শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো ৪টি হত্যা মামলা

3

কাজির বাজার ডেস্ক

কোটা সংস্কার ও সরকার পতনে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সাভারের বাইপাইলে হকার মো. শাহাবুল ইসলাম ওরফে শাওনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বাদীপক্ষের আইনজীবী হান্নান ভুইয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
নিহত শাওনের আত্মীয় পরিচয়ে মো. মজিবুল হোসেন বৃহস্পতিবার ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া সুলতানার আদালতে এই মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি নিয়ে আশুলিয়া থানাকে মামলার আবেদনটি নিয়মিত এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলায় আসামিদের মধ্যে আছেন সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শিল্প বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন-অর-রশীদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, ঢাকা ২০ আসনের সাবেক এমপি বেনজীর আহমেদ, ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক এমপি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক এমপি তালুকদার মোহাম্মদ শহীদ জং মুরাদ, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হাসান তুহিন, আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহŸায়ক কবির হোসেন সরকার, সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার, সাবেক সাভার পৌরসভার মেয়র আব্দুল গনি কুলু। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরো ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে মামলায়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৪ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন শাওন। আন্দোলনরত অবস্থায় আসামিদের গুলিতে ১১টার দিকে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
এ সময় ছাত্র-জনতা শাওনকে উদ্ধার করে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। দুপুর দেড়টার দিকে দায়িত্বরত চিকিৎসক শাওনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শফিকুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৪৫ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করা হয়েছে। নিহত শফিকুলের স্ত্রী তাছলিমা আক্তার বুধবার বাদী হয়ে আড়াইহাজার থানায় এই মামলা করেন।
বুধবার এই মামলার তথ্য সাংবাদিকদের দেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আমীর খসরু। মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, গোলাম দস্তগীর গাজী, নজরুল ইসলাম (বাবু), কায়সার হাসনাতকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভ‚ঁইয়া, আড়াইহাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সুন্দর আলী, ফেনী পৌরসভার সাবেক মেয়র আলাউদ্দিন প্রমুখ।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, ৫ আগস্ট তার স্বামী শফিকুল, ভাশুর-দেবরসহ সচেতন নাগরিক হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের নির্দেশে আসামিরা সন্ধ্যায় আড়াইহাজার উপজেলার বালুয়াকান্দী গ্রামে তার স্বামীকে গাল-মন্দ করতে থাকেন।
শফিকুল গালমন্দ করতে নিষেধ করায় আসামিদের নির্দেশে আনসার আলীর হুকুমে রিফাতের হাতে থাকা চায়নিজ কুড়াল দিয়ে কোপ দিয়ে তাকে জখম করা হয়। পরে আসামি ইয়াসিন তার স্বামীর মুখে গামছা বেঁধে দেন, যাতে আওয়াজ না হয়। ঘটনাস্থলেই তার স্বামীর মৃত্যু হয়।
নরসিংদীতে শেখ হাসিনাসহ ৮০ জনের নামে হত্যা মামলা : জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আজিজুল মিয়াকে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামী করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলায় সাবেক সেতু ও সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ ও নরসিংদী সদর আসনের এমপি নজরুল ইসলাম হিরু (বীর প্রতিক) সহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ যুবলীগ ছাত্রলীগসহ ৮০ নেতাকর্মীর নামে মামলা দায়ের করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার নরসিংদীর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট নাহিদ নিয়াজী’র আদালতে মামলাটি করেন নিহতের পিতা আলমাছ মিয়া। মামলায় ৮১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত নামা আরো ৪০০ থেকে ৫০০ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে।
নিহত আজিজুল মিয়া সদর উপজেলার বাদুয়াচর দড়িপাড়া গ্রামের আলমাছ মিয়ার ছেলে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই বিকেলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর জেলখানার মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আজিজুল অবস্থান করছিলেন। এসময় ছাত্র জনতার শান্তিপূর্ণ অবস্থানে আসামীরা ককটেল বিস্ফোরণ করে, তাদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি ছুড়তে থাকে। এসময় একাধিক গুলি আজিজুলের শরীরে বিদ্ধ হয়। পরে গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালে নেওয়া হলে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ জুলাই রাত ১ টায় সে মারা যায়।
মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী এড. কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, নিহতের বাবা আলমাছ তার ছেলে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৮১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসিকে মামলাটি এফ আই আর হিসেবে গ্রহনের নির্দেশ প্রদান করেন।
নরসিংদীর আইনজীবী সমিতির সভাপতি কাজী নাজমুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বাদির অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত সদর থানাকে মামলা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
বগুড়ায় শেখ হাসিনাসহ ৮০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা : বগুড়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, রেজওয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববিসহ শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির ৮০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বগুড়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল ওহাব।
২০১৮ সালে শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপি নেতা শাহ আলম সুজা হত্যা অভিযোগে মামলাটি করা হয়।
মামলাটি আমলে নিয়ে আদালতের বিচারক সুকান্ত সাহা মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে শিবগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। অন্য আসামিরা হলেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্যসচিব নাঈমুল ইসলাম খান, একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু ও উপস্থাপিকা ফারজানা রুপা। মামলায় ১ থেকে ৯ নম্বর আসামিকে পরিকল্পনা ও হুকুমের আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া শিবগঞ্জের সাবেক এমপি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ্, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ রিজু, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ বিপুল, রিজ্জাকুল ইসলাম রাজু, এমপি পুত্র হুসাইন শরীফ সঞ্চয়, সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক, বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৮০ জনের নাম উল্লেখ করে এ মামলা করা হয়। এতে ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদী আব্দুল ওহাব বলেন, ২০১৮ সালের ২৬ জানুয়ারি শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপি নেতা শাহ আলম ওরফে সুজাকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়। পরে ২ ফেব্রæয়ারি নওগাঁর রানীনগরে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। শাহ আলম সুজা শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দানহাট্টা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ছিলেন।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল রউফ বলেন, ‘আদালত থেকে এখন কোনো মামলার কপি হাতে পাইনি।
পেলে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’