে। সমন্বয় করতে হবে আমাদের সম্মিলিত সামর্থ্য, অভিজ্ঞতা ও সম্পদ। লজিস্টিক সাপোর্টসহ সক্ষমতা, অভিজ্ঞতা এবং কার্যক্রম সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে শেয়ার করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত।
তিনি বলেন, আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, বর্তমান বিশ্বে আমরা সবাই সবার সঙ্গে সংযুক্ত। তাই রোগ নিয়ন্ত্রণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যাগুলো মোকাবেলায় আমাদের নিবিড়ভাবে সম্মিলিত হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবেলায় সার্কভুক্ত দেশের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে কার্যকর ভিডিও কনফারেন্স আয়োজনের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদও জানান।
প্রধানমন্ত্রী সার্ক দেশগুলোর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবদের নিয়ে এমন একটি ভিডিও কনফারেন্সের প্রস্তাব দেন, যাতে সবাই অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারেন। জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রতিরোধে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো যেন একসঙ্গে কাজ করতে পারে, সেজন্য একটি ইনস্টিটিউট গড়ে তোলারও প্রস্তাব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যেন ভবিষ্যতে কোন সমস্যা দেখা দিলে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি। নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারি। বাংলাদেশ এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারে, যদি আপনারা একমত হোন। আর একটি ফোরাম গঠন করা যেতে পারে। আমরা আমাদের বিশেষজ্ঞদের শেয়ার করতে প্রস্তুত আছি। লজিস্টিক সাপোর্ট দেব, যদি প্রয়োজন হয়।
তহবিল গঠনের প্রস্তাব মোদির : ভিডিও কনফারেন্সে নোভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সার্ক তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি চীন থেকে প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার কথাও বলেন। মোদি ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি ফান্ড’ গঠনের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, প্রাথমিকভাবে ভারত ১ কোটি ডলার দিয়ে এই তহবিলের শুরুটা করতে পারে। এই তহবিলের অর্থ ব্যয় সমন্বয়ের কাজটি ভারতের দূতাবাসগুলো করতে পারে বলেও প্রস্তাব দেন মোদি।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, আমরা চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি র্যাপিড রেসপন্স টিম গঠন, পরীক্ষা সামগ্রী এবং অন্যান্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করছি। তারা সব সময় প্রস্তুত থাকবেন; আপনাদের প্রয়োজন হলে ভারত থেকে তাদের পাঠানো হবে। তিনি বলেন, আমাদের একটি সাধারণ গবেষণা প্লাটফর্মও গঠন করার বিষয়ে ভাবা উচিত। এ ধরনের কাজের সমন্বয়ে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ সহায়তা করতে পারে। এছাড়া অর্থনীতির ওপর কোভিড-১৯’র দীর্ঘমেয়াদে প্রভাবের বিষয়েও বিশেষজ্ঞরা আমাদের সহায়তা করতে পারেন। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে সদস্য দেশগুলোকে সমন্বয় করে কাজের তাগিদ দিয়ে মোদি বলেন, এই মহামারী প্রথম নয় এমনকি শেষও নয়।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টি তুলে ধরে জরুরী এই পরিস্থিতিতে সার্ক নেতাদের দ্রুত উপায় খোঁজার তাগিদ দেন। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট গনি সাংহাই কর্পোরেশনে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে ভারতের থাকার বিষয়টি তুলে ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলায় চীনের অভিজ্ঞতা গ্রহণের পরামর্শ দেন। টেলিমেডিসিন সেবার একটি অভিন্ন রূপরেখা প্রণয়নের জন্য সার্ক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান আফগান প্রেসিডেন্ট।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জাফর মির্জাও সমন্বিত কাজের উপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা ভালটা আশা করলেও সবচেয়ে খারাপ অবস্থার জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে।’